শনিবার, ১৫ মার্চ, ২০২৫, ঢাকা

দ্বীনদার পাত্রকে ফিরিয়ে দিলে যে ক্ষতির কথা বলেছেন নবীজি

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ০৬:২১ পিএম

শেয়ার করুন:

দ্বীনদার পাত্রকে ফিরিয়ে দিলে যে ক্ষতির কথা বলেছেন নবীজি

বিয়ে আল্লাহপ্রদত্ত বিশেষ নেয়ামত এবং রাসুলুল্লাহ (স.)-এর গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। অন্তরের প্রশান্তি ও চরিত্র রক্ষার অনন্য উপায় এই বিয়ে। যদি আপনার মেয়ে, বোন বা অধীনস্থ কোনো মেয়ের জন্য সামর্থ্যবান পুরুষের পক্ষ থেকে বিয়ের প্রস্তাব আসে, তাহলে প্রথমেই পাত্রের দ্বীনদারি ও চরিত্র কেমন তা যাচাই করা কর্তব্য। কেননা একটি দাম্পত্য জীবনে সুখ-শান্তি বজায় থাকে মূলত এই দুটি গুণের কারণে। এতে ত্রুটি না থাকলে বিয়ে দিতে আর কোনোকিছু দেখার প্রয়োজন নেই। 

রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘তোমাদের কাছে যদি এমন পাত্র বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসে- যার দ্বীনদারি ও চরিত্র তোমাদের কাছে পছন্দনীয়; তবে তার সঙ্গে তোমাদের কন্যাদের বিয়ে দিয়ে দাও। তা না করলে পৃথিবীতে ফিতনা-ফ্যাসাদ ও বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়বে। সাহাবিগণ বলেন, হে আল্লাহর রাসুল, কিছু (ত্রুটি) তার মাঝে থাকলেও কি? তিনি বলেন, ‘তোমাদের কাছে যে লোকের ধর্মভীরুতা ও নৈতিক চরিত্র পছন্দ হয় সে লোক তোমাদের কাছে বিয়ের প্রস্তাব করলে তবে তার সঙ্গে বিয়ে দাও।’ (বর্ণনাকারী বলেন) এ কথা তিনি তিনবার বলেন। (তিরমিজি: ১০৮৫)


বিজ্ঞাপন


এ হাদিসে পাত্রের মৌলিক দুটি গুণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ১. দ্বীনদারি ২. চারিত্রিক পবিত্রতা। হাদিসের বর্ণনানুযায়ী, এই গুণ দুটিই যথেষ্ট। অর্থাৎ গুণ দুটি থাকলে বুঝতে হবে, সে পাত্র হিসেবে উপযুক্ত। সেই পাত্রের হাতেই মেয়ে, বোন বা অধীনস্থকে বিয়ে দিতে বলা হয়েছে। নবীজির এই কথা না মানলে কী সমস্যা হবে তা-ও বলা হয়েছে হাদিসে। পৃথিবীতে ফিতনা-ফ্যাসাদ ও বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়বে। বর্তমান সমাজ চিত্রের সঙ্গে নবীজির এই আদেশ একবার মিলিয়ে দেখুন, চোখের সামনে ভেসে উঠবে হাদিসের সত্যতা। 

নবীজির আদেশ না মেনে যারা অন্যকিছুকে মূল্যায়ন করে, তাদের সংসারে দেখবেন অশান্তি। এক পর্যায়ে মামলা-হামলা, কত ঘটনা! এমনকি ডিভোর্সের ঘটনাও অহরহ ঘটছে। প্রতিদিন পত্র-পত্রিকায় এ রকম কত দুর্ঘটনার খবর দেখা যায়। এসবের মূলে রয়েছে চারিত্রিক ত্রুটি ও দ্বীনদারির অভাব।

অন্যদিকে পাত্র-পাত্রী দ্বীনদার ও সচ্চরিত্রের অধিকারী হলে একে অন্যের হক সম্পর্কে সচেতন থাকবে, একে অন্যের প্রতি সদাচারী হবে, সুখে-দুঃখে পরস্পরের বন্ধু হবে। জীবন হবে প্রশান্তিময়। সন্তান-সন্ততিও হবে উত্তম ও দ্বীনদার। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারিম (স.) ইরশাদ করেন- ‘নারীদেরকে সালেহ (দ্বীনদার-নেককার) পুরুষের নিকট বিবাহ দাও, আর পুরুষদেরকে সালেহা (দ্বীনদার-নেককার) নারীর সাথে বিবাহ দাও; ফলশ্রুতিতে তাদের যে সন্তান হবে তারা হবে উওম (নেককার)। (সুনানে দারিমি: ২২২৭)

উল্লেখ্য, অনেকে সম্পদের বিষয়টিকে উপযুক্ত বরের শর্ত হিসেবে যোগ করে থাকেন। যদিও সম্পদের বিষয়টি যাচাই করে দেখা নিষেধ নয়, তথাপি তা উপযুক্ত পাত্র নির্বাচনের মাপকাঠি নয়। বিয়ে করার পর তো সচ্ছলতা দেওয়ার মালিক আল্লাহ। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে যাদের বিয়ে হয়নি, তাদের বিয়ে করিয়ে দাও আর তোমাদের দাস ও দাসীদের মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ণ, তাদেরও (বিয়ে দাও)। তারা যদি সম্পদহীন নিঃস্ব ও ফকির হয়, তবে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের সবাইকে সচ্ছলতা দান করবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।’ (সুরা নুর: ৩২)


বিজ্ঞাপন


তবে অন্যান্য হাদিসের আলোকে উপযুক্ত বর নির্বাচনে কুফু মিলিয়ে দেখার কথা বলেন ইসলামিক স্কলাররা। এক্ষেত্রে সব মিলিয়ে চারটি বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া হয়— ১. দ্বীনদারি ও চারিত্রিক পবিত্রতা ২. পাত্র স্বাধীন হওয়া (ক্রীতদাসের কাছে স্বাধীন মেয়ের বিয়ে না দেওয়া) ৩. বংশ মর্যাদার তারতম্য না হওয়া (নিচু বংশের কারো সঙ্গে কনের বিয়ে না দেওয়া) ৪. পেশাগত পার্থক্য না থাকা (কনে ভালো বংশের হলে বর যেন নিচু বংশের তথা নাপিত, ধোপা ও মুচির সমপর্যায়ের না হয়)

মোদ্দাকথা, কনে বিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে দ্বীনদারি ও চারিত্রিক পবিত্রতার অধিকারী কিনা সেটাই ভালোভাবে দেখা উচিত। অন্যগুলো থাকলে উত্তম, না থাকলেও পাত্র-পাত্রী সন্তুষ্ট থাকলে কোনো সমস্যা নেই। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কোরআন-হাদিসের নির্দেশনা মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর