রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

সুন্দর জীবনের জন্য নবীজির সংক্ষিপ্ত নসিহত

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০৭:৪১ পিএম

শেয়ার করুন:

সুন্দর জীবনের জন্য নবীজির সংক্ষিপ্ত নসিহত

এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (স.)-এর দরবারে এসে বললেন, আল্লাহর রাসুল! আমাকে নসিহত করুন এবং সংক্ষেপে বলুন। তখন নবী (স.) তাকে বললেন- ১. মানুষের হাতে যা আছে, তা থেকে নিরাশ হয়ে যাও। ২. লোভ করবে না, কারণ লোভই হলো নগদ দারিদ্র্য। ৩. নামাজ এমনভাবে আদায় করবে, যেন তুমি দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়ে যাচ্ছ! ৪. এমন কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকবে, যার জন্য পরে তোমাকে ক্ষমা চাইতে হয়। (মুস্তাদরাকে হাকেম: ৭৯২৮)

উল্লেখিত হাদিসটি সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.) বর্ণনা করেছেন। বর্ণনাটি মুস্তাদরাকে হাকেমসহ হাদিসের অনেক কিতাবে এসেছে। লক্ষ করুন, সাহাবি বলেছেন— আমাকে সংক্ষেপে নসিহত করুন। আসলে সাহাবি চাইছিলেন একটি আলোকোজ্জ্বল জীবনের জন্য করণীয় শুনতে। আর নবীজি তা-ই করলেন। এমন চারটি আমল নবীজির সংক্ষিপ্ত নসিহতে স্থান পেয়েছে যেগুলোর ব্যাখ্যা নিশ্চয়ই দীর্ঘ এবং যেগুলোর গুরুত্ব অনেক বেশি। আসুন দেখে নেই নবীজির সেই নসিহতের গুরুত্ব।


বিজ্ঞাপন


১. মানুষের হাতে যা আছে, তা থেকে নিরাশ হয়ে যাও
অর্থাৎ মানুষের হাতে কী আছে, দেখবে না। কার পকেটে কী আছে, কার কাছে কী ধন-সম্পদ আছে, তার দিকে যেন তোমার নজর না যায়! তা থেকে নিরাশ ও বিমুখ হয়ে তোমার দৃষ্টি থাকবে একমাত্র আল্লাহর রহমতের দিকে। আল্লাহ যা দিয়েছেন তার ওপর সন্তুষ্ট থাকবে। জরুরত আসতেই পারে। প্রথমেই তোমার মাথায় আসতে হবে যে, আল্লাহ দান করবেন। সেই উদ্দেশ্যে দুই রাকাত সালাতুল হাজত পড়ে দোয়া করবে। আর তার জন্য কোনো বৈধ উপায়-উপকরণ গ্রহণ করার থাকলে সেটিও করবে। মূলত বান্দাকে কিছু দেওয়ার ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর হাতেই। তাঁর ইচ্ছা ছাড়া কিছুই অর্জিত হয় না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, বলুন, ‘আমার রব যার জন্য ইচ্ছা রিজিক প্রশস্ত করেন অথবা সঙ্কুচিত করেন। কিন্তু অধিকাংশ লোক তা জানে না।’ (সুরা সাবা: ৩৬)

আরও পড়ুন: হারাম উপার্জনের ৭টি বড় শাস্তি

অন্য কেউ আমাকে দিয়ে দিক— এমনটা যেন মাথায় না আসে। বান্দার মেজাজ যদি এমন হয়ে যায়, তাহলে মানুষ ভালবাসবে, আল্লাহও ভালোবাসবেন।

২. লোভ করবে না, কারণ লোভই হলো নগদ দারিদ্র্য
লোভীরা নিজের অবস্থার ওপর কখনোই সন্তুষ্ট হতে পারে না। তার মানে লোভ করলে তুমি দরিদ্রই থেকে যাবে। তাই কেবল মনে করবে, আমার নাই! তাতেই আমি সন্তুষ্ট। যে লোভ করে না, তার চেয়ে প্রাচুর্যবান আর কে আছে! তাই তো নবীজি বলেছেন, অভাবমুক্তি ও প্রাচুর্য সম্পদের আধিক্যের কারণে হয় না; বরং প্রকৃত প্রাচুর্য তো হল অন্তরের প্রাচুর্য। (সহিহ বুখারি: ৬৪৪৬; সহিহ মুসলিম: ১০৫১) অন্য হাদিসে এসেছে, আদম সন্তানের যদি দুই উপত্যকা সম্পদ থাকে, সে তৃতীয় উপত্যকা চাইবে। আদমের সন্তানের পেট কেবল মাটিই ভরতে পারে। আর যে তওবা করে, আল্লাহ তার তওবা কবুল করেন। (সহিহ মুসলিম: ১০৪৮; সহিহ বুখারি: ৬৪৩৯)


বিজ্ঞাপন


লোভ নামক ধ্বংসাত্মক মানবিক ত্রুটি থেকে বাঁচতে খরচ কমানোর চিন্তা করতে হবে। আমাদের কর্তব্য হলো- আমি কী কী ছাড়া চলতে পারি আর কী কী ছাড়া চলতে পারি না, সেটা শনাক্ত করা। আমরা তো মনে করি, এখন যেভাবে খরচ বাড়ছে, আমাদের আয় বাড়ানো দরকার। আলেমরা বলেন, আয় বাড়ানো তো তোমার হাতে নয়; এটা সময়সাপেক্ষ ও তাকদিরের  বিষয়। কিন্তু নগদ যে কাজটা আমি করতে পারি তা হলো- খরচ কমিয়ে দেওয়া। আমি দেখি, যে যে খাতে আমি খরচ করছি, ওই খাতগুলোর মধ্যে ‘অপ্রয়োজনীয়’ বা ‘কম প্রয়োজনীয়’ কোনো খাত আছে কি না! আমি যদি ভাবতে থাকি, অমুকের ওটা আছে, আমারও সেটা দরকার। তাহলে জীবন কঠিন হয়ে যাবে। আর যদি লোভ করা হয়, তবে তো আরো মুশকিল! খোদ লোভটাই এক বড় মসিবত। বড় এক অশান্তি। হাদিসের ভাষায়— فَإِنَّهُ الْفَقْرُ الْحَاضِرُ নগদ দারিদ্র্য।

৩. নামাজ এমনভাবে আদায় করবে, যেন তুমি দুনিয়া থেকে বিদায় নিচ্ছ
অর্থাৎ এই নামাজই হয়তো আমার জীবনের শেষ নামাজ—এমন অনুভূতি নিয়ে নামাজ আদায় করতে বলছেন নবীজি। আসলেই এমনভাবে নামাজ পড়লে নামাজে এমনিতেই খুশু-খুজু আসবে। খুশু-খুজু দুটি আরবি শব্দ। আভিধানিকভাবে দুটির অর্থে সামান্য পার্থক্য থাকলেও উভয়টার দ্বারা বিনয়-নম্রতা, স্থিরতা, একাগ্রতা, মনোযোগিতা—এসব অর্থই বোঝানো হয়। নামাজে খুশু-খুজু অবলম্বন করা একজন মুমিনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘অবশ্যই সফলকাম হয়েছে মুমিনরা। যারা নিজেদের নামাজে বিনয়-নম্র।’ (সুরা মুমিনুন: ১-২)

আরও পড়ুন: নামাজের পূর্ণ স্বাদ ও তৃপ্তি পেতে যা করবেন

৪. এমন কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকবে, যার জন্য ক্ষমা চাইতে হয়
অর্থাৎ ক্ষমা চাওয়ার প্রয়োজন হতে পারে—এমন আশংকা থাকলেই ওই কথা মুখে আনবে না, ওই কাজ করবে না। সুন্দর জীবনের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ নসিহত। আসলেই মানুষের কাছে ক্ষমা চাওয়ার মতো কাজ করলে ব্যক্তিত্ব খাটো হয়। প্রকৃত মুমিন ও সৎ নেতৃত্বের গায়ে আঁচড় লাগে। তবে ক্ষমা চাওয়া ব্যক্তিত্বকে খাটো করে না, মূলত বারবার ক্ষমা চাওয়ার মতো কাজ করাই এখানে উদ্দেশ্য। অনিচ্ছাকৃত ভুল হলে ক্ষমা চাওয়া ভালো গুণ। সুতরাং সতর্ক থাকতে হবে, যেন পরে ক্ষমা চাইতে হয়—এমন ভুল না হয়। আর বুঝে-শুনে ভুল করার তো প্রশ্নই আসে না।

উল্লেখিত হাদিসটি সুন্দর একটি জীবনের জন্য কত অর্থবহ একবার চিন্তা করে দেখুন। এই চারটা জিনিসের প্রতি লক্ষ রাখলে দ্বীন-দুনিয়া সবই ঠিক হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর