বুধবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫, ঢাকা

জানাজায় উপস্থিত হওয়ার সওয়াব

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫ জুন ২০২২, ০১:১১ পিএম

শেয়ার করুন:

জানাজায় উপস্থিত হওয়ার সওয়াব

ইসলামে জানাজা, কাফন-দাফন ইত্যাদি জীবিত মুসলমানদের ওপর মৃত ব্যক্তির অধিকার এবং অবশ্য পালনীয় নির্দেশ। জানাজার নামাজ আদায় করা এলাকাবাসীর ওপর ফরজে কেফায়া। কিছুসংখ্যক মুসলমান এই দায়িত্ব পালন করলে অন্যরা দায়মুক্ত হবেন ঠিক, কিন্তু এলাকার সবার দায়িত্ব (সুন্নত) হচ্ছে মৃতের জানাজা ইত্যাদিতে অংশগ্রহণ করা এবং তার স্বজনদের সান্ত্বনা দেওয়া।

হাদিসে জানাজার নামাজে উপস্থিত হওয়ার অনেক ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, “যে ব্যক্তি কারো জানাজার নামাজ আদায় করে, সে এক ‘কিরাত’ পরিমাণ নেকি লাভ করে আর যে ব্যক্তি মৃতের জানাজার নামাজ আদায় করার সাথে তার দাফনের কাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত উপস্থিত থাকে, তাহলে সে দুই ‘কিরাত’ পরিমাণ সওয়াব লাভ করবে। এক কিরাত উহুদ পাহাড়ের চেয়েও বড়।” (সহিহ বুখারি: ১/৪৪৫, কিতাবুল জানাইয; সহিহ মুসলিম: ২/৬৫২, হাদিস: ৯৪৬, কিতাবুল জানাইয)


বিজ্ঞাপন


উসমান (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে- মহানবী (স.) যখন কোনো মৃতের দাফনকাজ শেষ করতেন, তখন কবরের পাশে দাঁড়িয়ে সাহাবাদের বলতেন, ‘তোমাদের ভাইয়ের জন্য তোমরা ক্ষমার দোয়া করো। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করো- তিনি যেন তাকে (সওয়াল জওয়াবের সময়) ঈমানের ওপর দৃঢ় ও অবিচল রাখেন। তাকে এখনই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’ (আবু দাউদ: ৩২২১)

জানাজাসহ চার আমলে নিশ্চিত জান্নাত

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) একদিন বললেন, তোমাদের মধ্যে আজ কে সিয়ামরত ছিলে? আবু বকর (রা.) বললেন, আমি। রাসুলুল্লাহ (স.) বললেন, তোমাদের মধ্যে কে আজ জানাজায় শরিক হয়েছ? আবু বকর (রা.) বললেন, আমি। তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে কে আজ দরিদ্রকে আহার দিয়েছ? আবু বকর (রা.) বললেন, আমি। তিনি বললেন, আজ তোমাদের কেউ কোনো অসুস্থকে দেখতে গিয়েছ? আবু বকর (রা.) বললেন, আমি। তখন রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, এ কাজগুলো যদি কোনো মানুষের মধ্যে একত্রিত হয়, তাহলে সে ব্যক্তি অবশ্যই জান্নাতি হবেন। (সহিহ মুসলিম: ২/৭১৩, হাদিস: ১০২৮, কিতাবুজ জাকাত)

এখানে লক্ষণীয়, হাদিসে যে ৪টি ইবাদতের কথা এসেছে, ওখান থেকে তিনটিই সেবা বিষয়ক। আল্লাহ খুশি হন তাঁর সৃষ্টির সেবাতে। তাই এ ধরণের ইবাদতকে হেলা করা উচিত নয়। সুতরাং যারা ফরজে কেফায়ার অজুহাতে জানাজায় শরিক হওয়া থেকে পলায়নী মনোবৃত্তি নিয়ে থাকেন, তাদের চিন্তা করা উচিত- এ কাজে আল্লাহ তাআলা কত খুশি হচ্ছেন।


বিজ্ঞাপন


জানাজায় উপস্থিত হওয়া মৃতের অধিকার

হাদিসে জানাজার নামাজকে ‘মৃতের অধিকার’ বলা হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেন, ‘এক মুসলিমের ওপর অন্য মুসলিমের ছয়টি অধিকার রয়েছে। ১) যখন কোনো মুসলমানের সঙ্গে দেখা হয় তখন সালাম দেবে। ২) কোনো মুসলমান ডাকলে সাড়া দেবে। ৩) সে তোমার কাছে সৎ পরামর্শ চাইলে তুমি তাকে সৎ পরামর্শ দেবে। ৪) কোনো মুসলমানের হাঁচি এলে হাঁচিদাতা ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বললে জবাবে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলবে। ৫) কোনো মুসলমান অসুস্থ হলে তার সেবা-শুশ্রূষা করবে। ৬) কোনো মুসলমান মৃত্যুবরণ করলে তার জানাজায় শরিক হবে।” (সহিহ মুসলিম: ২১৬২)

এমনকি পাপাচারী মুসলমান মৃত্যুবরণ করলেও তার জানাজা পড়তে হবে। তাই বেনামাজি, ঋণগ্রস্ত, আত্মহত্যাকারীর জানাজাও আদায় করতে হবে। তবে ইমাম বা নেতার নির্দেশনা মান্য করার জন্য পাপাচারীদের জানাজায় অংশগ্রহণ না করার সুযোগ রয়েছে। (ফতোয়া মাহমুদিয়া, খণ্ড: ৮, পৃষ্ঠা: ৬১১-৬২৫)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জানাজার নামাজের গুরুত্ব বুঝার তাওফিক দান করুন। এলাকার সকল মুসলিম ভাই-বোনের জানাজার নামাজ আদায় ও দোয়া করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর