রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

কী দেখে ঈমান এনেছিল ফেরাউন

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১১:০৫ এএম

শেয়ার করুন:

কী দেখে ঈমান এনেছিল ফেরাউন

কোরআন-হাদিসে বর্ণিত নবী-রাসুলদের বিভিন্ন ঘটনার মধ্যে হজরত মুসা আলাইহিস সালাম ও তাঁর অনুসারীদের ওপর ফেরাউনের অত্যাচারের ঘটনা অন্যতম। আল্লাহর নাজিল করা গজবে ধ্বংসপ্রাপ্ত পৃথিবীর আদি ছয়টি জাতির মধ্যে ফেরাউনের জাতিও রয়েছে। ফেরাউন সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা কোরআনের ২৭টি সুরায় ৭৫টি স্থানে বর্ণনা করেছেন। এটি কোরআনে সর্বাধিক আলোচিত বিষয়।

ফেরাউন সত্যের আওয়াজ স্তব্ধ করার জন্যে হত্যা ও উচ্ছেদের পথ বেছে নেয়। কিন্তু সে জানত না— মুসা (আ.)-এর সঙ্গে রয়েছেন তাঁর পালনকর্তা, যিনি সারাক্ষণ তাঁকে সহযোগিতা করছেন। যখন ফেরাউন তার বাহিনী নিয়ে মুসা আলাইহিস সালাম ও তাঁর সঙ্গীদের দেশ থেকে বহিষ্কার করার জন্যে তাড়া করে, তখন আল্লাহ তাআলা নদীর মাঝখানে ১২টি রাস্তা করে দেন। ফলে সহজেই মুসা আলাইহিস সালাম ও তাঁর অনুসারীরা নদীর ওপারে চলে যেতে সক্ষম হন।


বিজ্ঞাপন


“আল্লাহ তাআলা ফেরাউনের নিমজ্জিত হওয়া সম্পর্কে খবর দিচ্ছেন যে, যখন সমুদ্রের উত্তাল তরঙ্গ ফেরাউনকে এক বার উপরে উঠাচ্ছিল, আর একবার তলদেশে নিয়ে যাচ্ছিল, তখন বনী ইসরাঈল সমুদ্রের তীরে দাঁড়িয়ে এ মহাশাস্তি স্বচক্ষে দেখে প্রাণ জুড়াচ্ছিল। এ সময় ফেরআউন যখন তার ধ্বংস প্রত্যক্ষ করছিল এবং ভয়ঙ্কর তরঙ্গের মাঝে কঠিন অবস্থার সম্মুখীন হলো, তখন সে অনুতপ্ত হয়ে ঈমান আনল। তার ঈমান আনাটা এমন একটি সময়ে, যখন তা কোনো উপকারে আসল না।”

পেছনে বিশাল সেনাবহর নিয়ে ফেরাউন নদীর তীরে উপস্থিত হলে মহান আল্লাহর কুদরত দেখে হতভম্ব হয়ে যায়। ভাবতে থাকল যে, এ লীলা খেলার নিয়ন্ত্রক আরশে আজিমের মালিক আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ছাড়া আর কেউ নন। সে আর সামনে অগ্রসর হতে চাইল না এবং স্বীয় কৃতকর্মের জন্যে অনুতপ্ত হলো। খুবই পেরেশান ও দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে পড়ে গেল ফেরাউন। কিন্তু এ অনুতাপ তার কুফুরি চিন্তার কাছে পরাজিত হল। ভয় ও পেরেশানি নিজের কাছে গোপন রেখে সৈন্যবাহিনীর সামনে এসে খুব সাহসিকতার কথা প্রকাশ করল। শেষ পর্যন্ত দলবল নিয়ে নদীর উপর নির্মিত রাস্তায় নেমে পড়ল এবং আল্লাহর আজাবে পতিত হল। যখন নিজের ওপর শাস্তি প্রত্যক্ষ করছিল, তখন সে ঈমান আনল।

ফেরাউন যখন ঈমান আনার চেষ্টা করছিল, তখন জিবরাইল আলাইহিস সালাম তার মুখে কাদা মাটি ভরে দেন। হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন—

যখন ফেরাউন বলেছিল বনি ইসরাইল যাতে ঈমান এনেছে আমিও তাতে ঈমান আনলাম; নিশ্চয়ই তিনি ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই। ফেরাউনের এ উক্তি সম্পর্কে জিবরাইল আমাকে বলেছেন, হে মুহাম্মদ (স.)! আপনি যদি সে সময়ের দৃশ্য দেখতেন যে, আমি সমুদ্রের তলদেশ থেকে কাদা মাটি উঠিয়ে ফেরাউনের মুখে ভরে দিলাম। আবার যেন তার উপর আল্লাহর রহমত না এসে যায়। ইমাম আহমদ এ হাদিস বর্ণনা করেছেন।

মুফাসসিরদের মতে, তাকে যদি পৃথিবীতে দ্বিতীয়বার প্রেরণ করা হতো, তবেও সে প্রথম বারের মতো অবাধ্য ও স্বেচ্ছাচারী হতো। যেমন, আল্লাহ তাআলা কাফিরদের সম্পর্কে বলেছেন—

بَلْ بَدَا لَهُمْ مَا كَانُوا يُخْفُونَ مِنْ قَبْلُ وَلَوْ رُدُّوا لَعَادُوا لِمَا نُهُوا عَنْهُ وَإِنَّهُمْ لَكَاذِبُونَ

"বরং পূর্বে যা তারা গোপণ করতো তা এখন (কিয়ামতে) তাদের কাছে প্রকাশিত হয়েছে। আর তারা (দুনিয়াতে) প্রত্যাবর্তিত হলেও যা করতে তাদেরকে নিষেধ করা হয়েছিল পুনরায় তারা তা-ই করবে, আর তারা তো নিশ্চিত মিথ্যাবাদী।" (সূরা আন’আম: ২৮)

সূত্র: কাসাসুল আম্বিয়া, ইবনে কাসির

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর