ইসলামে রজব মাসের মর্যাদা স্বীকৃত। এই মাসে মহানবী (স.) একটি দোয়া বেশি বেশি পাঠ করতেন। দোয়াটি হলো, ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজাবা ওয়া শাবান, ওয়া বাল্লিগনা রমাদান।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আমাদের জন্য রজব ও শাবান মাসকে বরকতময় করে দিন এবং রমজান মাস পর্যন্ত আমাদের হায়াত বাড়িয়ে দিন।’ (আল-মুজামুল আওসাত: ৩৯৩৯)
রজবের প্রথম রাতে দোয়া কবুল হওয়ার কথা হাদিসে এসেছে। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, ‘পাঁচ রাতে বান্দার দোয়া আল্লাহ ফিরিয়ে দেন না। রাতগুলো হলো—জুমার রাত, রজবের প্রথম রাত, শাবানের ১৫ তারিখের রাত, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার রাত।’ (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক: ৭৯২৭)
বিজ্ঞাপন
ইমাম বায়হাকি তার আস-সুনান আল কুবরা কিতাবে এটি সাহাবি আবু দারদার (রা.) বক্তব্য হিসেবেও বর্ণনা করেছেন। (সুনানে বায়হাকি: ৬০৮৭)
ইমাম শাফঈর (রহ.) কিতাবুল উম্ম-এ বলা হয়েছে, আমাদের কাছে পৌঁছেছে যে, বছরের পাঁচটি রাতে দোয়া কবুল হয়; জুমার রাতে, ইদুল আজহার রাতে, ইদুল ফিতরের রাতে, রজবের প্রথম রাতে, শাবানের ১৫ তারিখের রাতে। (আল উম্ম: ১/২৬৪)
আরও পড়ুন: ২৭ জানুয়ারি দিবাগত রাত শবে মেরাজ
‘রজব মাসের রোজা’ বলে আলাদা ফজিলতের কিছু ইসলামে নেই। তবে হ্যাঁ, এমনিতেই নফল রোজা রাখা অনেক ফজিলতপূর্ণ আমল। সেই হিসেবে রজব মাসেও রোজা রাখা যাবে এবং এতে সওয়াব লাভ হবে। প্রখ্যাত মুহাদ্দিস হাকেম ইবনে হাজার (রহ.) লিখেছেন, বিশেষভাবে রজব মাসে রোজার ফজিলত সম্পর্কে সহিহ ও আমলযোগ্য কোনো হাদিস নেই। (তাবইনুল আজার বিমা ওরাদা ফি ফজলি রজব, পৃষ্ঠা : ১১)
বিজ্ঞাপন
প্রসিদ্ধ মতানুযায়ী, রজব মাসের ২৬ তারিখ দিবাগত রাতে রাসুল (স.)-এর মেরাজের ঘটনা ঘটেছিল। তাই এ দিনটি নিঃসন্দেহে বড় মর্যাদাপূর্ণ দিন। তবে এই দিনকে কেন্দ্র করে কোনো নির্দিষ্ট আমলের কথা কোরআন, হাদিস ও সাহাবিদের আমল থেকে প্রমাণিত নয়। আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে, ২৭ রজবে রোজা রাখা অনেক ফজিলতের। বাস্তবে এ রোজার ব্যাপারে গ্রহণযোগ্য কোনো বর্ণনা নেই। আল্লামা ইবনুল জাওজি, হাফেজ জাহাবি, তাহের পাটনি, আবদুল হাই লখনবি (রহ.) প্রমুখ প্রখ্যাত মুহাদ্দিস এ রোজার ফজিলতকে ভিত্তিহীন ও বানোয়াট বলেছেন। (কিতাবুল মাওদুয়াত, ইবনুল জাওজি : ২/২০৮; তালখিসুল মাওদুয়াত, পৃষ্ঠা ২০৯; তাজকিরাতুল মাওজুয়াত, পৃষ্ঠা ১১৬; আল-আসারুল মারুফা, পৃষ্ঠা : ৫৮)
এ মাসে পশু জবাই করে বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করাও ইসলাম সমর্থিত নয়। আসুন, আমরা রজব মাসের যথাযথ ফজিলত অর্জনের চেষ্টা করি। অনর্থক কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখি। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন।

