শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

পালিয়ে বিয়ে জায়েজ?

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩ জুন ২০২২, ১১:০৪ এএম

শেয়ার করুন:

পালিয়ে বিয়ে জায়েজ?

বিয়ে মহান আল্লাহর এক বিশেষ নেয়ামত এবং রাসুলুল্লাহ (স.)-এর পবিত্র সুন্নত। ইসলামি শরিয়তে বিয়ের ক্ষেত্রে অভিভাবকের অভিমত গুরুত্বপূর্ণ। হাদিসে এ বিষয়ে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘অভিভাবক ছাড়া বিয়ে সংঘটিত হয় না।’ (তিরমিজি: ১১০১; আবু দাউদ: ২০৮৩)

বিয়ের আকদ (চুক্তি) করানোর দায়িত্ব মেয়ের অভিভাবককে পালন করতে হয়। যেহেতু আল্লাহ তাআলা বিয়ে দেওয়ার জন্য অভিভাবকদের প্রতি নির্দেশনা জারী করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তোমরা তোমাদের মধ্যে অবিবাহিত নারী-পুরুষদের বিয়ে দাও।’ (সুরা নুর:৩২) নবী (স.) বলেছেন, ‘যে নারী তার অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া বিবাহ করবে তার বিবাহ বাতিল, তার বিবাহ বাতিল, তার বিবাহ বাতিল।’ (তিরমিজি: ১০২১, হাদিসটি সহিহ)


বিজ্ঞাপন


গোপন বিয়ে বা পালিয়ে বিয়ে অসামাজিক ও অকৃতজ্ঞতাপূর্ণ কাজ। এছাড়াও এ ধরণের বিয়েতে রয়েছে বহু বিপত্তি। এজন্য বিয়ের ক্ষেত্রে গোপনীয়তা ইসলাম পছন্দ করে না। তাই ইসলামের নির্দেশনা হলো, ‘বিয়ে করবে- ঘোষণা দিয়ে।’ (মুসনাদে আহমদ: ৪/৫)

এতদসত্ত্বেও যদি কেউ অন্যায় লালসায় তাড়িত হয়ে কমপক্ষে দুজন সাক্ষীর উপস্থিতিতে বিয়ে করেই ফেলে, তাহলে শরিয়তের দৃষ্টিতে বিশেষ বিবেচনায় বিয়ে শুদ্ধ হয়ে যাবে। কারণ বিয়ে শুদ্ধ হওয়ার শর্ত হল মুকাল্লাফ (যাদের উপর শরিয়তের বিধান আরোপিত হয়) এমন দুইজন স্বাধীন পুরুষ সাক্ষী বা একজন স্বাধীন পুরুষ ও দুইজন নারী সাক্ষী হতে হবে, যারা প্রস্তাবনা ও কবুল বলার উভয় বক্তব্য নিজ কানে উপস্থিত থেকে শুনতে পায়। (আদ দুররুল মুখতার: ৩/৯, ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/২৬৮)

সুতরাং গোপনে বিয়ে হয়ে গেলে বৈবাহিক বন্ধন রক্ষা করা স্বামী-স্ত্রী দুজনেরই দায়িত্ব। যুক্তিও একই কথা বলে যে, বিয়ে কোনো ছেলেখেলা নয়, বরং এটি নারী-পুরুষের সারা জীবনের পবিত্র বন্ধন। তাই সম্পর্ক ছিন্ন করা বা তালাকের পথে পা বাড়ানো যাবে না। ইসলামে যৌক্তিক কারণে তালাকের সুযোগ আছে ঠিক, কিন্তু তা খুবই অপছন্দনীয়। হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী, এতে শয়তান সবচেয়ে বেশি খুশি হয়। আল্লাহর রাসুল (স.) তালাককে ঘৃণা করতেন। তিনি বলেছেন, ‘আল্লাহর কাছে সবচেয়ে ঘৃণিত বৈধ বিষয় হলো তালাক।’ (আবু দাউদ: ২১৭৭)

বাবা-মার কথায় বউকে তালাক দেওয়া যায়?


বিজ্ঞাপন


ইসলামের দৃষ্টিতে যৌক্তিক কারণ ছাড়া নিছক মা-বাবার চাপ প্রয়োগের কারণে তালাক দেওয়া জায়েজ নেই, স্ত্রীর জন্যও তালাক চাওয়া বৈধ নয়। সৃষ্টির আনুগত্যের সীমারেখা বর্ণনা করতে গিয়ে রাসুল (স.) বলেন, ‘অসৎ কাজে আনুগত্য নয়, আনুগত্য শুধু সৎ কাজের ক্ষেত্রেই হতে হবে।’ (সহিহ বুখারি: ৭১৪৫)

সুতরাং গোপনে বিয়ে করে ফেললে মা-বাবাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে বুঝিয়ে বলতে হবে। অভিভাবককেও বুঝা উচিত, একটি দুর্ঘটনার পর আরেকটি অন্যায় যেন না হয়। আর যদি একারণে শারীরিক শাস্তি (যেমন বেত্রাঘাত ইত্যাদি) দিতেই হয়, তাহলে ছেলেকেই দিতে পারবে, পুত্রবধূকে নয়।

বাবা-মার কথায় কখনও তালাকের অনুমোদন আছে

মা-বাবার কথা যদি শরিয়তের দৃষ্টিতে সঠিক ও যুক্তিসংগত হয় এবং তালাক ছাড়া আর কোনো পথ বাকি না থাকে, পাশাপাশি ব্যভিচারে জড়িয়ে পড়ারও আশঙ্কা না থাকে, তাহলেই মা-বাবার সন্তুষ্টি প্রাধান্য পাবে। আবদুল্লাহ বিন ওমর (রা.) বলেন, ‘আমার এক স্ত্রীকে আমি ভালোবাসতাম। কিন্তু আমার বাবা (যৌক্তিক কারণে) তাকে পছন্দ করতেন না। তিনি আমাকে তাকে তালাক দিতে বলেন। কিন্তু আমি তালাক দিতে অস্বীকৃতি জানালাম। তখন আমার বাবা রাসুল (স.)-এর কাছে বিষয়টি উপস্থাপন করেন এবং এর যৌক্তিক কারণ ব্যাখ্যা করেন। তখন রাসুল (স.) বলেন, তাকে তালাক দিয়ে দাও। ফলে আমি তাকে তালাক দিই।’ (মুসনাদে আহমদ: ৪৭১২, আবু দাউদ: ৫১৩৮)

বাবা-মা যদি কোনো শরয়ি কারণ ছাড়াই তার স্ত্রীকে তালাক দিতে বলে, এই আদেশ মানা যাবে না। কারণ এটি গুনাহের আদেশ। এ অবস্থায় স্বামী তার বাবা-মাকে আপ্রাণ চেষ্টার মাধ্যমে বুঝাতে থাকবে। যদি তারা না বুঝে, তারপরও কোনোভাবেই স্ত্রীকে তালাক দেওয়া যাবে না।  (ফাতোয়ায়ে উসমানি: ১/১৯২; ফতোয়ায়ে হক্কানিয়াহ: ২/৪৪৯)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর যুবক-যুবতীদের বিয়ে সংক্রান্ত বিষয়ে সুবুদ্ধি ও সঠিক বিবেচনাবোধ দান করুন। একইসঙ্গে অভিভাবকদেরকে সন্তানের বিয়ের বিষয়ে অধিক দায়িত্বশীল হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর