বুধবার, ১ মে, ২০২৪, ঢাকা

জুমার দিন যে আমলে একবছর রোজা ও নামাজের সওয়াব

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩ জুন ২০২২, ০৯:৪৩ এএম

শেয়ার করুন:

জুমার দিন যে আমলে একবছর রোজা ও নামাজের সওয়াব

জুমাবার মুমিনের কাছে একটি কাঙ্ক্ষিত দিন। এই দিনকে সাপ্তাহিক ঈদ বলা হয়েছে হাদিসে। সৃষ্টিজগতের শুরু থেকে দিনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত। সপ্তাহের বাকি ছয় দিনের তুলনায় জুমাবার অধিক মর্যাদাসম্পন্ন হওয়ায় দিনটির আমলগুলোও অনেক ফজিলতপূর্ণ। রাসুলুল্লাহ (স.) এই দিনটিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতেন।

হাদিসে জুমার দিনের একটি বিশেষ আমলের কথা বলা হয়েছে, যে আমলটির বিনিময়ে পূর্ণ এক বছর নফল রোজা ও নফল নামাজের সওয়াব দেওয়া হবে। হাদিস থেকে জেনে নেই আমলটি। আল্লাহর রাসুল (স.) বলেন—


বিজ্ঞাপন


‘যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করল (ফরজ বা সাধারণ গোসল), তাড়াতাড়ি মসজিদে গেল বা যাওয়ার চেষ্টা করল, যাওয়ার পথে কোনো কিছুতে আরোহণ না করে হেঁটে গেল, ইমামের কাছে ঘেঁষে বসল, কোনোপ্রকার অহেতুক কথাবার্তা না বলে মনোযোগের সঙ্গে খুতবা শুনল এবং নামাজ আদায় করল, তার প্রতিটি কদমের বিনিময়ে এক বছর রোজা ও নামাজের সওয়াব দেওয়া হবে।’(তিরমিজি: ৪৫৬)

সুবহানাল্লাহ! উল্লেখিত হাদিস অনুযায়ী, জুমাবারের সহজ পাঁচটি কাজ করলে প্রতি কদমে কদমে মিলবে পূর্ণ এক বছর নফল রোজা ও নফল নামাজের সওয়াব। এই সুযোগ অন্তত মুমিন বান্দাদের হাতছাড়া করার কথা নয়। গোসল একটু আগেভাগে করতে হবে আর ইমামের পাশে বসে নীরবে খুতবা শোনা, নামাজ পড়ার জন্য দ্রুত রওনা দিতে হবে— শুধু এটুকুই। হয়ত পায়ে হেঁটে যাওয়াটাই একটু কঠিন। কারণ, হাদিসের শর্ত অনুযায়ী কোনো কিছুতে আরোহন না করে মসজিদে যেতে হবে। অফুরন্ত সওয়াবের তুলনায় সেটি কিন্তু খুবই সহজসাধ্য একটি আমল। সুতরাং মুমিন বান্দাদের এ বিষয়ে সচেষ্ট হওয়া উচিত।

এছাড়াও জুমার নামাজ আদায়কারীর জন্য রয়েছে বিশেষ বিশেষ মর্যাদা। কেয়ামতের দিন জুমার নামাজ আদায়কারীর চেহারা থেকে বিশেষ নূরের ঝলক প্রতিভাত হবে। রাসুল (স.) বলেন—

‘আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন পৃথিবীর দিবসগুলোকে নিজ অবস্থায় উত্থিত করবেন। তবে জুমার দিনকে আলোকোজ্জ্বল ও দীপ্তিমান করে উত্থিত করবেন। জুমা আদায়কারীরা আলো দ্বারা বেষ্টিত থাকবে, যেমন নতুন বর বেষ্টিত থাকে। এটি তাকে প্রিয় ব্যক্তির কাছে নিয়ে যায়। তারা আলোবেষ্টিত থাকবে এবং সেই আলোতে চলবে। তাদের রং হবে বরফের মতো উজ্জ্বল ও সুগন্ধি হবে কর্পূরের পর্বত থেকে সঞ্চিত মিশকের (বিশেষ সুরভি) মতো। তাদের দিকে জ্বিন ও মানুষ তাকাতে থাকবে। তারা আনন্দে দৃষ্টি ফেরাতে না ফেরাতেই জান্নাতে প্রবেশ করবে। তাদের সঙ্গে একনিষ্ঠ সওয়াব প্রত্যাশী মুয়াজ্জিন ছাড়া কেউ মিশতে পারবে না।’ (মুসতাদরাক হাকেম: ১০২৭; সহিহ ইবনে খুজায়মা: ১৭৩০)


বিজ্ঞাপন


জুমার দিন সুরা কাহাফ পড়ার অনেক গুরুত্ব ও ফজিলত বর্ণিত হয়েছে হাদিসে। ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহাফ তেলাওয়াত করবে, তার (ঈমানের) নূর এই জুমা হতে আগামি জুমা পর্যন্ত চমকাতে থাকবে। (মেশকাত: ২১৭৫)

অন্য হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি সুরা কাহাফের প্রথম ১০ আয়াত মুখস্থ করবে, সে দাজ্জালের ফেতনা থেকে নিরাপদ থাকবে। (সহিহ মুসলিম: ৮০৯; আবু দাউদ: ৪৩২৩)

এই দিন দরুদ পড়ারও রয়েছে অনেক ফজিলত ও মর্যাদা। এ বিষয়ে অনেক হাদিস রয়েছে। এক হাদিসে হজরত আলি (রা.) বর্ণনা করেন, ‘যে ব্যক্তি নবী কারিম (স.)-এর ওপর জুমার দিন ১০০ বার দরুদ পাঠ করে, সে কেয়ামতের দিন এমন অবস্থায় উঠবে যে, তার চেহারায় নূরের জ্যোতি দেখে লোকেরা বলাবলি করতে থাকবে এই ব্যক্তি কী আমল করেছিল!’ (কানজুল উম্মাল: ১৭৪)

জুমার দিনকে কোনোভাবেই অবহেলায় কাটিয়ে দেওয়া অন্তত মুমিনের উচিত নয়। কারণ এই দিন অনেক মর্যাদাপূর্ণ দিন। ‘এই দিনে আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে। এই দিনে তিনি ইন্তেকাল করেছেন। এই দিনে শিঙ্গায় ফুঁ দেওয়া হবে। এই দিনে সব সৃষ্টিকে বেহুঁশ করা হবে। অতএব, তোমরা এই দিনে আমার ওপর বেশি পরিমাণে দরুদ পাঠ করো। কেননা এদিন তোমাদের দরুদ আমার কাছে পেশ করা হয়।’ (আবু দাউদ: ১০৪৭)

জুমার আগের রাত অর্থাৎ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই জুমার দিন শুরু হয়। শেষ হয় শুক্রবার সন্ধ্যায়। হাদিসে বৃহস্পতিবার রাত থেকে বিভিন্ন সুরা পাঠ করার কথাও এসেছে। এতে গুনাহ মাফ হয়ে যায়। 

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার রাতে (বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে) সুরা হা-মীম, আদ-দুখান পাঠ করবে তার গুনাহ মাফ করা হবে।’ (তিরমিজি: ২৮৮৯)

কোনো বর্ণনায় সুরা ইয়াসিনের কথাও উল্লেখ রয়েছে। শুধু সুরা ইয়াসিন নয়, পবিত্র কোরআনের সব সুরাই বরকতপূর্ণ, তাই জুমার দিন মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় যেকোনো সুরাই তেলাওয়াত করা যায়। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জুমাবারের গুরুত্ব অনুধাবন করার তাওফিক দান করুন। উপরোল্লিখিত আমলগুলো প্রত্যেক জুমাবারে সঠিকভাবে আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর