ইসলাম আল্লাহ তাআলা প্রদত্ত বিধান। এই ধর্ম প্রণয়ন হয়েছে মানবতার কল্যাণেই। ভিক্ষাবৃত্তি ও তালাক সম্পর্কীয় বিধান দুটি তারই উদাহরণ। ইসলামে ভিক্ষাবৃত্তিকে জায়েজ রাখা হয়েছে নিঃস্ব, গরিব, মিসকিন, ঋণগ্রস্ত ও অসহায়দের কল্যাণার্থে। কিন্তু একে প্রবলভাবে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কষ্ট করে পিঠে বোঝা বহন করে জীবনযাপন করা ভিক্ষাবৃত্তি থেকে উত্তম ও শ্রেষ্ঠতর।’ (বুখারি: ১৪৭১)।
অন্য হাদিসে আছে, ‘নিশ্চয়ই ওপরের হাত নিচের হাত থেকে উত্তম।’ (বুখারি: ১৪২৭)।
এই হাদিসে রাসুল (সা.) ওপরের হাত দ্বারা দানকারী ব্যক্তিকে বুঝিয়েছেন এবং নিচের হাত দ্বারা প্রার্থনাকারীকে বুঝিয়েছেন। হাদিস দুটি দ্বারা ভিক্ষাবৃত্তির প্রতি নিরুৎসাহিত এবং কর্মের মাধ্যমে জীবনযাপন করার প্রতি উৎসাহ জুগিয়েছেন বিশ্বনবী (স.)।

কোন পরিস্থিতিতে কারা কতটুকু হাত পাততে পারবেন, সে ব্যাপারেও নির্দেশনা রয়েছে। হজরত আবু বিশর কাবিসা (রা.) বলেন, একদা আমি ঋণ পরিশোধে অপারগ হয়ে রাসুলের (সা.) কাছে কিছু সাহায্য চাইলাম। তিনি বললেন, অপেক্ষা করো। অতঃপর তিনি আমাকে বললেন, ‘হে কাবিসা! তিন ধরনের লোক ছাড়া আর কারও জন্য হাত পাতা বৈধ নয়। এরা হলো— ১. যে ব্যক্তি ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছে; সে ঋণ পরিশোধ করা পর্যন্ত চাইতে পারে। তারপরও তাকে ভিক্ষাবৃত্তি থেকে বিরত থাকতে হবে। ২. যে ব্যক্তি কোনো কারণে দুর্দশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে; সেও তার প্রয়োজন মেটানোর উপযোগী সম্পদ চাইতে পারে। ৩. যে দুর্ভিক্ষ কিংবা অভাব-অনটনের খপ্পরে পড়েছে; অবশ্য এ ব্যাপারে তার বংশের অন্তত তিনজন বিশ্বস্ত ব্যক্তির সাক্ষ্য প্রয়োজন, এমন ব্যক্তির জন্যেও প্রয়োজন মেটানো পরিমাণ সম্পদ প্রার্থনা করা বৈধ।’ অতঃপর রাসুল (সা.) বললেন, ‘হে কাবিসা! শুনে রাখো, এই তিন ধরনের লোক ছাড়া আর কারও জন্য অন্যের নিকট হাত পাতা হারাম। যারা এভাবে হাত পাতে আসলে তারা হারাম খায়।’ (মুসলিম: ২২৯৪)
সম্পদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে যারা ভিক্ষাবৃত্তি করে তাদের পরকালে কঠিন শাস্তির ব্যাপারে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের সম্পদ বাড়ানোর জন্য মানুষের কাছে সম্পদ ভিক্ষা করে বেড়ায় বস্তুত সে আগুনের ফুলকি ভিক্ষা করছে। কাজেই এখন তার ভেবে দেখা উচিত— সে বেশি নেবে না কম নেবে!’ (মুসলিম: ২২৮৯)। আরেক সহিহ বর্ণনায় এসেছে “যে ব্যক্তি সবসময় মানুষের কাছে চেয়ে থাকে, সে কেয়ামতের দিন এমনভাবে উপস্থিত হবে যে, তার চেহারায় কোনো গোশত থাকবে না।” (বুখারি: ১৪৭৪)
পক্ষান্তরে যারা ভিক্ষাবৃত্তি পেশা ছেড়ে কর্ম করে জীবন পরিচালনা করে, তাদেরকে রাসুল (সা.) এমন একটি পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
নবীজি (স.) বলেন, ‘যে আমাকে নিশ্চয়তা দেবে যে, সে অন্যের কাছে কিছু চাইবে না, তা হলে আমি তার জান্নাতের জিম্মাদার হব!’ (আবু দাউদ: ১৬৪৩)।
ইসলামে জায়েজ হয়েও আরেকটি অপছন্দনীয় কাজ তালাক। কারণ, তালাকের মাধ্যমে দুটি বন্ধন ভেঙে যায়।
দাম্পত্য জীবনে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে যখন ভারসাম্যহীন, পারস্পরিক মনোমালিন্য ও সাংসারিক তিক্ততা দেখা দেয়, তখন একত্রে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে বসবাস অসম্ভব হয়ে পড়ে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় হিসেবে নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য বিবাহ চুক্তির অবসান ঘটানোর সুযোগ ইসলাম রেখেছে। আবার এই অধিকার শুধু পুরুষকে দেয়া হয়নি। চাইলে স্ত্রীও নিজেকে আলাদা করে নিতে পারবেন। তবে স্ত্রীর ক্ষেত্রে তালাক হয় না। এটির নাম খুলা করা। খুলার আভিধানিক অর্থ খসিয়ে নেওয়া, টেনে বের করে ফেলা। শরীয়তের পরিভাষায় স্বামীকে কিছু মাল দিয়ে নিজকে স্বামীর বিবাহ বন্ধন থেকে মুক্ত করে নেয়া। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে— ‘তাদের উপর কোনো গুনাহ হবে না যদি স্ত্রী স্বামীকে মাল দিয়ে নিজকে ছাড়িয়ে নেয়।’ (সূরা বাকারা: ২২৯)। তাছাড়া স্বামীর অর্পিত ক্ষমতাবলেও স্ত্রীর তালাক দেয়ার ক্ষমতা আছে।
স্বামী বা স্ত্রী যে-ই হোক সামান্য বিষয়ে পবিত্র বন্ধন ভেঙে চুরমার করা খুবই নিন্দনীয়। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তালাক হচ্ছে হালাল বস্তুর মধ্যে আল্লাহর কাছে সর্বাপেক্ষা ঘৃণ্য।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ: ২০১৮)। আল্লাহতায়ালা পুরুষদের নির্দেশ দিয়েছেন ‘তাদের সঙ্গে সৎভাবে জীবনযাপন করবে।’ (সুরা নিসা: ১৯)

আরেকটি হাদিসে আছে, ‘তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই সর্বোত্তম, যে তার স্ত্রীর কাছে সর্বোত্তম।’ (মিশকাত, পৃষ্ঠা- ২৮১)।
আলী (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা বিয়ে করো, কিন্তু তালাক দিয়ো না। কেননা একটি তালাক সম্পন্ন হলে আল্লাহর আরশ কেঁপে ওঠে।’ (আকামুল কুরআন, ৩৯ খ-, পৃষ্ঠা- ১৩৩)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ভিক্ষাবৃত্তি ও তালাক সম্পর্কে ইসলামি নির্দেশনাগুলোর হাকিকত বুঝা ও যথাযথ মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।

