সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

দুনিয়াবি শাস্তি থেকে বাঁচতে করণীয়

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:২৮ পিএম

শেয়ার করুন:

দুনিয়াবি শাস্তি থেকে বাঁচতে করণীয়

পাপ সবসময় বর্জনীয়। পাপের চূড়ান্ত শাস্তি আখেরাতে হলেও অনেকসময় দুনিয়াতেও আল্লাহ তাআলা শাস্তি দিয়ে থাকেন। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (স.) বলেছেন, ‘কোনো জাতির মধ্যে আত্মসাৎ বৃদ্ধি পেলে সে জাতির লোকদের অন্তরে ভয়ের সঞ্চার করা হয়। কোনো জাতির মধ্যে ব্যভিচার ছড়িয়ে পড়লে সেখানে মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পায়। কোনো সম্প্রদায়ের লোকেরা পরিমাপ ও ওজনে কম দিলে তাদের রিজিক সংকুচিত করা হয়। কোনো জাতির লোকেরা অন্যায়ভাবে বিচার-ফয়সালা করলে তাদের মধ্যে রক্তপাত বিস্তৃতি লাভ করে। কোনো জাতি প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করলে আল্লাহ তাদের ওপর শত্রুদল চাপিয়ে দেন।’ (মুয়াত্তা মালেক: ১৩২৩)

আল্লাহর দেওয়া দুনিয়াবি শাস্তির ধরন নানারকম হয়ে থাকে। কারও অসুস্থতার মাধ্যমে, কাউকে অসহায়ত্বের মাধ্যমে, কারও আবার ঈমান হরণের মাধ্যমে। গুনাহের প্রথম শাস্তি হলো মানসিক অস্থিরতা। এরপর নানা আপদে পতিত হতে হয় পাপীকে। 


বিজ্ঞাপন


প্রথম শাস্তি মানসিক অশান্তি বড় এক আপদ। এই আপদ থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হলো তাওবা ও নেক আমল। এছাড়া প্রশান্তির কোনো উপায় নেই। এই মহা নেয়ামত আল্লাহ তাআলা তাঁর রাসুলকে দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি কি আপনার অন্তর প্রশান্ত করিনি?’ (সুরা ইনশিরাহ: ১)

আরও পড়ুন: নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য চাইতে হয় যেভাবে

তাওবা ও নেক আমলের কারণে অন্যান্য শাস্তি থেকেও রেহাই পাওয়া যায়। আসলে মহান আল্লাহর প্রিয় বান্দা তারাই, যারা দ্রুত তওবা করে সঠিক পথে ফিরে আসে এবং নেক কাজ করে। তাওবা করে আল্লাহর পথে ফিরে না আসলে বিপদ ভারী হতে থাকে। জীবনযাত্রা সংকীর্ণ ও দুঃখে ভরপুর করে দেওয়া হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর যে আমার স্মরণ থেকে বিমুখ হয়, তার জীবনযাত্রা সংকীর্ণ ও দুঃখে ভরপুর হয়ে ওঠে।’ (সুরা ত্বহা: ১২৪) 

আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘..আর এমন লোকদের জন্য কোনো ক্ষমা নেই, যারা মন্দ কাজ করতেই থাকে, এমনকি যখন মাথার উপর মৃত্যু এসে উপস্থিত হয়, তখন বলতে থাকে- আমি এখন তওবা করছি। আর তওবা নেই তাদের জন্য, যারা কুফুরি (অবাধ্য) অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। আমি তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি।’ (সুরা নিসা: ১৭-১৮)


বিজ্ঞাপন


গুনাহের শাস্তি দুনিয়ার পর আখেরাতেও অব্যাহত থাকবে। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা যাকে হেদায়েত দিতে চান, তার অন্তরকে তিনি ইসলামের জন্য প্রসারিত করে দেন। আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করতে চান, তার অন্তরকে তিনি সংকীর্ণ ও বক্র করে দেন, যেন সে আকাশে আরোহণ করছে, তেমনিভাবে যারা ঈমান আনেনি তাদের ওপর আল্লাহ আজাব অবতীর্ণ করেন।’ (সুরা আনআম: ১২৫)

আরও পড়ুন: জান্নাতে যেতে ন্যূনতম যেসব আমল করতে বলা হয়েছে হাদিসে

তাই তো দেখা যায়, উন্নত বিশ্বের মানুষের জন্য আনন্দ-প্রমোদ ও ভোগ-বিলাসের অত্যাধুনিক ব্যবস্থাপনা থাকলেও তাদের অন্তরে নেই প্রশান্তির ছোঁয়া। সবার মধ্যে বিরাজ করে বিষণ্ণতা ও অস্থিরতা। আত্মহত্যার প্রবণতাও ওসব দেশেই বেশি দেখা যায়। এর কারণ হলো- ‘আর যে আমার জিকির থেকে বিমুখ হয়, তার জীবনযাত্রা সংকীর্ণ ও দুঃখে ভরপুর হয়ে ওঠে।’ (সুরা ত্বহা: ১২৪)

তাছাড়া আল্লাহর কাছ থেকে যে মুখ ফিরিয়ে নেবে তার অন্তরে আল্লাহ তাআলা সার্বক্ষণিক ভীতি ঢুকিয়ে দেবেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি কাফেরদের অন্তরে ভীতি ঢুকিয়ে দেব, তারা আল্লাহর সঙ্গে শিরক স্থাপন করেছে, অথচ এ ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা কোনোকিছুই অবতীর্ণ করেননি। তাদের ঠিকানা হবে জাহান্নাম এবং জালিমদের আশ্রয়স্থল কতই না নিকৃষ্ট।’ (সুরা আল ইমরান: ১৫১)

পক্ষান্তরে আল্লাহ তাআলাকে যারা চেনে, তারা অন্তর দিয়ে তাঁকে ভালোবাসে, তারাই সৌভাগ্যবান ও সুখী। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘মুমিন নারী ও পুরুষ কোনো ভালো কাজ করলে আমি তাকে সুন্দর জীবন দান করব এবং তাদের কৃতকর্মের চেয়ে উত্তম প্রতিদান দান করব।’ (সুরা নাহল: ৯৭)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে গুনাহমুক্ত জীবনযাপন করার তাওফিক দান করুন। গুনাহ হয়ে গেলে অবিলম্বে তাওবা করে আল্লাহর পথে ফিরে আসার তাওফিক দান করুন। সর্বোপরি আল্লাহ আমাদের দুনিয়া ও আখেরাত সুন্দর ও সাফল্যমণ্ডিত করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর