রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

মুমিন কথা কম বলবে, কম হাসবে

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১ জুন ২০২২, ১০:৪২ এএম

শেয়ার করুন:

মুমিন কথা কম বলবে, কম হাসবে

মানুষের প্রতিটি কাজ-কর্ম ও কথা লিপিবদ্ধ করা হয়। তাই কথা কম বলার চেষ্টায় থাকতে হয় মুমিনকে। ইসলামি বিশ্বাস অনুযায়ী, অপ্রয়োজনীয় বিষয়ের অবতারণা, নিরর্থক হাসি শুধু ব্যক্তিত্বকে খাটো করে না, চরিত্রেও দাগ লাগাতে সাহায্য করে। কেননা বেশিরভাগ পাপ হয় বান্দার মুখ ও লজ্জাস্থান থেকে। তাই সত্যিকারের মুমিন অপ্রয়োজনীয় কথা ও হাসাহাসির পরিবর্তে বেশি বেশি আমল করবে ও আল্লাহর দরবারে কাঁদবে।

অর্থহীন কথাবার্তা পরিহার করা মুমিনের বৈশিষ্ট্য। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘মুমিনরা সফলকাম হয়েছে, যারা তাদের নামাজে বিনয়ী, যারা অর্থহীন কথা-কাজ থেকে বিরত থাকে।’ (সুরা মুমিনুন: ১-৩)

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে, সে যেন ভালো কথা বলে অথবা চুপ থাকে।’(সহিহ মুসলিম: ৪৭)

রাসুলুল্লাহ (স.) আরও বলেন, ‘প্রকৃত মুসলিম সে, যার জিহ্বা ও হাত থেকে অন্য মুসলিম নিরাপদ থাকে।’ (সহিহ বুখারি: ৬৪৮৪)

নবীজি (স.) কথাবার্তায় মুচকি হাসতেন ঠিক, কিন্তু কম হাসতেন, বরং বেশি পরিমাণে কাঁদতেন। মানুষকেও কম হাসতে ও বেশি কাঁদতে উপদেশ দিতেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (স.) বলেছেন- ‘আমি যা জানি তোমরা যদি তা জানতে তবে তোমরা খুব কমই হাসতে এবং খুব বেশি কাঁদতে।’ (বুখারি: ৬৪৮৫; তিরমিজি: ২৩১৩)

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (স.) বলেন- ‘আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দনকারী ব্যক্তি জাহান্নামে প্রবেশ করবে না। যে রূপ দোহনকৃত দুধ আবার স্তনে ফিরিয়ে নেওয়া যায় না।’ (তিরমিজি: ২৩১১)


বিজ্ঞাপন


চোগলখুরি করা, মিথ্যা বলা ও গালিগালাজ, বিরুদ্ধাচরণ করা ইত্যাদি পাপগুলো সাধারণত বাচলামি থেকেই হয়। বেশি হাসাহাসি থেকে উপহাস করা বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করার মতো কবিরা গুনাহ প্রকাশ পায়। অথচ বিশ্বনবী (স.) এ অভ্যাসকে মন্দ লোক চেনার মানদণ্ড বলে ঘোষণা দিয়েছেন। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘কোনো ব্যক্তির মন্দ প্রমাণিত হওয়ার জন্য এতটুকু যথেষ্ট যে, সে তার মুসলমান ভাইকে তুচ্ছজ্ঞান করে।’ (ইবনে মাজাহ: ৪২১৩)

এছাড়াও বিদ্রূপকারীরা পরকালে নিজেদের কৃতকর্মের জন্য আফসোস করবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যাতে কাউকেও বলতে না হয়, হায় আফসোস! আল্লাহর প্রতি আমার কর্তব্যে আমি যে শৈথিল্য করেছি তার জন্য! আর আমি তো ঠাট্টাকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম।’ (সুরা জুমার: ৫৬)

তাই নিজের জিহ্বাকে সংযত করতে হয় মুমিনকে। সুফিয়ান বিন আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, আমি আল্লাহর নবী (স.)-কে বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনার দৃষ্টিতে আমার জন্য সবচেয়ে আশঙ্কাজনক বস্তু কোনটি? তিনি তার জিহবা ধরে বললেন, এই যে এটি। (ইবনে মাজা: ৩৯৭২)

তবে, কল্যাণকর কথা বলতে মানা নেই, বরং উত্তম কথার পুরস্কার অনেক বড়। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘তাদের বেশিরভাগ গোপন পরামর্শে কোনো কল্যাণ নেই। তবে কল্যাণ আছে যে নির্দেশ দেয় দান-খয়রাত, সৎকাজ ও মানুষের মধ্যে শান্তি স্থাপনের; আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আকাঙ্ক্ষায় কেউ তা করলে আল্লাহ তাকে অবশ্যই মহাপুরস্কার দেবেন।’(সুরা নিসা: ১১৪)

উত্তম ও সুন্দর কথাকে সদকার সমতুল্য বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে হাদিসে। আবু হুরায়রা (র.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেন, সূর্য উদিত হওয়া প্রতিটি দিনেই মানুষের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ওপর সদকা দেওয়া আবশ্যক। কাউকে বাহনে উঠতে কিংবা কোনো সামগ্রী বাহনে তুলে দিতে সাহায্য করা সদকাস্বরূপ। সুন্দর কথা বলা সদকাস্বরূপ। নামাজে যাওয়ার প্রতিটি পদক্ষেপ সদকাস্বরূপ। পথ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা সদকাস্বরূপ। (সহিহ মুসলিম: ১০০৯)

এমনকি সুন্দর কথা ও উত্তম ব্যবহার মানুষকে জাহান্নাম থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। আদি ইবনে হাতিম (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (স.) বলেন—

জাহান্নামের আগুন থেকে আত্মরক্ষা করো, যদিও তা খণ্ডিত খেজুরের বিনিময়েও হয়। কেউ যদি তা করতেও সক্ষম না হয়, সে যেন অন্তত ভালো ও সুন্দর ব্যবহার দিয়ে হলেও নিজেকে জাহান্নাম থেকে বাঁচায়। (সহিহ বুখারি: ৬৫৪০)

হজরত সাহল বিন সাদ (রা.) বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, যে ব্যক্তি তার জিহবা (ভাষা) এবং লজ্জাস্থানের জামানত আমাকে দেবে, আমি তার জন্য জান্নাতের জামিনদার হবো’। (সহিহ বুখারি: ৬৪৭৪)

অতএব আসুন, জিহবাকে নিয়ন্ত্রণ করি এবং উত্তম কথা ও আচরণের মাধ্যমে সওয়াবের ভাগিদার হই। চুপ থাকা কম হাসাহাসির মধ্যে যে কল্যাণ, তা আহরণ করার চেষ্টা করি। আল্লাহ মুসলিম উম্মাহকে তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর