শুক্রবার, ৩ মে, ২০২৪, ঢাকা

পবিত্র কোরআনে উল্লেখিত একমাত্র সাহাবি

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ৩১ মে ২০২২, ০২:১০ পিএম

শেয়ার করুন:

পবিত্র কোরআনে উল্লেখিত একমাত্র সাহাবি
প্রতীকী ছবি

ইসলামের ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ নাম হজরত জায়েদ বিন হারিসা (রা.)। তিনিই একমাত্র সাহাবি, যার নাম পবিত্র কোরআনে উল্লেখ রয়েছে। সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণকারীদের মধ্যেও জায়েদ (রা.)-এর নাম অন্যতম। আল্লামা ইবনে ইসহাক (রহ.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (স.)-এর ওপর সর্বপ্রথম ঈমান গ্রহণ করেন খাদিজা (রা.)। পুরুষদের মধ্যে সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করেন আলী ইবনে আবি তালিব (রা.)। এরপর জায়েদ বিন হারিসা (রা.)। তারপর আবু বকর সিদ্দিক (রা.)। (সিরাতে ইবনে ইসহাক)

আল্লাহ তাআলা সুরা আহজাবে বলেন, ‘আর স্মরণ করো, আল্লাহ যার ওপর নেয়ামত দিয়েছিলেন এবং তুমিও যার প্রতি অনুগ্রহ করেছিলে, তুমি যখন তাকে বলেছিলে ‘তোমার স্ত্রীকে নিজের কাছে রেখে দাও এবং আল্লাহকে ভয় করো। আর তুমি অন্তরে যা গোপন রাখছ আল্লাহ তা প্রকাশকারী এবং তুমি মানুষকে ভয় করছ অথচ আল্লাহই অধিকতর হকদার যে, তুমি তাকে ভয় করবে; অতঃপর জায়েদ যখন তার স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহ সম্পর্ক ছিন্ন করল তখন আমি তাকে তোমার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করলাম, যাতে পালক পুত্রদের স্ত্রীদের ব্যাপারে মুমিনদের কোনো অসুবিধা না থাকে; যখন তারা তাদের স্ত্রীদের সঙ্গে বিবাহসম্পর্ক ছিন্ন করে। আর আল্লাহর নির্দেশ কার্যকর হয়ে থাকে।’ (সুরা আহজাব: ৩৭)


বিজ্ঞাপন


জায়েদ বিন হারিসা (রা.) ছাড়া কোনো সাহাবির নাম পবিত্র কোরআনে সরাসরি উল্লেখ হয়নি। এর তাৎপর্য বর্ণনায় কেউ কেউ বলেন, কোরআনের নির্দেশ অনুযায়ী, রাসুলুল্লাহ (স.)-এর সঙ্গে তাঁর পুত্র সর্ম্পক ছিন্ন করে দেওয়ার ফলে এক বিশেষ সম্মান থেকে তিনি বঞ্চিত হন। মহান আল্লাহ তাঁর নাম পবিত্র কোরআনে অন্তর্ভুক্ত করে এরই বিনিময় প্রদান করেছেন। তবে, রাসুলুল্লাহ (স.) নিজেও তাঁর প্রতি বিশেষ মর্যাদা প্রদান করতেন। হজরত আয়েশা (রা.) ইরশাদ করেন যে, যখনই রাসুলুল্লাহ (স.) জায়েদ ইবনে হারিসা (রা.)-কে কোনো সৈন্যবাহিনীর সঙ্গে পাঠিয়েছেন, তাঁকেই সেনাপতি নিযুক্ত করেছেন। (তাফসীরে ইবনে কাসির)

মহানবী (স.)-এর সঙ্গে জনয়ব (রা.)-এর বিয়ের পেছনে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা রয়েছে। উপরে উল্লেখিত সুরা আহজাবের ৩৭ নম্বর আয়াতে সে ঘটনাই প্রকাশ করা হয়েছে। ঘটনাটি হলো—এর আগে মহানবী (স.)-এর পালক পুত্র জায়েদ (রা.)-এর সঙ্গে জয়নব (রা.)-এর বিয়ে হয়েছিল। জাহেলি যুগে পালক পুত্রকে নিজের ঔরসজাত পুত্রের মতো মনে করা হতো। আনাস ইবনে মালেক (রা.) বর্ণনা করেন, জায়েদ (রা.) সিরিয়ায় বন্দি হন।

হাকিম ইবনে হেজাম ইবনে খুয়াইলিদ তাঁকে ক্রয় করে স্বীয় ফুফু খাদিজা (রা.)-কে দান করেন। খাদিজা (রা.) মহানবী (স.)-এর খেদমতের জন্য তাঁকে দান করেন। মহানবী (সা.) জায়েদ (রা.)-কে আজাদ করে দিয়ে পুত্র হিসেবে গ্রহণ করেন। জায়েদ (রা.) মহানবী (স.)-এর কাছে দীর্ঘদিন ধরে পুত্রের মতো বসবাস করতে থাকেন। তাঁর পিতা দীর্ঘদিন পর্যন্ত তাঁর অনুসন্ধান করার পর অবশেষে তাঁর সন্ধান পান। অতঃপর তাঁর পিতা ও চাচা অর্থের বিনিময়ে মহানবী (স.)-এর কাছ থেকে তাঁদের সন্তানকে ফিরে পাওয়ার আবেদন করেন। মহানবী (স.) বলেন, তোমরা ইচ্ছা করলে বিনিময় ছাড়া তাকে নিয়ে নিতে পারো অথবা ইচ্ছা করলে আমার কাছেও রেখে যেতে পারো। জায়েদ (রা.) মহানবী (স.)-এর কাছে থেকে যেতে চান এবং তাঁরাও মহানবী (স.)-এর কাছে রেখে যাওয়াকে পছন্দ করেন। 

মহানবী (স.) তখন বলেন, হে কুরাইশ গোত্র! তোমরা সাক্ষী থাকো! জায়েদ আমার পুত্র, সে আমার ওয়ারিশ হবে। আর আমিও তার ওয়ারিশ হব। অতঃপর তাঁর পিতা ও চাচা খুশি হয়ে দেশে ফিরে যান। বলা বাহুল্য যে রাসুল (স.)-এর এ ঘোষণা ছিল নবুয়তপ্রাপ্তির আগে।

জায়েদ বিন হারিসা (রা.) যৌবনে পদার্পণ করলে উম্মে আইমন বারাকাহ (রা.)-কে নবীজি তাঁর সঙ্গে বিয়ে দেন। উম্মে আইমন ছিলেন মুহাম্মদ (স.)-এর একজন অত্যন্ত মর্যাদাসম্পন্ন সাহাবী। তিনি মুহাম্মদ (স.)-এর পিতা আবদুল্লাহ ইবনে আবদুল মুত্তালিবের অধীন একজন ইথিওপিয়ান দাসী ছিলেন। আবদুল্লাহর মৃত্যুর পর তিনি মুহাম্মদ (স.)-এর অধীনে কাজ করতেন। পরবর্তীতে তিনি তাকে মুক্ত করে দেন। এরপর তিনি বনু খাজরাজ গোত্রের উবাইদ ইবনে জায়িদ নামক এক ব্যক্তিকে বিয়ে করেন। আইমন নামে তাদের এক সন্তান হয়। একারণে তাকে উম্মে আইমন (আইমনের মা) ডাকা হয়। স্বামীর মৃত্যুর পর তাকে বিয়ে করেন জায়েদ ইবনে হারিসা (রা.)। 

একদিন মসজিদে আসরের নামাজের পর রাসুলুল্লাহ বললেন, তোমাদের মধ্যে কে একজন জান্নাতি মহিলাকে বিয়ে করতে চাও। জমায়েত নিশ্চুপ। হঠাৎ উঠে দাঁড়ালেন রাসুল (স.)-এর পালকপুত্র জায়েদ। বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ আমি। রাসুল (স.) এই কথা বলেন তিনবার। তিনবারই কেবল জায়েদ তার সম্মতির কথা জানান। বিয়েতে এই পবিত্র দম্পতির উসামা ইবনে জায়েদ নামে এক পুত্র জন্মগ্রহণ করেন।

উম্মে আইমন ছাড়াও হজরত জায়েদের আরো একাধিক স্ত্রী ছিল। ইসলাম গ্রহণ করে মদীনায় হিজরত করা নবীজি (স.)-এর ফুফাতো বোন জয়নব বিনতে জাহাশের স্বামী না থাকায় রাসুলুল্লাহ (স.) তাকে পরামর্শ দিলেন জায়েদকে বিয়ে করতে (ইসলামে এক সাথে চারটি স্ত্রী রাখা বৈধ)।

এরপরে রাসুলুল্লাহ (স.) স্বীয় ফুফাতো বোন জনয়ব বিনতে জাহশকে তার কাছে বিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব পাঠান। জায়েদ (রা.) যেহেতু মুক্তিপ্রাপ্ত দাস ছিলেন, সেহেতু হজরত জনয়ব ও তাঁর ভাই আবদুল্লাহ ইবনে জাহশ এ বিয়েতে অসম্মতি জ্ঞাপন করেন, আমরা বংশমর্যাদায় তাঁর চেয়ে শ্রেষ্ঠ, তখন আল্লাহ তাআলা এ আয়াত নাজিল করেন—‘আল্লাহ ও তাঁর রাসুল কোনো কাজের আদেশ করলে যে তা অমান্য করে, সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় পতিত হয়।’ (সুরা আহজাব: ৩৬)

জয়নব ও তাঁর ভাই এ আয়াত শুনে তাঁদের অসম্মতি প্রত্যাহার করে নিয়ে বিয়েতে রাজি হয়ে যান। অতঃপর চতুর্থ হিজরিতে এ বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। এ বিয়েতে মোহরানা ধার্য করা হয় ১০ দিনার, যা প্রায় চার ভরি স্বর্ণ পরিমাণ ও ৬০ দিরহাম বা ১৮ তোলা রৌপ্য পরিমাণ। তা ছাড়া দেওয়া হয়েছিল একটি ভারবাহী জন্তু, কিছু গৃহস্থালির আসবাবপত্র, আনুমানিক ২৫ সের আটা ও পাঁচ সের খেজুর। মহানবী (স.) নিজের পক্ষ থেকে তা প্রদান করেছিলেন। (ইবনে কাসির) 

মহানবী (স.)-এর নির্দেশ মোতাবেক জায়েদ বিন হারিসার সঙ্গে জয়নব (রা.)-এর বিয়ে সম্পন্ন হয়। কিন্তু তাদের স্বভাব-প্রকৃতিতে মিল হয়নি। জায়েদ (রা.) মহানবী (স.)-এর কাছে জনয়ব (রা.) সম্পর্কে ভাষাগত শ্রেষ্ঠত্ব, গোত্রগত মর্যাদা ও আনুগত্যে শৈথিল্য প্রদর্শনের অভিযোগ উত্থাপন করেন।

মহানবী (স.)-কে ওহির মাধ্যমে মহান আল্লাহ জানিয়ে দেন যে, জনয়বকে জায়েদ তালাক দিয়ে দেবে। অতঃপর আপনি তার পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হবেন। একদা হজরত জায়েদ (রা.) রাসুলুল্লাহ (স.)-এর খেদমতে এসব অভিযোগ পেশ করতে গিয়ে হজরত জনয়বকে তালাক দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। মহানবী (স.) যদিও ওহির মাধ্যমে অবগত হয়েছিলেন, তারপরও দুটি কারণে তিনি তালাক দিতে নিষেধ করেন। একটি হলো—তালাক দেওয়া যদিও শরিয়তে জায়েজ, কিন্তু তা অপছন্দনীয় কাজ। অপরটি হলো, মহানবী (স.)-এর অন্তরে এরূপ ধারণা সৃষ্টি হয় যে, জায়েদ তালাক দেওয়ার পর যদি তিনি জয়নবের পাণি গ্রহণ করেন, তবে আরববাসী বর্বর যুগের প্রচলিত প্রথানুযায়ী এ অপবাদ রটাবে যে রাসুল (স.) পুত্রবধূকে বিয়ে করেছেন।

তাছাড়া জাহেলি যুগের প্রথা ছিল যে, যদি কোনো ব্যক্তি অন্য কারো পুত্রকে পোষ্যপুত্ররূপে গ্রহণ করত, তাহলে এ পোষ্যপুত্র তার প্রকৃত পুত্র বলে গণ্য হতো। এ পোষ্যপুত্র সব ক্ষেত্রে প্রকৃত পুত্রের মর্যাদাভুক্ত হতো। তারা প্রকৃত সন্তানের মতো সম্পদের অংশীদার হতো এবং বংশ ও রক্ত সম্পর্কের ভিত্তিতে যেসব নারীর সঙ্গে বিয়ে-শাদি হারাম, এ পোষ্যপুত্রের সম্পর্কের ক্ষেত্রেও এরূপ মনে করা হতো। বিয়েবিচ্ছেদ সংঘটিত হওয়ার পর ঔরসজাত পুত্রের স্ত্রীকে বিয়ে করা যেরূপ হারাম, অনুরূপভাবে পালক পুত্রের তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীও হারাম বলে মনে করা হতো। কিন্তু ইসলাম এ প্রথাকে চিরতরে বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে।

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘তোমরা তাদেরকে তাদের পিতৃপরিচয়ে ডাকো। এটাই আল্লাহর কাছে ন্যায়সংগত। যদি তোমরা তাদের পিতৃপরিচয় না জানো, তবে তারা তোমাদের ধর্মীয় ভাই ও বন্ধুরূপে গণ্য হবে।’ (সুরা সিজদা: ৫)

মহানবী (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কাউকে স্বীয় পিতা ছাড়া অন্যের বলে ডাকে, তার জন্য বেহেশত হারাম।’ (বুখারি: ৪৩২৬)

আবু জর গিফারি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসুলুল্লাহ (স.)-কে বলতে শুনেছেন, কাউকে স্বীয় পিতা ছাড়া অন্যের বলে ডাকা জায়েজ নয়। যে ব্যক্তি জেনে-বুঝে ডাকল, সে কুফরি করল।’(বুখারি: ৩৫০৮)

মহানবী (স.) পঞ্চম হিজরিতে মদিনায় জনয়বকে বিয়ে করেন। তখন রাসুল (স.)-এর বয়স ছিল ৫৮ বছর, আর জনয়ব (রা.)-এর বয়স ছিল ৩৫ বছর। এ বিয়ে হয়েছিল সরাসরি আল্লাহ তাআলার নির্দেশে। জনয়ব (রা.)-কে মহানবী (স.) বিয়ে করলে মুনাফেকরা বিরোধিতার মহা উপকরণ হাতে পেয়ে যায়। তারা প্রচার করতে থাকে যে, রাসুলুল্লাহ (স.) এতই নারীলোলুপ যে স্বীয় পুত্রবধূকে পর্যন্ত বিয়ে করেছেন। 

তখন আল্লাহ তাআলা এ আয়াত নাজিল করেন, ‘মুহাম্মদ তোমাদের কোনো ব্যক্তির পিতা নন; বরং তিনি আল্লাহর রাসুল এবং শেষ নবী। আল্লাহ সব বিষয়ে জ্ঞাত’ (সুরা আল-আহজাব: ৪০)

আরো ইরশাদ করেন, ‘তোমরা তাদেরকে তাদের পিতৃপরিচয়ে ডাকো। এটাই আল্লাহর কাছে ন্যায়সংগত। যদি তোমরা তাদের পিতৃপরিচয় না জানো, তবে তারা তোমাদের ধর্মীয় ভাই ও বন্ধুরূপে গণ্য হবে।’

তাছাড়া, বহু বিয়ের প্রথা তখনকার সময়ে নতুন নিয়ম ছিল না। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘নবীর কোনো পাপ হবে না আল্লাহ তার জন্য যা নির্ধারণ করেছেন তা করলে; পূর্বে যেসব নবী অতিবাহিত হয়েছে, তাদের ব্যাপারে এটিই ছিল আল্লাহর নিয়ম। আর আল্লাহর বিধান সুনির্ধারিত, অবশ্যম্ভাবী। (সুরা আল আহজাব: ৩৮) যেমন দাউদ (আ.)-এর ছিল ১০০ জন পত্নী, ৩০০ জন উপপত্নী। হজরত সুলায়মান (আ.)-এর ছিল ৩০০ পত্নী এবং ৭০০ জন উপপত্নী।

আল্লাহর নির্দেশে এই বিয়ের তাৎপর্য হেকমতপূর্ণ ও মহান আল্লাহর কুদরতের বহিপ্রকাশ। এই বিয়ের বৈশিষ্ট্যগুলো হলো—

১. এ বিয়ে হয়েছিল আল্লাহ তাআলার নির্দেশে।

২. পালকপুত্রের স্ত্রীকে বিয়ে করা যাবে না, জাহেলি যুগের এ কুসংস্কারকে এ বিয়ের মাধ্যমে রহিত করা হয়েছে।

৩. দাস ও স্বাধীনদের মধ্যে সমতা আবশ্যক, এ বিয়ের ফলে তা প্রতীয়মান হয়েছে।

৪. এ বিয়ের পর পর্দার আয়াত তথা সুরা আল আহজাবের ৫৩ নম্বর আয়াত নাজিল হয়। তখন থেকে রাসুল (স.) স্ত্রীদের দরজায় কম্বলের পর্দা ঝুলিয়ে দেন।

৫। হজরত জনয়ব (রা.) বলেন, আমার তিনটি বৈশিষ্ট্য। তা হলো: ক) আমার দাদা ও রাসুল (স.)-এর দাদা একজন। খ) আমার বিয়ে হয়েছে আকাশে। গ) আমার বিয়েতে দূতের কাজ করেছেন স্বয়ং জিবরাঈল (আ.)।

৬) কোরআন মাজিদের কোথাও জায়েদ ইবনে হারিসার নাম ছাড়া অন্য কোনো সাহাবির নাম নেই।

অষ্টম হিজরির জমাদিউল আউয়াল মোতাবেক ৬২৯ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে সংঘটিত মুতার যুদ্ধে সিরিয়ায় জায়েদ (রা.) শহীদ হন। মুতার যুদ্ধে রাসুলুল্লাহ (স.) তাঁকে সেনাপতি নিয়োগ করেছিলেন। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, মুতার যুদ্ধে সেনাপতির দায়িত্ব পালন করবে আমার ছেলে জায়েদ, সে শহীদ হলে জাফর, সে শহীদ হলে আবদুল্লাহ ইবন রাওয়াহা। এ যুদ্ধে তিনজনই শহীদ হন। তাঁদের শহীদ হওয়ার সংবাদ রাসুলুল্লাহ (স.)-এর কাছ পৌঁছলে তিনি খুবই কষ্ট পান। তাঁর এই দুঃখ পূর্বের সকল দুঃখকে ছাড়িয়ে গেল।

 রাসুল (স.) জায়েদের পরিবারকে সান্ত্বনা দিতে গেলেন, বাড়িতে যাওয়ামাত্রই জায়েদ (রা.)-এর ছোট মেয়েটি রাসুল (স.)-কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল। তখন রাসুল (স.)-ও সশব্দে কেঁদে ফেললেন। সাদ ইবনে ওবাদা (রা.) রাসুল (স.)-কে বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ আপনিও ক্রন্দন করছেন! রাসুল (স.) বললেন, এটি প্রিয়জনের বিরহে প্রিয়জনের কান্না, আল্লাহ তাআলা জায়েদ ইবনে হারিসার ওপর সন্তুষ্ট হয়ে গেছেন, তিনিও আল্লাহ তাআলার ওপর সন্তুষ্ট হয়ে গেছেন।

প্রসঙ্গত, উম্মে আইমন ও জয়নব বিনতে জাহশ (তালাকপ্রাপ্তা) ছাড়াও হজরত জায়েদ বিন হারেসার আরো কয়েকজন স্ত্রী ছিল। তারা হলেন উম্মে কুলসুম বিনতে উকবা বিন আবু মুয়াইত, দুররা বিনতে আবু লাহাব (তিনি ইসলাম গ্রহণ করে মদীনায় হিজরত করেছিলেন) ও হিন্দ বিনতে আউওয়াম (হজরত জোবায়েরের বোন)।

হজরত জায়েদ বিন হারেসার (রা.) জীবনী আমাদেরকে যা শেখায়, তাহলো—

* পিতার চেয়ে নবীই (স.) মহান।

* পিতা-পরিবারের চেয়ে নবীই (স.) অধিক আপন এবং মুমিনের জন্য আলেম এবং কাছের-দূরের মুমিনের চেয়ে অধিক আপন কেউ নেই।

* কাউকে নিজের ছেলে হিসেবে গ্রহণ করা জায়েজ। তবে এক্ষেত্রে ওই ছেলের আসল পিতার পরিচয় ভুলিয়ে দেওয়া জায়েজ নেই। অনুরুপ কোনো মেয়েকে নিজের কন্যা হিসেবে গ্রহণ করাও পুরুষের জন্য জায়েজ নেই।

* স্ত্রীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়া কোনো অপরাধ নয়।

* কোনো কারণে স্ত্রীকে তালাক দেওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু নয়।

* একাধিক বিয়ে অবৈধ ও পরিত্যাজ্য নয়।

* স্ত্রী-সন্তান থাকা সত্ত্বেও সবসময় যুদ্ধ-জিহাদ ও মৃত্যু-শাহাদতের প্রস্তুত থাকাই মুমিনের আসল বৈশিষ্ট্য।

আল্লাহ তাআলা হজরত জায়েদ ইবনে হারিসা (রা.)-কে পবিত্র কোরআনে উল্লেখ করার মাধ্যমে পৃথিবীতে যেভাবে সম্মানিত করেছেন, পরকালেও উত্তম জাযা দান করুন। মুসলিম উম্মাহকে এই বিখ্যাত সাহাবির জীবনী থেকে শিক্ষা নেওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর