প্রয়োজনের নামাজ বা সালাতুল হাজত একটি বিশেষ নফল ইবাদত। এই নামাজের মাধ্যমে মূলত আল্লাহর কাছে প্রয়োজন পূরণের জন্য প্রার্থনা করা হয়। এর নির্দিষ্ট দিনক্ষণ নেই। নিজের যেকোনো প্রয়োজনে যেকোনো সময় এই নামাজ পড়া যায়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘সঙ্গত কোনো প্রয়োজন পূরণের জন্য বান্দা নিজ প্রভুর কাছে ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করবে।’ (সুরা বাকারা: ১৫৩)
সুন্দরভাবে অজু করে এই নামাজ স্বাভাবিক নফল নামাজের নিয়মে পড়তে হয়। সাধারণত এই নামাজ দুই রাকাত, তবে চার রাকাতও পড়া যায়। নামাজশেষে আল্লাহ তাআলার হামদ ও ছানা (প্রশংসা) এবং রাসুলুল্লাহ (স.)-এর ওপর দরুদ পাঠ করে নিজের মনের কথা ব্যক্ত করে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হয়।
বিজ্ঞাপন
আবদুল্লাহ ইবনু আবি আওফা থেকে বর্ণিত আছে, আল্লাহর রাসুল (স.) বলেন, ‘আল্লাহর কাছে বা কোনো আদম-সন্তানের কাছে যদি কারও কোনো প্রয়োজন হয়, তাহলে সে যেন অজু করে এবং খুব সুন্দরভাবে যেন তা করে। এরপর যেন দুই রাকআত নামাজ আদায় করে। এরপর যেন আল্লাহর হামদ বা আল্লাহর প্রশংসা করে এবং রাসুল (স.)-এর উপর দরূদ সালামের পর নিম্নের দোয়াটি পড়ে।
আরও পড়ুন: ইবাদতে আগ্রহ না থাকা কি আল্লাহর শাস্তি?
দোয়াটি হলো- لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ الْحَلِيمُ الْكَرِيمُ سُبْحَانَ اللَّهِ رَبِّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ أَسْأَلُكَ مُوجِبَاتِ رَحْمَتِكَ وَعَزَائِمَ مَغْفِرَتِكَ وَالْغَنِيمَةَ مِنْ كُلِّ بِرٍّ وَالسَّلاَمَةَ مِنْ كُلِّ إِثْمٍ لاَ تَدَعْ لِي ذَنْبًا إِلاَّ غَفَرْتَهُ وَلاَ هَمًّا إِلاَّ فَرَّجْتَهُ وَلاَ حَاجَةً هِيَ لَكَ رِضًا إِلاَّ قَضَيْتَهَا يَا أَرْحَمَ الرَّاحِمِينَ
উচ্চারণ: ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুল হালিমুল কারিম, সুবহানাল্লাহি রাব্বিল আরশিল আজিম, আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন, আছআলুকা মুজিবাতি রাহমাতিক; ওয়া আজা-ইমা মাগফিরাতিক, ওয়াল গানিমাতা মিন কুল্লি বিররিউ ওয়াস সালামাতা মিন কুল্লি ইছমিন লা তাদাঅলি- জাম্বান ইল্লা গাফারতাহু ওয়ালা হাম্মান ইল্লা ফাররাজতাহু ওয়ালা হা-জাতান হিয়া লাকা রিজান- ইল্লা কাজাইতাহা ইয়া আর-হামার রা-হিমিন।’
বিজ্ঞাপন
অর্থ: ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। তিনি অতি সহিষ্ণু ও দয়ালু, সকল দোষ-ত্রুটি থেকে পবিত্র তিনি। মহান আরশের প্রভু। সকল প্রশংসা আল্লাহর, তিনি সারা জাহানের রব। আপনার কাছেই আমি যাঞ্ছা করি— আপনার রহমত আকর্ষণকারী সকল পূণ্যকর্মের ওসিলায়, আপনার ক্ষমা ও মাগফিরাত আকর্ষণকারী সকল কাজের বরকত, সকল নেক আমলে সাফল্য লাভের এবং সব ধরনের গুনাহ থেকে নিরাপত্তা লাভের। আমার কোনো গুনাহ যেন মাফ ছাড়া না থাকে। কোনো সমস্যা যেন সমাধান ছাড়া না রয়ে যায়। আর আমার এমন প্রয়োজন— যাতে আপনার সন্তুষ্টি রয়েছে, তা যেন অপূরণ না থাকে। হে সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু।’ (তিরমিজি: ৪৭৯; ইবনু মাজাহ: ১৩৮৪)
আরও পড়ুন: বিপদ থেকে বাঁচার ছয়টি কার্যকরী দোয়া
তবে, এই দোয়াটিই পড়তে হবে—এমন নয়। আপনি আপনার মতো করে কোরআন-হাদিসে বর্ণিত যেকোনো দোয়া পড়লে অসুবিধা নেই। দোয়াটি সাধারণ নামাজের শেষেও পড়া যেতে পারে।
সালাতুল হাজতের পর আরেকটি দোয়া পড়তে পারেন, যেটি নবীজির বহুল পঠিত দোয়া- اَللَّهُمَّ رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ- উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা রব্বানা আ-তিনা ফিদ্দুনইয়া হাসানাতাঁও ওয়া ফিল আ-খিরাতি হাসানাতাঁও ওয়া ক্বিনা আযা-বান্না-র।’ অর্থ: হে আল্লাহ! হে আমাদের পালনকর্তা! আপনি আমাদের দুনিয়াতে মঙ্গল দিন এবং আখেরাতেও মঙ্গল দিন। জাহান্নামের আজাব থেকে আমাদের রক্ষা করুন।’ আনাস (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (স.) অধিকাংশ সময় এ দোয়াটি পড়তেন।’ (বুখারি: ৪৫২২, ৬৩৮৯; মেশকাত: ২৪৮৭; মুসলিম, মেশকাত: ৮১৩)
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে যেকোনো প্রয়োজনে যথাযথ নিয়মে সালাতুল হাজত ও উল্লেখিত দোয়াগুলো পাঠ করার মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনার তাওফিক দান করুন। আমিন।

