বিতির নামাজে দোয়া কুনুত পড়া ওয়াজিব। ‘কুনুত’ অনেক অর্থসমৃদ্ধ একটি শব্দ। এ শব্দ দ্বারা নীরবতা, সালাত, কিয়াম, ইবাদত ইত্যাদি বুঝায়। এখানে কুনুত দ্বারা উদ্দেশ্য হলো- ‘নামাজে দাঁড়ানো অবস্থায় আল্লাহর কাছে দোয়া করা।’
এ দোয়ার ফলে আল্লাহ বান্দার ওপর খুশি হন। বান্দার চাওয়া-পাওয়া পূর্ণ করে দেন। বিপদ-আপদ থেকে মুক্তি দেন।
দোয়া কুনুত হুবহু হাদিসে বর্ণিত শব্দে হওয়া ওয়াজিব নয়। বরং অন্যকোনো দোয়া করারও অবকাশ রয়েছে। এমনকি যদি কোরআনের যেসব আয়াতে দোয়া আছে, এমন আয়াত পড়লে সেটাও জায়েজ আছে। ইমাম নববি (রহ) বলেন, জেনে রাখুন- অগ্রগণ্য মাজহাবমতে, কুনুতের জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো দোয়া নেই। তাই যেকোনো দোয়া পড়লে কুনুত হয়ে যাবে; এমনকি দোয়া সম্বলিত এক বা একাধিক কোরআনের আয়াত পড়লেও কুনুতের উদ্দেশ্য হাসিল হয়ে যাবে। তবে হাদিসে যে দোয়া এসেছে সেটা পড়া উত্তম। (ইমাম নববির ‘আল-আজাকার, পৃষ্ঠা-৫০)
বিজ্ঞাপন
দোয়া কুনুত মুখস্থ না থাকলে যেসব দোয়া পড়তে পারেন
দোয়া কুনুত যাদের মুখস্থ নেই, তারা নিচের যেকোনো একটি দোয়া বিতির নামাজে পড়ে নিতে পারেন।
১. رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِنْ لَدُنْكَ رَحْمَةً إِنَّكَ أَنْتَ الْوَهَّابُ ‘রব্বানা লা-তুযিগ ক্বুলুবানা বা’দা ইজ হাদাইতানা, ওয়াহাব লানা মিন লাদুনকা রাহমাতান, ইন্নাকা আন্তাল ওয়াহ্যাব। অর্থ: হে আমাদের রব্ব! সরল পথ প্রদর্শনের পর আপনি আমাদের অন্তরকে সত্য লংঘনে প্রবৃত্ত করবেন না এবং আপনি আমাদের অনুগ্রহ করুন। আপনিই সব কিছুর দাতা। (সুরা আলে ইমরান: ৮)
আরও পড়ুন: উচ্চারণ ও অর্থসহ দোয়া কুনুত
২.رَبَّنَاۤ اٰتِنَا فِی الدُّنْیَا حَسَنَةً وَّ فِی الْاٰخِرَةِ حَسَنَةً وَّ قِنَا عَذَابَ النَّارِ উচ্চারণ: ‘রাব্বানা আতিনা ফিদ-দুনিয়া হাসানাতাঁও ওয়া ফিল আখিরাতে হাসানাতাঁও ওয়া কিনা আজাবান নার।’ অর্থ: ‘হে আমাদের প্রতিপালক, আমাদের দুনিয়াতে কল্যাণ দান করুন; আখিরাতেও কল্যাণ দান করুন। এবং আমাদের জাহান্নামের আজাব থেকে রক্ষা করুন।’ (সুরা বাকারা: ২০১)
বিজ্ঞাপন
৩. اَللَّهُمَّ اهْدِنِيْ فِيْمَنْ هَدَيْتَ، وَعَافِنِيْ فِيْمَنْ عَافَيْتَ، وَتَوَلَّنِيْ فِيْمَنْ تَوَلَّيْتَ، وَبَارِكْ لِيْ فِيْمَا أَعْطَيْتَ، وَقِنِيْ شَرَّمَا قْضَيْتَ؛ إِنَّكَ تَقْضِىْ وَلاَ يُقْضَى عَلَيْكَ، وَإنَّهُ لاَ يَذِلُّ مَنْ وَّالَيْتَ، وَلاَ يَعِزُّ مَنْ عَادَيْتَ، تَبَارَكْتَ رَبَّنَا وَتَعَالَيْتَ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! যাদেরকে তুমি হেদায়াত করেছো আমাকেও তাদের সঙ্গে হেদায়াত করো, যাদের প্রতি উদারতা দেখিয়েছ তাদের সঙ্গে আমার প্রতিও উদারতা দেখাও। তুমি যাদের অভিভাবকত্ব গ্রহণ করেছ তাদের সঙ্গে আমার অভিভাবকত্বও গ্রহণ করো। তুমি আমাকে যা দান করেছ তার মধ্যে বরকত দাও। তোমার নির্ধারিত খারাবি থেকে আমাকে রক্ষা কর। কেননা তুমিই নির্দেশ দিতে পার, তোমার উপর কারো নির্দেশ চলে না। যাকে তুমি বন্ধু ভেবেছ সে কখনও অপমানিত হয় না। তুমি কল্যাণময়, তুমি সুউচ্চ।’ আল হাসান বিন আলী (রা.) এই দোয়ার ব্যাপারে বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (স.) আমাকে কয়েকটি বাক্য শিখিয়ে দিয়েছেন। এগুলো আমি বিতরের নামাজে পাঠ করে থাকি।’ (তিরমিজি: ৪৬৪)
৪. কয়েকবার করে এই দুইটি দোয়াও পড়তে পারেন— ১. أَللّهُمَّ اغْفِرْ لَنَا উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাগ ফির লানা। অর্থ: হে আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন। ২. أَسْتَغْفِرُ اللهَ উচ্চারণ: আসতাগফিরুল্লাহ। অর্থ: ‘হে আল্লহ, আমাকে ক্ষমা করুন।’ (ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/১৭০; আল-মুহিতুল বুরহানি: ২/২৭০; ফতোয়া তাতারখানিয়া: ২/৩৪৪; আল-বাহরুর রায়েক: ২/৪২-৪৩; রদ্দুল মুহতার: ২/৭)
আরও পড়ুন: বিতিরে দোয়া কুনুত না পড়লে নামাজ হবে?
উল্লেখ্য, দোয়া কুনুতের পরিবর্তে ৩ বার সুরা ইখলাস পড়ার রেওয়াজটি গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ সুরা ইখলাস— কুনুত বা দোয়া সম্বলিত সুরা নয়। কুনুতের উদ্দেশ্যই হচ্ছে- আল্লাহর কাছে দোয়া করা। সুতরাং বিতির নামাজ শুদ্ধ হওয়ার জন্য যেকোনো মাসনুন দোয়া পড়তে হবে। তবে হাদিসে বর্ণিত দোয়া তথা ‘আল্লাহুম্মা ইন্না নাসতায়িনুকা’ এটি পড়া সুন্নত। তাই তা দ্রুত শিখে নেওয়া উচিত।
মনে রাখতে হবে, কেউ যদি বিতির নামাজে কোনো দোয়াই না পড়ে— তাহলে তাকে পুনরায় নামাজ আদায় করতে হবে। (আল-মুহিতুল বুরহানি: ২/২৭০; আল-বাহরুর রায়েক: ২/৪২; রদ্দুল মুহতার: ১/৪৬৮; হাশিয়াতুত তহতাভি আলাদ্দুর: ১/২৮০)