মানবদেহের বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক হিসেবে কালিজিরার ব্যবহার প্রাচীনকাল থেকে। কালিজিরার বীজ থেকে যে তেল তৈরি হয়, তাও আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। রাসুলুল্লাহ (স.) কালিজিরার বেশ প্রশংসা করেছেন। এক হাদিসে তিনি বলেছেন, ‘কালিজিরায় সকল প্রকার রোগের উপশম আছে, তবে ‘আস্সাম’ ব্যতীত। আর ‘আস্সাম’ হলো মৃত্যু। (মুসলিম: ৫৬৫৯)
চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের মতে, কালোজিরায় থাকে ভিটামিন, ক্রিস্টালাইন নাইজেলোন, অ্যামাইনো অ্যাসিড, স্যাপোনিন, ফাইবার, প্রোটিন এবং ফ্যাটি অ্যাসিড, উদ্বায়ী তেল, অ্যালকালয়েড, আয়রন, সোডিয়াম, পটাসিয়াম এবং ক্যালসিয়াম। কালোজিরার যেসব উপকার প্রমাণিত, সেগুলো হলো- ১. স্মৃতিশক্তি উন্নত করে ও মনোযোগ ধরে রাখে। যারা অস্থিরতায় ভোগেন, তাঁদের জন্য কালিজিরা দারুণ উপকারী। ২. রক্তে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে। যারা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান, তাদের জন্য কালিজিরা খুব কার্যকর। ৩. রক্তে বাজে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমায় এবং উচ্চ রক্তচাপ থেকে মুক্তি দেয়। ৪. হৃদ্যন্ত্র ভালো রাখে। ৫. গেঁটে বাত বা অস্থিসন্ধির ব্যথা দূর করতে কার্যকর কালিজিরা। ৬. যারা মাথাব্যথায় ভোগেন, তাদের জন্য কালিজিরা উপকারী। ৭. শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ৮. ব্রণ দূর করে। ৯. চুল পড়া রোধে দারুণ কার্যকর। ১০. দাঁত শক্ত করে। ১১. যারা অ্যাজমা বা হাঁপানির সমস্যায় ভোগেন, তাদের জন্যও উপকারী। ১২. পাইলস, কোষ্ঠকাঠিন্য, যকৃতের সমস্যায় বা জন্ডিস থেকে দ্রুত সেরে উঠতে কালিজিরা কাজে লাগে।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: প্রিয়নবীজির পছন্দের ১৫ খাবার
তবে, কালোজিরা থেকে প্রকৃত উপকার পেতে হলে অবশ্যই তার ব্যবহার পদ্ধতি জেনে সঠিক ভাবে প্রয়োগ করতে হবে। কখনো কালোজিরার তেল, কখনো পাউডার, কখনো মধু বা অন্যান্য জিনিসের সাথে মিশ্রণ, কখনো ফোটা আকারে ঢেলে, কখনো ব্যান্ডেজ করে। এ বিষয়গুলো গবেষণা এবং অভিজ্ঞতার আলোকে বিশেষজ্ঞদের নিকট থেকে জানতে হবে। ইচ্ছেমতো কালোজিরা ব্যবহার করলেই সকল রোগের ক্ষেত্রে সমান ভাবে সাফল্য নাও পাওয়া যেতে পারে।
হাদিস থেকে বিষয়টি জানা যায়। খালিদ ইবনে সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা (যুদ্ধের অভিযানে) বের হলাম। আমাদের সঙ্গে ছিলেন গালিব ইবনে আবজার। তিনি পথে অসুস্থ হয়ে গেলেন। এরপর আমরা মদিনায় ফিরলাম, তখনো তিনি অসুস্থ ছিলেন। তাঁকে দেখাশোনা করতে আসেন ইবনে আবি আতিক। তিনি আমাদের বললেন, তোমরা এ কালিজিরা সঙ্গে রেখো। এর থেকে পাঁচটি কিংবা সাতটি দানা নিয়ে পিষে ফেলবে, তারপর তন্মধ্যে জয়তুনের কয়েক ফোঁটা তেল ঢেলে দিয়ে তার নাকের এদিক-ওদিকের ছিদ্র দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা করে প্রবিষ্ট করাবে। কেননা আয়েশা (রা.) আমাদের নিকট বর্ণনা করেছেন যে তিনি নবী (স.)-কে বলতে শুনেছেন, এই কালিজিরা ‘সাম’ ছাড়া সব রোগের ওষুধ। আমি বললাম, ‘সাম’ কী? তিনি বললেন মৃত্যু। (বুখারি: ৫৬৮৭)
বিজ্ঞাপন
তাহলে বোঝা গেলো কালিজিরা থেকে উপকৃত হতে হলে ব্যবহারের নিয়মও জেনে নিতে হবে। ইচ্ছামতো কালিজিরা খেলেই উপকার মেলবে—এমন কথা হাদিসে নেই। পবিত্র হাদিসে যেহেতু রাসুল (স.) কালিজিরাকে সব রোগের মহৌষধ বলেছেন, তাই বিভিন্ন খাবার তৈরিতে এবং আমাদের খাবারের মেন্যুতে অল্পকিছু কালিজিরা যোগ করতে পারি। এতে করে রাসুল (স.)-এর সুন্নত আদায় হবে এবং এর বরকতে আমরা সুস্থ থাকব ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তাআলা আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন।

