রাসুলুল্লাহ (স.) উম্মতকে এমন কিছু আমল শিখিয়েছেন, যার পুরস্কার অসীম। এখানে এমন দুই ব্যতিক্রম আমল তুলে ধরা হচ্ছে, যা অজস্র গুনাহ মাফ ও সীমাহীন সওয়াব ও বরকত লাভের কারণ।
দরুদ পাঠ
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরুদ শরিফ পাঠ করে, আল্লাহ তাআলা তার প্রতি ১০টি রহমত বর্ষণ করেন, ১০টি পাপ মোচন করেন এবং ১০টি মর্যাদা বৃদ্ধি করেন। (মুসনাদে আহমদ: ১/১০২)
বিজ্ঞাপন
দরুদের আরও অনেক ফজিলত বর্ণিত হয়েছে হাদিসে। হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী, দরুদ পাঠকারীর জন্য ফেরেশতার দোয়া, কেয়ামতের দিন নবীজির সুপারিশ, এমনকি জান্নাতের সুসংবাদও রয়েছে, উপরন্তু দুনিয়ার সর্বাধিক কল্যাণেও দরুদ এক অনন্য মাধ্যম। এক হাদিসে এসেছে, উবাই ইবনে কাব (রা.) বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ (স.) আল্লাহর জিকিরের খুব তাকিদ করলেন। আমি আরজ করলাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি আপনার প্রতি বেশি বেশি দরুদ পাঠ করে থাকি। আমি আমার দোয়ার কতভাগ আপনার জন্য নির্ধারণ করব? তিনি বললেন, তোমার যে পরিমাণ ইচ্ছা। আমি বললাম, চারভাগের এক ভাগ? তিনি বললেন, তোমার যতটুকু ইচ্ছা। তবে বেশি করলে আরো ভালো। আমি বললাম, তাহলে অর্ধেক? তিনি বললেন, তোমার যতটুকু ইচ্ছা। তবে বেশি করলে আরো ভালো। আমি বললাম, তাহলে তিন ভাগের দুই ভাগ? তিনি বললেন, তোমার যতটুকু ইচ্ছা হয়। তবে বেশি করলে আরো ভালো। আমি বললাম, তাহলে কি আমার দোয়ার পুরোটাই হবে আপনার প্রতি দরূদ? তিনি বললেন, তবে তো তোমার মকসুদ হাসিল হবে, তোমার গুনাহ মাফ করা হবে।’ (তিরমিজি: ২/৭২) মাজমাউজ জাওয়ায়েদ: ১০/২৪৮; মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা: ৬/৪৫)
আরও পড়ুন: দরুদ ও সালামের ৯টি বিস্ময়কর উপকার
নেক নিয়ত
যেকোনো কাজে নিয়ত শুদ্ধ করা অটো সওয়াব লাভের মাধ্যম। কাজ সফল হোক বা না হোক, শুধু নিয়তের কারণেই অগণিত সওয়াব লাভ হবে। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো ভালো কাজের আশা করল, অতঃপর তা করতে পারল না, তবুও তার জন্য সওয়াব লেখা হবে।’ (বুখারি: ৬৪৯১)
আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, আমার বান্দা যখন কোনো ভালো কাজের নিয়ত করে অথচ এখনও তা করেনি, তখন আমি তার জন্য একটি সাওয়াব লিখি; আর যদি তা কাজে পরিণত করে তবে ১০ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত সাওয়াব লিখি। পক্ষান্তরে কেউ যদি গুনাহের কাজের ইচ্ছা করে, তার আমলনামায় কী পাপ লেখা হবে যেভাবে ভালো কাজের নিয়ত করায় নেকি লেখা হয়? না, লেখা হবে না। কেউ যদি নিয়ত করল যে, সে অমুক পাপ কাজ করবে, কিংবা নিকৃষ্ট কোনো পাপের ইচ্ছাও করে আমলনামায় লেখা হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত সে ওই গুনাহের কাজটা না করে। আরেক হাদিসে আছে, যদি কেউ মন্দ কাজের নিয়ত করে অথচ এখনও তা কাজে পরিণত করেনি তবে এর জন্য কিছুই লিখি না। আর তা কাজে পরিণত করলে একটি মাত্র পাপ লিখি। (মুসলিম: ২৩৩)
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: বিশুদ্ধ নিয়তের গুরুত্ব
এমনকি যদি এমন হয়, কোনো ব্যক্তি তাহাজ্জুদের নিয়ত করে ঘুমাল। কিন্তু গভীর ঘুমেই চলে গেল তাহাজ্জুদের সময়। সে ব্যক্তি তাহাজ্জুদ না পড়েও তাহাজ্জুদের সাওয়াব পাবে। হাদিসে আছে, নবীজি (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি শয়নকালে রাতের বেলায় তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ার নিয়ত করে শুয়েছে, কিন্তু অতিরিক্ত ঘুমের চাপে ভোর হয়ে গেছে- সে তার নিয়ত অনুযায়ী সওয়াব পাবে। তার ঘুমই আল্লাহর পক্ষ থেকে সওয়াব হিসেবে গণ্য হবে।’ (নাসায়ি: ৩/২৫৮)
আবার মন্দ নিয়ত মানুষের মন্দ পরিণতি ডেকে আনে। মন্দ নিয়ত তাকে আল্লাহর ক্রোধের পাত্র করে, তার ধ্বংস ডেকে আনে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারিম (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষের অর্থ-সম্পদ (ঋণ) নেয় পরিশোধ করার নিয়তে, আল্লাহ তাআলা তা আদায়ের ব্যবস্থা করে দেন। আর যে তা নেয় বিনষ্ট করার নিয়তে, আল্লাহ তাআলা তাকে ধ্বংস করে দেন।’ (সহিহ বুখারি: ২৩৮৭)

