বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (স.) সারা বিশ্বের জন্য রহমতস্বরূপ হয়ে পৃথিবীতে এসেছিলেন। তিনি রোজা রাখতেন তাঁর জন্মের বার হিসেবে, তারিখ হিসেবে নয়। তাঁর জন্মদিন ছিল সোমবার। এদিন তিনি কোনো উৎসব, মিছিল বা ভোজনরসিকতা করতেন না, বরং রোজা রাখতেন।
হাদিস বিশারদদের মতে, প্রতি সোমবার রোজা রাখা মোস্তাহাব। হজরত আবু কাতাদাহ আনসারি (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (স.)-কে সোমবার রোজা রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ওই দিন আমি জন্মগ্রহণ করেছি। ওই দিনই আমি নবুয়ত লাভ করেছি বা আমার ওপর ওহি অবতীর্ণ হয়..।’ (সহিহ মুসলিম: ১১৬২)
বিজ্ঞাপন
প্রিয়নবী (স.) যে যুগে জন্মগ্রহণ করেছেন, সে যুগে জন্মতারিখ রেজিস্ট্রি করে রাখার প্রথা ছিল না। সে হিসেবে রাসুল (স.)-এর জন্মতারিখ কোথাও লিপিবদ্ধ হয়নি। একটি অভিমত হলো—আবরাহার হস্তীবাহিনীর ঘটনার ৫০ থেকে ৫৫ দিন পর ৮ রবিউল আউয়াল সোমবার সুবহে সাদিকের সময় তিনি আবু তালিবের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.), জুবাইর ইবনে মুতঈম (রা.), আল্লামা ইবনুল জাওজি, কুতুবউদ্দীন কাসতালানি (রহ.)সহ বেশির ভাগ মুহাদ্দিস ও জীবনীকার এ বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করেছেন। (সিরাতে মুস্তফা (বাংলা): ১/৬৩-৬৪, ইদ্রিস কান্ধলবী, জুরকানি: ১/১৩০-৩১)
আরও পড়ুন: জন্মদিনে যা করতেন নবীজি
প্রখ্যাত ঐতিহাসিক মুহাম্মদ সুলাইমান মানসুরপুরী ও মাহমুদ পাশার অনুসন্ধানি অভিমত হলো—রাসুল (স.)-এর জন্মতারিখ ৯ রবিউল আউয়াল। ইংরেজি পঞ্জিকামতে, তারিখটি ছিল ৫৭০ সালের ২০ অথবা ২২ এপ্রিল। (মাহমুদ পাশা, তারিখে খুজরি, প্রথম খণ্ড, পৃ. ৬২, সুলাইমান মানসুরপুরী, রাহমাতুল্লিল আলামিন, প্রথম খণ্ড, পৃ-৩৮-৩৯)
তবে, নবীজির জন্মদিন হিসেবে যে তারিখটি বেশি প্রসিদ্ধি পেয়েছে সেটি হলো ১২ রবিউল আউয়াল। তাই অনেকে ১২ রবিউল আউয়ালে নবীজির জন্মদিন হিসেবে উৎসব পালন ও ভোজনরসিকতা করেন। ইসলামি শরিয়তে যার কোনো ভিত্তি নেই। সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেইনরা তাঁদের যুগে ১২ রবিউল আউয়ালকে খুশির দিবস হিসেবেও পালন করেননি, শোক দিবস হিসেবেও না।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: মুসলিম মানসে রবিউল আউয়ালের মহিমা
আসলে শরিয়তে রবিউল আউয়াল মাসের বিশেষ কোনো আমলই নেই। কেউ চাইলে অন্যান্য মাসের মতো আইয়ামে বিজের রোজা, সোমবার-বৃহস্পতিবারের রোজা এবং দোয়া-দরুদ পড়তে পারেন। যেটা অন্যান্য মাসের মতোই। আর যাদের বেশি রোজা রাখার অভ্যাস আছে, তারা ১২ তারিখ কেন, যেকোনো তারিখেই রোজা রাখতে পারেন। সেই হিসেবে ১২ তারিখও রাখতে পারেন। আর নফল যেকোনো আমলই তো সুন্নত। কিন্তু এটিকে বিশেষ আমল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ নেই।
উল্লেখ্য, ১২ রবিউল আউয়াল নবীজির জন্মতারিখ হিসেবে প্রমাণিত না হলেও ওই তারিখেই তাঁর ইন্তেকাল হয়েছে—এ ব্যাপারে কারো মতবিরোধ নেই। (আর-রওদুল উন্ফ: ৪/৪৩৯-৪৪০, আস-সিরাহ আন-নববিয়্যাহ: ৪/৫০৯, ফাতহুল বারি: ৮/১৩০)
আল্লাহ আমাদের সকল প্রকার শরিয়তবহির্ভূত রসম-রেওয়াজ থেকে হেফাজত করুন। সুন্নতের অনুসারী হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

