বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

ইসলামে ‘গরিবের অহংকার’ বেশি ঘৃণিত কেন

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৫ মে ২০২২, ০৮:৪২ এএম

শেয়ার করুন:

ইসলামে ‘গরিবের অহংকার’ বেশি ঘৃণিত কেন

অহংকারের আরবি প্রতিশব্দ আল-কিবর। অর্থ বড়ত্ব। নিজেকে অন্যের চেয়ে বড় মনে করাই এর অন্তর্নিহিত অর্থ। পারিভাষিক অর্থ হচ্ছে- সত্যকে দম্ভভরে প্রত্যাখ্যান করা এবং মানুষকে তুচ্ছ জ্ঞান করা। শয়তান জান্নাত থেকে বিতাড়িত হয়েছে তার অহংকারের কারণে। অহংকার শুধু আল্লাহর জন্য খাস; অন্য কারো অহংকার করার অধিকার নেই।

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘নিঃসন্দেহে আল্লাহ অহংকারীদের পছন্দ করেন না’ (সুরা নাহল: ২৩)। রাসুল (স.) বলেছেন, ‘যার অন্তরে বিন্দু পরিমাণ অহংকার থাকবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (সহিহ মুসলিম: ১৬৭)


বিজ্ঞাপন


অহংকার যেকোনো ব্যক্তির জন্য হারাম। আর অহংকারী যদি একজন গরিব হয়, তাহলে এটি মারাত্মক অপরাধ। কারণ অন্যরা অহংকার করে হয়ত সম্পদ ও প্রভাব-প্রতিপত্তির কারণে। কিন্তু যে ফকির-নিঃস্ব, তার অহংকারের বাহ্যিক কোনো কারণ নেই। এরপরও যখন সে অহংকারী হয়, সেটি মারাত্মক অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয় মহান আল্লাহর কাছে। খুবই স্বাভাবিক যুক্তি যে, যার নিত্যপ্রয়োজনগুলোই যেখানে ঠিকমতো পূরণ হয় না, সে কেন অন্যদের ওপর অহংকার করবে? তার জন্য ভয়াবহ শাস্তির হুঁশিয়ারি রয়েছে।

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘তিন ব্যক্তির সঙ্গে আল্লাহ পরকালে কথা বলবেন না এবং তাদের পবিত্রও করবেন না। তাদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি। তারা হলো ব্যভিচারী বৃদ্ধ, মিথ্যাবাদী শাসক ও অহংকারী দরিদ্র।’ (সহিহ মুসলিম: ১০৭)

গরিবের অহংকারী হওয়া মোটেই সমীচীন নয়। বরং তার উচিত, দুরবস্থার জন্য বিনয়ী হয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা। হাদিস অনুযায়ী, জান্নাতের অধিকাংশই হচ্ছে দুনিয়ার দরিদ্র-অসহায় মানুষগুলো। আরও আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, ধনীদের ৫০০ বছর আগে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। দরিদ্রের জন্য এর চেয়ে সুখের খবর আর কী হতে পারে!

রাসুল (স.) বলেছেন- ‘আমি জান্নাতে উঁকি মেরে দেখলাম যে এর বেশির ভাগ অধিবাসী হলো গরিব-মিসকিন। আর জাহান্নামে দেখলাম যে এর বেশির ভাগ নারী’ (মুসলিম ও মেশকাত: ৫২৩৪)। রাসুল (স.) আরও বলেন, ‘দরিদ্র মুহাজিররা তাদের ধনীদের চেয়ে ৫০০ বছর আগে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর তা হলো (আখেরাতের) অর্ধদিনের সমান।’ (তিরমিজি: ২৩৫৩)

এছাড়াও গরিব-অসহায়কে অবজ্ঞা না করতে আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তুমি নিজেকে তাদেরই সংসর্গে রাখো, যারা সকাল ও সন্ধ্যায় তাদের রবকে তাঁর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আহ্বান করে এবং তুমি পার্থিব জীবনের শোভা কামনা করে তাদের দিক থেকে তোমার দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ো না।’ (সুরা কাহফ: ২৮)

আল্লাহভীরু গরিব ও দুর্বল শ্রেণির লোকেরা সামাজিকভাবে হেয় হলেও মহান আল্লাহর কাছে মর্যাদাশীল। এদের কারণেই আল্লাহ তাআলা অন্য বান্দাদেরও রিজিক দিয়ে থাকেন। সাদ (রা.) নিজেকে নিম্ন শ্রেণির লোকদের চেয়ে অধিক মর্যাদাশীল মনে করলে রাসুল (স.) বলেন, ‘দুর্বল লোকদের দোয়ায় তোমাদের সাহায্য করা হয় ও রিজিক দেওয়া হয়।’ (বুখারি, মিশকাত: ৫২৩২)

উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটি স্পষ্ট যে, দুনিয়ার দারিদ্রতার বিনিময়ে মহান আল্লাহ নিজের কাছে গরীবের অবস্থান ধনীদের ঊর্ধ্বে রেখেছেন। আখেরাতেও করা হবে সম্মানিত। সুতরাং দরিদ্র ব্যক্তিদের কখনও অহংকারী হওয়া শোভনীয় নয়। এটি আল্লাহর চরম অসন্তুষ্টির কারণ। আল্লাহ তাআলা মুসিলম উম্মাহর দরিদ্র ও অসহায় শ্রেণিকে নিরহংকার ও বিনয়ী হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর