সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

ইসলামে সুনাগরিকের বৈশিষ্ট্য

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৩ পিএম

শেয়ার করুন:

ইসলামে সুনাগরিকের বৈশিষ্ট্য

ইসলামে একটি রাষ্ট্রের প্রত্যেকটি নাগরিকের কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। যারা তা যথাযথ পালন করবেন, তারাই মূলত সুনাগরিক। ইসলামের আলোকে সুনাগরিকের বৈশিষ্ট্যগুলো নিচে তুলে ধরা হলো। 

দেশপ্রেমিক হওয়া
মাতৃভূমির প্রতি টান থাকা সুনাগরিকের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য। আমাদের প্রিয়নবী (স.)-ও মাতৃভূমিকে ভীষণ ভালোবাসতেন। পবিত্র মক্কা শরিফ থেকে বিদায়ের প্রাক্কালে রাসুল (স.) বলেছিলেন, ‘ভূখণ্ড হিসেবে তুমি কতই না উত্তম, আমার কাছে তুমি কতই না প্রিয়। যদি আমার স্বজাতি আমাকে বের করে না দিত, তবে কিছুতেই আমি অন্যত্র বসবাস করতাম না।’ (তিরমিজি: ৩৯২৬)


বিজ্ঞাপন


রাষ্ট্রের দায়িত্বশীলদের অনুগত হওয়া 
কোরআন-হাদিসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়—এমন যৌক্তিক আইনগুলো মেনে চলা সুনাগরিকের কর্তব্য। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা নির্দেশ পালন করো আল্লাহ, রাসুল ও তোমাদের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাবানদের।’ (সুরা নিসা: ৫৯)
তবে তারা যদি কোনো পাপের নির্দেশ দেয়, আল্লাহর নাফরমানির নির্দেশ দেয়, তখন তাদের অন্ধভাবে অনুসরণ করা যাবে না। রাসুল (স.) বলেছেন, ‘রাষ্ট্রপ্রধানের আনুগত্য ততক্ষণ পর্যন্ত অপরিহার্য, যতক্ষণ সে আল্লাহর অবাধ্যতার আদেশ না করে।’ (সহিহ বুখারি: ২৯৫৫)

রাষ্ট্রীয় সম্পদ হেফাজত করা
রাষ্ট্রীয় সম্পদের নিরাপত্তায় সচেতন থাকা প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব। বিশেষ করে মুসলিম ভূখণ্ডের নিরাপত্তায় সজাগ থাকার ব্যাপারে হাদিসে বিশেষ ফজিলতের বর্ণনা করা হয়েছে। সালমান (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘আমি রাসুল (স.)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় একদিন এবং একরাত সীমান্ত পাহারায় রত থাকে তার জন্য এক মাস সাওম পালন করার এবং (রাত জেগে) ইবাদতের সওয়াব রয়েছে। সে ইন্তেকাল করলেও তার সেই আমল (এর সওয়াব) জারি থাকবে, যা সে করত আর সে সব ফিতনা থেকে রক্ষিত থাকবে, আর তাকে তার রিজিক বরাদ্দ করা হবে।’ (নাসায়ি: ৩১৬৮)

আরও পড়ুন: ইসলামে কথাবার্তায় সংযত হওয়ার নির্দেশ

বিশৃঙ্খলা থেকে দূরে থাকা
সুনাগরিক কখনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে না, কেউ সৃষ্টি করতে চাইলে তাকেও কখনো সহযোগিতা করবে না। কারণ পবিত্র কোরআনে বিশৃঙ্খলাকে হত্যার চেয়েও বেশি জঘন্য পাপ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘ফিতনা (বিশৃঙ্খলা) হত্যার চেয়ে গুরুতর।’ (সুরা বাকারা: ১৯১)


বিজ্ঞাপন


অন্যায়ের প্রতিবাদ করা
ভালো কাজে উদ্বুদ্ধ করা এবং অন্যায়ের প্রতিবাদ করা প্রতিটি মুমিনের দায়িত্ব। এই কাজেই উম্মতের শ্রেষ্ঠত্ব। প্রতিটি সুনাগরিকের উচিত, এই গুণে গুণান্বিত হওয়া। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরাই সর্বোত্তম উম্মত, মানবজাতির কল্যাণের জন্য তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে, তোমরা সৎ কাজে আদেশ করবে ও অসৎ কাজে নিষেধ করবে এবং আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে।’ (সুরা আলে ইমরান: ১১০)

সবার সঙ্গে ভালো আচরণ করা
একজন সুনাগরিকের অন্যতম গুণ হলো বিনয়। মানুষের বড় হওয়া বিনয় ও সদাচারিতার মধ্যে নিহিত। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের সদাচরণের নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো। কোনো কিছুকে তাঁর সঙ্গে শরিক করো না এবং মাতাপিতা, আত্মীয়-স্বজন, এতিম, অভাবগ্রস্ত, নিকট-প্রতিবেশী, দূর-প্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথী, মুসাফির ও তোমাদের দাস-দাসীর সঙ্গে ভালো ব্যবহার করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ দাম্ভিক অহংকারীকে পছন্দ করেন না।’ (সুরা নিসা: ৩৬)

আরও পড়ুন: কেমন ন্যায়বিচারের কথা বলে ইসলাম

ভ্রাতৃত্ব বজায় রাখা
ইসলামে প্রত্যেকের উচিত ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ থাকা। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘মুমিন পরস্পর ভাই ভাই।’ (সুরা হুজরাত: ১০)

অন্যের ব্যথায় ব্যথিত হওয়া
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘সব মুসলমান একটি দেহের মতো; যদি তার চোখ অসুস্থ হয় তাহলে পুরো শরীর অসুস্থ হয়ে যায়; যদি তার মাথা অসুস্থ হয় তাহলে পুরো শরীর অসুস্থ হয়ে যায়।’ (মুসলিম: ৬৭৫৪)

অভাবীর পাশে দাঁড়ানো
ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘ওই ব্যক্তি মুমিন নয়, যে পেট পুরে খায় অথচ তার পাশের প্রতিবেশী না খেয়ে থাকে।’ (আদাবুল মুফরাদ: ১১২)

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর