সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

বৃষ্টি ও বন্যায় যে আমল করবেন

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২১ আগস্ট ২০২৪, ০২:০০ পিএম

শেয়ার করুন:

বৃষ্টি ও বন্যায় যে আমল করবেন

বৃষ্টি সাধারণ অবস্থায় কল্যাণকর হলেও অতিবৃষ্টি মানুষ-পশুপাখি ও অন্যান্য সৃষ্টিকুলের ক্ষতি বয়ে আনে। দীর্ঘসময় বৃষ্টিপাতের কারণে বন্য হয়, আর বন্যা স্থায়ী হলে গৃহপালিত পশু-পাখি, ফসল, বসতবাড়ির ক্ষতি ছাড়াও নানা অসুখ বিসুখ, রাস্তাঘাটের ক্ষতি এবং খাদ্যাভাবে জনজীবন দুর্বিসহ হয়ে পড়ে। এ অবস্থা থেকে তাৎক্ষণিক পরিত্রাণ পেতে কিংবা জলোচ্ছ্বাস থামিয়ে দিতে কোনো দোয়া কোরআন হাদিসের কোথাও বর্ণিত হয়নি; বরং ধৈর্য ও তওবা-ইস্তেগফারের সঙ্গে এই দুঃসময়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি বিপদগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে উৎসাহিত করে ইসলাম। 

অন্যের বিপদে যারা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়, আল্লাহ তাআলা তাদের রহমত করেন। তাদেরকে আল্লাহ দয়া না করে পারেন না। হাদিসে এসেছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তার প্রতি দয়া করেন, যে তার বান্দাদের প্রতি দয়া করে’ (বুখারি: ১৭৩২)। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, মুমিন মুমিনের জন্য ইমারতসদৃশ, যার এক অংশ অন্য অংশকে মজবুত করে। এরপর তিনি (হাতের) আঙুলগুলো (অন্য হাতের) আঙুলে (ফাঁকে) ঢোকালেন। (বুখারি: ৬০২৬)


বিজ্ঞাপন


তবে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসসহ নানান দুর্যোগে আশ্রয় ও যথাযোগ্য ব্যবস্থা নেওয়ার পরও মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করা সুন্নত। যখন প্রবল বৃষ্টি হতো, তখন নবী (স.) এই দোয়া পড়তেন— اللَّهُمَّ حَوَالَيْنَا ولَا عَلَيْنَا، اللَّهُمَّ علَى الآكَامِ والظِّرَابِ، وبُطُونِ الأوْدِيَةِ، ومَنَابِتِ الشَّجَرِ ‘আল্লাহুম্মা হাওয়া-লাইনা, ওয়ালা আলাইনা; আল্লাহুম্মা আলাল আ-কাম ওয়াজ জিরাব ওয়া বুতুনিল আওদিআ; ওয়া মানাবিতিস শাজার।’ অর্থ: হে আল্লাহ! আমাদের আশপাশে বৃষ্টি দিন, আমাদের ওপরে নয়। হে আল্লাহ! পাহাড়-টিলা, খাল-নালা এবং গাছ-উদ্ভিদ গজানোর স্থানগুলোতে বৃষ্টি দিন।’ (বুখারি: ১০১৪)

আরও পড়ুন: যে দোয়া পড়লে সবরকম ক্ষতি থেকে আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখেন

এই দোয়ার সংক্ষিপ্ত অংশ পড়েও দোয়া করা যায় যেমন— اللَّهُمَّ حَوَالَيْنَا وَلاَ عَلَيْنَا `আল্লাহুম্মা হাওয়ালাইনা ওয়ালা আলাইনা’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমাদের থেকে ফিরিয়ে নাও, আমাদের ওপর দিয়ো না।’

আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করেছি যে, লোকজন মেঘ দেখলে বৃষ্টির আশায় আনন্দিত হয়ে থাকে, আর আপনি তা দেখে চিন্তিত হয়ে পড়েন?’ এর জবাবে রাসুল (স.) বলেন, ‘আমি এ ভেবে শঙ্কিত হই যে, বৃষ্টি আমার উম্মতের ওপর আজাব হিসেবে পতিত হয় কি না। কেননা আগের উম্মতদের ওপর এ পদ্ধতিতে (বৃষ্টি বর্ষণের আকারে) আজাব পতিত হয়েছিল। ’ (বুখারি: ৩২০৬; মুসলিম: ৮৯৯; তিরমিজি: ৩৪৪৯)


বিজ্ঞাপন


আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হলে এবং ঝড়ো বাতাস বইলে রাসুলুল্লাহ (স.) এ দোয়া পড়তেন, اللهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَهَا، وَخَيْرَ مَا فِيهَا، وَخَيْرَ مَا أُرْسِلَتْ بِهِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا، وَشَرِّ مَا فِيهَا، وَشَرِّ مَا أُرْسِلَتْ بِهِ ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা খাইরাহা ওয়া খাইরা মা-ফিহা ওয়া খাইরা মা-উরসিলাত বিহি, ওয়া আউজুবিকা মিন শাররিহা ওয়া শাররি মা-ফিহা ওয়া শাররি মা-উরসিলাত বিহি।’ অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট প্রার্থনা করি এই ঝড়ের কল্যাণ, এর মধ্যস্থিত কল্যাণ, এর সঙ্গে প্রেরিত কল্যাণ। আমি আপনার নিকট পানাহ চাই এই ঝড়ের অনিষ্ট থেকে, এর মধ্যস্থিত অনিষ্ট থেকে, এর সঙ্গে প্রেরিত অনিষ্ট থেকে। (বুখারি ও মুসলিম)

আরও পড়ুন: যে দোয়া ১০ বার পড়লে গুনাহ করার ইচ্ছা জাগবে না

পবিত্র কোরআনের বিশেষ দোয়া
رَبَّنَا اکۡشِفۡ عَنَّا الۡعَذَابَ اِنَّا مُؤۡمِنُوۡنَ ‘রাব্বানাকশিফ আন্নাল আজাবা ইন্না মুমিনুন।’ অর্থ: ‘হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের উপর থেকে আপনার শাস্তি প্রত্যাহার করুন, আমরা বিশ্বাস স্থাপন করছি।’ (সুরা দুখান: ১২)

আমরা জানি, বান্দার সীমা লঙ্ঘনের কারণেও জলে-স্থলে বিপদাপদ আপতিত হয়। তবে, মুমিনদের আল্লাহ গজব দেন না, বরং পরীক্ষা করেন এবং একইসঙ্গে নিজেদের শুধরে নেওয়ার সুযোগ দেন এবং গুনাহ ক্ষমা করেন। এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী কৌশল হলো ধৈর্য। এই গুণটি নবীদের। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘..এমন পরিস্থিতিতে যারা ধৈর্য ধারণ করবে, হে নবী! তুমি তাদের জান্নাতে সুখের দিনের সুসংবাদ দাও।’ (সুরা বাকারা: ১৫৫) মহান আল্লাহ আরও বলেন, ‘অতএব আপনি ধৈর্যধারণ করুন, যেমন ধৈর্যধারণ করেছেন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ রাসুলগণ।’ (সুরা আহকাফ: ৩৫)

হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী, যখন কোথাও ভূমিকম্প, সূর্যগ্রহণ, ঝড়ো বাতাস বা বন্যা হয়, তখন সবার উচিত মহান আল্লাহর কাছে তওবা করা, নিরাপত্তার দোয়া করা এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা। এক্ষেত্রে রাসুলুল্লাহ (স.) নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘দ্রুততার সঙ্গে মহান আল্লাহর জিকির করো, তাঁর নিকট তওবা করো।’ (বুখারি: ২/৩০; মুসলিম: ২/৬২৮)

প্রাকৃতিক দুর্যোগ এড়াতে করণীয়
মানুষ আল্লাহ তাআলার সৃষ্টির সেরা জীব। তিনি অযথা শাস্তি দিতে চান না। তাই আল্লাহ তাআলার অসন্তুষ্টি থেকে বাঁচার জন্য আমল পরিশুদ্ধ করার বিকল্প নেই। যে আমলে আল্লাহ খুশি হন, সে আমল বেশি বেশি করতে হবে। নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, জিকির, দান-সদকাসহ নেক আমল করতে হবে। হাদিসে আছে, ‘সদকা আল্লাহর অসন্তুষ্টিকে নিভিয়ে দেয় এবং অপমৃত্যু রোধ করে।’ (সুনানে তিরমিজি: ৬০০)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ঘূর্ণিঝড়, বন্যাসহ সকল প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বিপদাপদ থেকে হেফাজত করুন। সহিহ সুন্নাহ অনুযায়ী দোয়া ও আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর