আল্লাহ তাআলা দোয়া কবুল করতে পছন্দ করেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা আমার কাছে দোয়া করো; আমি তোমাদের দোয়া কবুল করব’ (সূরা মুমিন: ৬০)। ‘নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ অত্যন্ত লাজুক ও দয়ালু; যখন কোনো বান্দা তাঁর নিকট দুহাত উঠিয়ে দোয়া করে, তিনি তার দুহাত শূন্য ফিরিয়ে দিতে লজ্জাবোধ করেন।’ (তিরমিজি: ৩৫৫৬)
দোয়া কবুলের জন্য প্রাথমিকভাবে ৩টি শর্ত মানতে হয়। শর্তগুলো হচ্ছে- ১. গুনাহের কাজের জন্য দোয়া করা যাবে না। ২. আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার দোয়া করা যাবে না। ৩. দোয়ার ফল পেতে তাড়াহুড়া করা যাবে না। (বুখারি: ৬৩৪০; মুসলিম: ৬৮২৯)
বিজ্ঞাপন
শর্ত তিনটি মানলে যেকোনো বিষয়ে দোয়া করার অবকাশ রয়েছে। এমনকি খুব ছোট বিষয়েও দোয়া করা যায়। তবে, আদব মানা জরুরি। চিন্তা করতে হবে, যার কাছে দোয়া করছেন তিনি কতটা প্রতাপশালী ও ক্ষমতাবান! তাঁর কাছে তাঁরই অপছন্দের বিষয় নিয়ে হাজির হলে আদবের বরখেলাফ তো হবেই, দোয়াও কবুল না হওয়ার আশঙ্কা বেশি।
আরও পড়ুন: বান্দার একটি দোয়াও বিফলে যায় না
তাই প্রিয় মানুষকে কামনা করার পরিবর্তে যোগ্য ও কল্যাণময় স্ত্রী/স্বামী কামনা করে আল্লাহর কাছে দোয়া করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন আলেমরা। কেননা, মহান প্রভু আপনার ধারণার চেয়েও উত্তম জীবনসঙ্গী দিতে পারেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘পক্ষান্তরে তোমাদের কাছে হয়ত কোনো বিষয় পছন্দসই নয়, অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর হয়তবা কোনো বিষয় তোমাদের কাছে পছন্দনীয় অথচ তোমাদের জন্যে অকল্যাণকর। বস্তুত আল্লাহই জানেন, তোমরা জানো না।’(সুরা বাকারা: ২১৬)
বিজ্ঞাপন
এরপরও আলেমদের মতে, নির্দিষ্ট কাউকে বিয়ে করতে এভাবে দোয়া করা যায়— ‘হে আল্লাহ! যদি সে আমার জন্য কল্যাণকর হয়, তাহলে তাকে আমার জন্য জীবনসঙ্গী হিসেবে কবুল করুন।’
প্রখ্যাত ইসলামিক স্কলার আল্লামা ইবনুল জাওজি (রহ.) বলেন, ‘আল্লাহ তাআলার কাছে কোনো কিছু নির্দিষ্ট করে চাওয়া থেকে বিরত থাকবে। তবে (কোনো কিছু নির্দিষ্ট করে চাইলে) কল্যাণের দোয়া যুক্ত থাকলে অসুবিধা নেই। কেননা, অনেক সময় বহু পার্থিব কাঙ্ক্ষিত বস্তু অর্জন, ভবিষ্যতে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। (সায়দুল খাতির: ৩৫২)
আরও পড়ুন: কোরআনে বর্ণিত নবী-রাসুলদের দোয়া
উত্তম ও কল্যাণকর স্ত্রী পাওয়ার জন্য পবিত্র কোরআনে বর্ণিত মুসা (আ.)-এর দোয়াটি পাঠ করা যায়। যে দোয়া পড়ার পর আল্লাহ তাআলা তাঁর জন্য থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন; পাশাপাশি উত্তম জীবনসঙ্গিনীও দান করেছেন। দোয়াটি হলো— ﺭَﺏِّ ﺇِﻧِّﻲ ﻟِﻤَﺎ ﺃَﻧْﺰَﻟْﺖَ ﺇِﻟَﻲَّ ﻣِﻦْ ﺧَﻴْﺮٍ ﻓَﻘِﻴﺮٌ উচ্চারণ: রাব্বি ইন্নি লিমা- আনজালতা ইলাইয়া মিন খাইরিন ফাকির। অর্থ: ‘হে আমার পালনকর্তা, তুমি আমার প্রতি যে অনুগ্রহ পাঠাবে, আমি তার মুখাপেক্ষী।’ (সুরা কাসাস: ২৪)
উত্তম জীবনসঙ্গিনী পেতে কোরআনে বর্ণিত আরও একটি দোয়া করা যায়। সেটি হলো—ﺭَﺑَّﻨَﺎ ﻫَﺐْ ﻟَﻨَﺎ ﻣِﻦْ ﺃَﺯْﻭَﺍﺟِﻨَﺎ ﻭَﺫُﺭِّﻳَّﺎﺗِﻦَﺍ ﻗُﺮَّﺓَ ﺃَﻋْﻴُﻦٍ ﻭَﺍﺟْﻌَﻠْﻨَﺎ ﻟِﻠْﻤُﺘَّﻘِﻴﻦَ ﺇِﻣَﺎﻣًﺎ ‘উচ্চারণ: রাব্বানা-হাবলানা-মিন আজওয়া-জিনা- ওয়া যুররিইয়া-তিনা, কুররাতা আ‘ইউনিওঁ, ওয়াজ‘আলনা-লিলমুত্তাকিনা ইমা-মা-।’ অর্থ: ‘হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের স্ত্রীদের পক্ষ থেকে এবং আমাদের সন্তানের পক্ষ থেকে আমাদের জন্যে চোখের শীতলতা দান করো এবং আমাদের আল্লাহভীরুদের জন্য আদর্শস্বরূপ করো।’ (সুরা ফুরকান: ৭৪)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম অবিবাহিত যুবক-যুবতীদের উত্তম সঙ্গী দান করুন, মনের কল্যাণকর আশা পূরণ করুন। আমিন।

