দোয়া একটি স্বতন্ত্র ইবাদত। হাদিস শরিফে দোয়াকে ইবাদতের মূল বলা হয়েছে। আরও বলা হয়েছে, ‘মহান আল্লাহর কাছে দোয়ার চেয়ে অধিক সম্মানিত কোনো কিছু নেই।’ (ইবনে মাজাহ: ৩৮২৯) দোয়ার জন্য সময়ের কোনো সীমাবদ্ধতা বা বাধ্যবাধকতা নেই। যেকোনো সময় দোয়া করা যাবে।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন- ادْعُوْنِیْۤ اَسْتَجِبْ لَكُمْ ‘তোমরা আমাকে ডাকো আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিবো।’ (সুরা গাফির: ৬০)
বিজ্ঞাপন
বিখ্যাত তাবেয়ি আতা ইবনে আবি রাবাহ (রহ) বলেন, যখন উল্লেখিত আয়াতটি নাজিল হলো তখন নবী কারিম (স.)-কে লোকেরা জিজ্ঞাসা করল- আমরা কোন সময়টাতে দোয়া করব তা যদি জানতে পারতাম, তখন সুরা বাকারার এই আয়াতটি وَ اِذَا سَاَلَكَ عِبَادِیْ عَنِّیْ فَاِنِّیْ قَرِیْبٌ ؕ اُجِیْبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ اِذَا دَعَانِ
নাজিল হয়। যেখানে সুস্পষ্ট বলা আছে যে, বান্দা যখনই আল্লাহ তাআলাকে ডাকে, দোয়া করে তখনই তিনি তার ডাকে সাড়া দিয়ে থাকেন এবং দোয়া কবুল করে থাকেন।
তাই আছর কিংবা মাগরিবের ওয়াক্ত নয়, বরং কোনো ব্যক্তি যেকোনো সময় দোয়া-মুনাজাত করতে পারে। ইখলাসের সঙ্গে আশা নিয়ে আল্লাহর হামদ ও নবীজির প্রতি দরুদ পড়ে দোয়া করলে কবুল না হওয়ার প্রশ্নই আসে না। মহান আল্লাহ দোয়া কবুল করতেই ভালোবাসেন। এক হাদিসে এসেছে, ‘নিশ্চয় তোমাদের মহান প্রভু চিরঞ্জীব ও অতি দয়ালু। যখন তাঁর কোনো বান্দা তাঁর প্রতি হাত উঠায়, তখন তিনি খালি হাতে ফিরিয়ে দিতে লজ্জাবোধ করেন।’ (সুনানে আবি দাউদ: ১৩২০)
আরও পড়ুন
বান্দা যেভাবে চাইলে আল্লাহ খুশি হন
সুন্দর ও গুরুত্বপূর্ণ কিছু ছোট দোয়া
বিজ্ঞাপন
তবে হ্যাঁ, আছর থেকে মাগরিবের মধ্যবর্তী সময়টা তাসবিহ-তাহলিল ও জিকিরের জন্য উপযুক্ত সময়। একাধিক আয়াতে এই সময়ের বিশেষত্ব ফুটে উঠেছে। এক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন- وَ اصْبِرْ نَفْسَكَ مَعَ الَّذِیْنَ یَدْعُوْنَ رَبَّهُمْ بِالْغَدٰوةِ وَ الْعَشِیِّ یُرِیْدُوْنَ وَجْهَهٗ ‘আর আপনি নিজেকে তাদের সঙ্গে সংলিপ্ত রাখুন যারা তাদের রবকে সকাল ও সন্ধ্যায় তাঁর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ডাকে।’ (সুরা কাহাফ: ২৮)
উক্ত আয়াতের তাফসিরে আল্লামা ইবনে কাসির (রহ) বলেন, অর্থাৎ যারা সকাল সন্ধ্যায় আল্লাহ তাআলার জিকির-আজকার, তাসবিহ-তাহমিদ ও তাহলিল করে এবং তার বড়ত্ব বর্ণনা করে ও তার কাছে দোয়া চায়। (তাফসিরে ইবনে কাসির: ৩/১৩১)
আবু উমামা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ফজরের পর থেকে সূর্যোদোয় পর্যন্ত আল্লাহর জিকির, তাসবিহ-তাহলিল ও তাকবির-তাহমিদ করা আমার নিকট ইসমাঈল (আ.)-এর বংশধর থেকে দুই বা ততোধিক গোলাম আজাদ করার চেয়ে অধিক প্রিয় এবং আছরের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত (এরূপ করাটা) ইসমাঈল (আ.)-এর বংশধর থেকে চারজন গোলাম আজাদ করা অপেক্ষা অধিক প্রিয়। (আলমুজামুল কাবির তাবারানি: ৮০২৮; মুসনাদে আহমদ: ২২১৮৫; মাজমাউজ জাওয়ায়েদ: ১০/১৩২)
অতএব, দোয়া মোনাজাত করা কোনো নির্ধারিত সময়ের আমল নয়; বরং যেকোনো সময়ে করা যাবে এবং যেকোনো সময়ের মতো আছর ও মাগরিবের মধ্যবর্তী সময়েও করা যাবে।

