যারা অবৈধ উপায়ে পণ্যের দাম বাড়িয়ে মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে, তাদের ব্যাপারে ইসলাম খুব কঠোর। ভয়ঙ্কর শাস্তি নির্ধারিত করা আছে তাদের জন্য। দ্রব্যমূল্য বাড়ানোর অন্যতম উপায় মজুদদারি। অসাধু ব্যবসায়ীরা মূলত পণ্য মজুদ করার মাধ্যমেই কৃত্রিম সংকট তৈরি করেন। ফলে ক্রেতারা সংকটে পড়েন।
অথচ অধিক মুনাফার জন্য পণ্য মজুদ করা ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। হাদিস অনুযায়ী, শুধু পরকালে নয়, ইহকালেও আল্লাহর আজাব থেকে রেহাই দেওয়া হবে না তাদের। মহানবী (স.) বলেন, ‘কেউ যদি খাদ্য গুদামজাত করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে, আল্লাহ তাকে দুরারোগ্য ব্যাধি ও দারিদ্র্য দ্বারা শাস্তি দেন।’(ইবনে মাজাহ: ২২৩৮)
বিজ্ঞাপন
হাদিসে বলা হচ্ছে, অবৈধ উপায়ে পণ্যের দাম বাড়ালে দুরারোগ্য ব্যাধি হবেই। দুরারোগ্য ব্যাধি বলতে সে রোগকেই বোঝানো হয়, যে রোগের এখন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ কার্যকর চিকিৎসা আবিষ্কৃত হয়নি। তাহলে বোঝা যাচ্ছে, অবৈধভাবে দাম বাড়ানো ব্যবসায়ীর যে অসুখটা হবে, বর্তমান কোনো উন্নত চিকিৎসায়ও ওই অসুখ সারবে না। আল্লাহ আমাদের সচেতন হওয়ার তাওফিক দান করুন। অতীতের ভুল-ত্রুটি থেকে তাওবা করার তাওফিক দান করুন।
আরও পড়ুন: অবৈধ সম্পর্ক থাকাবস্থায় ইবাদত কবুল হবে?
ভোক্তাদের জিম্মি করে বিত্তশালী হওয়ার মধ্যে কোনো কল্যাণ নেই; বরং ক্ষতি আর ক্ষতি। অবৈধ উপার্জন একদিকে জাহান্নামে যাওয়ার কারণ, অন্যদিকে দুনিয়ার জীবনও অভিশপ্ত হবে। উপরন্তু উপার্জন হারাম হওয়ায় তার নামাজ, রোজা, হজসহ কোনো নেক আমলই কবুল হবে না।
হাদিসে এসেছে, আল্লাহ তার প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে যান। তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ৪০ দিন খাদ্য মজুদ রাখল— সে আল্লাহর কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল, আল্লাহ দূরে গেলেন তার কাছ থেকে।’ (মুসনাদে আহমদ: ৮/৪৮১) অন্য হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি ৪০ দিনের খাবার মজুদ রাখে, সে আল্লাহ-প্রদত্ত নিরাপত্তা থেকে বেরিয়ে যায়।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা: ২০৩৯৬)
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: হারাম টাকা দান করলে সওয়াব হবে?
অন্যদিকে, মজুদদারি না করে স্বাভাবিক ব্যবসা করলে, তা ইবাদতে পরিণত হবে। হালাল ব্যবসা থেকে উপার্জনে বরকত রয়েছে এবং অপ্রত্যাশিত রিজিক দেওয়া হয় তাকে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘খাঁটি ব্যবসায়ী রিজিকপ্রাপ্ত হয়, আর পণ্য মজুদকারী অভিশপ্ত হয়।’(ইবনে মাজাহ: ২/৭২৮)
হাশরের ময়দানেও হালাল ব্যবসায়ীকে পুরস্কৃত করা হবে; নবীগণের সঙ্গী হওয়ার পরম সৌভাগ্য লাভ করবেন। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন—সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত ব্যবসায়ীদের হাশর নবী, সিদ্দিক ও শহীদগণের সঙ্গে হবে। (তিরমিজি: ৩/৫১৫)
সুতরাং ব্যবসায়িদের উচিত ব্যবসায় অবৈধ উপায় বন্ধ করা, অমানবিকতা বন্ধ করে ভ্রাতৃত্ববোধকে সুসংহত করা এবং বিগত গুনাহের জন্য আল্লাহর কাছে তওবা করা। উপরন্তু নিজেকে জাহান্নামের কঠিন শাস্তি থেকে রক্ষা করা। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সকল ব্যবসায়িদের নিজ নিজ ব্যবসাকে ইবাদতে পরিণত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
