মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

সরলতা আল্লাহর পছন্দের গুণ

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩ মে ২০২৪, ০৭:৩০ পিএম

শেয়ার করুন:

সরলতা আল্লাহর পছন্দের গুণ

সহজ-সরল মানুষকে আল্লাহ তাআলা পছন্দ করেন। সহজ-সরল বলতে মূলত ভালো মানুষকেই বোঝানো হয়। যারা ব্যক্তিত্বসম্পন্ন, ভদ্র। সহজ নিয়মে বাঁচতে চান, কারো ক্ষতি করেন না। সত্যকে গ্রহণ করেন এবং যথাসম্ভব জটিলতা এড়িয়ে চলেন, মনে অহংকার নেই। তারা অতি সাধারণ, সৎ ও খাঁটি হয়ে থাকেন। তাদের লুকানো উদ্দেশ্য থাকে না, কোনো দুশমনি থাকে না। মুখে যা বলেন, মনেও তা-ই। তাই তাদের আশেপাশে যারা থাকেন, তারা নিরাপদ থাকেন। কারণ তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হয় না।

এমন মানুষগুলোকে মহানবী (স.) বিশুদ্ধ অন্তরের অধিকারী বলে অভিহিত করেছেন এবং তাদের সর্বোত্তম মানুষ বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন। আবদুল্লাহ বিন আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.)-কে বলা হলো, কোন ব্যক্তি সর্বোত্তম? তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক বিশুদ্ধ অন্তরের অধিকারী সত্যভাষী ব্যক্তি।’ সাহাবিরা বলেন, সত্যভাষীকে তো আমরা চিনি; কিন্তু বিশুদ্ধ অন্তরের ব্যক্তি কে? তিনি বলেন, ‘সে হলো পূত-পবিত্র নিষ্কলুষ চরিত্রের মানুষ, যার কোনো গুনাহ নেই, দুশমনি, হিংসা-বিদ্বেষ, আত্মঅহমিকা ও কপটতা নেই।’ (ইবনে মাজাহ: ৪২১৬)


বিজ্ঞাপন


অসাধারণ এই বৈশিষ্ট্যটি মূলত মুমিনের। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘মুমিন ব্যক্তি সরল ও ভদ্র প্রকৃতির হয়ে থাকে; কিন্তু পাপিষ্ঠ ব্যক্তি ধোঁকাবাজ ও নির্লজ্জ হয়।’ (আবু দাউদ: ৪৭৯০)

আরও পড়ুন: অহংকার পতনের মূল সম্পর্কে হাদিস-কোরআন

সহজ-সরল মানুষগুলো আল্লাহ তাআলার কাছে বিশেষ মর্যাদার অধিকারী। আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘আমি কি তোমাদেরকে জানিয়ে দিব না, কোন ব্যক্তির জন্য জাহান্নাম হারাম এবং জাহান্নামের জন্য কোন ব্যক্তি হারাম? যে ব্যক্তি মানুষের কাছাকাছি, সহজ-সরল, নম্রভাষী ও সদাচারী।’ (তিরমিজি: ২৪৮৮)

অন্যত্র রাসুল (স.) বলেছেন, ‘আমি কি তোমাদের জান্নাতি মানুষের সংবাদ দেব না? আর তারা হলো সরলতার দরুণ দুর্বল প্রকৃতির লোক। মানুষ তাদের হীন, তুচ্ছ ও দুর্বল মনে করে। তারা কোনো বিষয়ে কসম করলে আল্লাহ তা সত্যে পরিণত করেন। রাসুল (স.) আরো বলেন, আমি কি তোমাদের জাহান্নামিদের সংবাদ দেব না? আর তারা হলো প্রত্যেক অনর্থক কথা নিয়ে ঝগড়াকারী বদমেজাজি ও অহংকারী। ’ (মুসলিম, মেশকাত: ৫১০৬)


বিজ্ঞাপন


সহজ-সরল মানুষগুলো সাধারণত হিংসা থেকে মুক্ত থাকেন। আর হিংসা-বিদ্বেষ না থাকা জান্নাতিদের বৈশিষ্ট্য। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আমি তাদের অন্তর থেকে হিংসা-বিদ্বেষ বের করে ফেলব, তারা সেখানে ভাই ভাই হয়ে আসনে মুখোমুখি বসবে।’ (সুরা হিজর: ৪৭) রাসুল (স.) বলেন, ‘তোমরা (সেখানে) একে অন্যের সঙ্গে হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ করবে না। পরস্পর শত্রুতা করবে না। পারস্পরিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করবে না।’ তোমরা আল্লাহর বান্দা হিসেবে ভাই ভাই হয়ে থাকবে।’ (সহিহ মুসলিম: ৬৪২৪)

আরও পড়ুন: ইসলামে পরনিন্দার আসর বর্জনের নির্দেশ

সহজ-সরল মানুষের আরেকটি দিক হচ্ছে তারা মানুষের ওপর সহজে রাগ করে না। ক্ষমতাবান হলেও তারা সামান্য ব্যাপারে ক্রোধান্বিত হন না। ‘আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য বান্দার ক্রোধ সংবরণে যে মহান প্রতিদান রয়েছে, তা অন্যকিছুতে নেই।’ (ইবনে মাজাহ: ৪১৮৯) হাদিসে আরও এসেছে, ‘যে ব্যক্তি নিজের ক্রোধ চরিতার্থ করার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তা সংবরণ করে, আল্লাহ তাকে কেয়ামতের দিন সমগ্র সৃষ্টির সামনে ডেকে আনবেন এবং জান্নাতের যেকোনো হুর নিজের ইচ্ছামতো বেছে নেওয়ার অধিকার দান করবেন।’ (ইবনে মাজাহ: ৪১৮৬)

তাই সম্মানিত সালফে সালেহিনরা সহজ-সরল জীবনকে বেছে নিয়েছিলেন এবং মানুষকেও সরলতার তাগিদ দিতেন। কারণ সরলতার বিপরীত বিষয়গুলো যেমন- হিংসা, লোভ, অহংকার, ঈর্ষা ইত্যাদি মানুষের নেকআমল বরবাদ করে এবং জান্নাতে প্রবেশে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এজন্যই পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আমি তাদের অন্তর থেকে ঈর্ষা দূর করব, তাদের পাদদেশে প্রবাহিত হবে নদী।’ (সুরা আরাফ: ৪৩)

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে অন্তরের ব্যাধি থেকে মুক্ত হওয়ার তাওফিক দান করুন। সহজ-সরল জীবন যাপনের তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর