রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

জুমার দিন বিকেলে যা করতেন মুসলিম মনীষীরা

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩ মে ২০২৪, ০৪:১১ পিএম

শেয়ার করুন:

জুমার দিন বিকেলে যা করতেন মুসলিম মনীষিরা

মুসলমানদের জন্য জুমার দিন হচ্ছে সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন। এই দিনের ফজিলত সম্পর্কে বহু হাদিস বর্ণিত হয়েছে। জুমার দিনের মর্যাদার বিশেষ একটি কারণ হলো- এদিন দোয়া কবুল করা হয়। আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, জুমাবারে এমন একটি সময় আছে, যেটাতে বান্দা আল্লাহর কাছে কোনো দোয়া করলে আল্লাহ তাকে তা দিয়ে থাকেন। (মুসান্নাফ: ৫৫৮৮)

দোয়া কবুলের সময় নিয়ে মোটামুটি দুটি অভিমতই পাওয়া যায়। অধিকাংশের মতে সময়টি হলো- আছরের নামাজের পর থেকে সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত। আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.), আবু হুরায়রা (রা.), আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.), কাব আহবার (রহ), সাঈদ ইবনে জুবায়ের (রহ)., মুজাহিদ (রহ) ও তাউস (রহ) প্রমুখ এই মত গ্রহণ করেছেন। (দ্রষ্টব্য: মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা:৫৫০৩-৫৫০৫, ৫৫১৪; আততামহিদ: ১৯/২০, ২৩-২৪; আল-ইস্তিজকার: ৫/৮২, ৮৬, ৯৭)


বিজ্ঞাপন


আরেকটি মত হলো—খতিব খুতবা দেওয়ার জন্য মিম্বরে উঠার পর থেকে নামাজ শেষ করা পর্যন্ত। আবু মুসা আশআরি (রা.), আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.), আবু বুরদা (রহ) প্রমুখ এই মতের প্রবক্তা। (দ্রষ্টব্য: মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা: ৫৫০৬, ৫৫০৭; আততামহিদ, ইবনে আবদুল বার: ১৯/২২)

দোয়া কুবলের সময়টি যেভাবে কাটাবেন পূর্ববর্তীরা
জুমার দিন দোয়া কবুলের সময়টি নষ্ট করতেন না পূর্ববর্তী মুসলিম মনীষিরা। এটি বুদ্ধিমানের কাজও নয়। বিভিন্ন বর্ণনায় পাওয়া যায়, সলফে সালেহিনরা জুমার দিনের আছরের পরের সময়টিকে খুবই গুরুত্ব দিতেন এবং সন্ধ্যা পর্যন্ত পুরোটা সময় দোয়া-জিকিরে মগ্ন থাকতেন। অনেকের জীবনীতে দেখা যায়, তারা এই সময়টিতে কারো সঙ্গে কথাও বলতেন না। এদিক-ওদিক তাকাতেন না।

আরও পড়ুন: জুমার দিন যেসব আমল করতে বলেছেন নবীজি

সালেম (রহ) বলেন- وَكَانَ سَعِيدٌ إِذَا صَلّى الْعَصْرَ لَمْ يُكَلِّمْ أَحَدًا إِلَى غُرُوبِ الشَمْسِ ‘সাঈদ ইবনে জুবায়ের (রহ) জুমার দিন আছরের নামাজের পর সূর্যাস্ত পর্যন্ত (দোয়া-জিকিরে মগ্ন থাকতেন) কারো সাথে কথা বলতেন না। (আততামহিদ, ইবনে আবদুল বার: ১৯/২৩-২৪; আল-ইস্তিজকার, ইবনে আবদুল বার: ৫/৮৬-৮৭)


বিজ্ঞাপন


লাইছ ইবনে আবি সুলাইম (রহ) বলেন- وَكَانَ طَاوُسٌ إِذَا صَلّى الْعَصْرَ لَا يُكَلِّمُ أَحَدًا وَلَا يَلْتَفِتُ، مَشْغُولًا بِالدّعَاءِ وَالذِّكْرِ حَتّى تَغِيبَ الشّمْسُ ‘তাউস (রহ) (জুমার দিন) আছরের পর কারো সাথে কথা বলতেন না এবং এদিক ওদিক তাকাতেন না। সূর্যাস্ত পর্যন্ত দোয়া ও জিকিরে মশগুল থাকতেন। (আল-ইস্তিজকার: ৫/৯৭; আততামহিদ: ২৩/৪৬)

পরবর্তী বুজুর্গরাও জুমার দিনের আছরের সময়টিকে খুব গুরুত্ব দিতেন এবং মাগরিব পর্যন্ত দোয়া ও জিকিরে মগ্ন থাকতেন। জুমাবারের আছরের পরের স্বাভাবিক কাজ-কর্মগুলো তারা মাগরিবের পরে করতেন।

অতএব, জুমার দিনের গুরুত্বপূর্ণ সময়টি অবহেলায় নষ্ট করা উচিত হবে না। অধিকাংশ আলেম যেহেতু আছরের পরের সময়টির কথা বলেছেন, তাই আমাদের উচিত হবে সেই সময়টিকে গুরুত্ব দেওয়া ও কাজে লাগানো। 

আরও পড়ুন: জুমার দিন অন্তত ৩টি আমল যেন ছুটে না যায়

জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (স.) বলেন, ‘জুমার দিনের বারো ঘণ্টার মধ্যে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে যদি কোনো মুসলিম এ সময়ে আল্লাহর কাছে কিছু প্রার্থনা করে, তাহলে মহান ও সর্বশক্তিমান আল্লাহ তাকে দান করেন। এ মুহূর্তটি তোমরা আছরের শেষ সময়ে অনুসন্ধান করো।’ (আবু দাউদ: ১০৪৮)

আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.) বর্ণনা করেন, শুক্রবারে আছরের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত দোয়া কবুল হয়। বিখ্যাত সিরাতগ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে, জুমার দিন আছরের নামাজ আদায়ের পর দোয়া কবুল হয়। (জাদুল মাআদ: ২/৩৯৪)

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে জুমার দিনকে কাজে লাগানোর তাওফিক দান করুন। দোয়া কবুলের সময়ে দোয়া-জিকিরে মশগুল থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর