হজের বিধান, ফজিলত ও না করার পরিণাম

হজ আল্লাহর ফরজ বিধান। ইরশাদ হয়েছে, ‘প্রত্যেক সামর্থ্যবান মানুষের ওপর আল্লাহর জন্য বায়তুল্লাহর হজ করা ফরজ’ (সুরা আলে ইমরান: ৯৭)।  রাসুল (স.) বলেন, ‘লোকসকল! আল্লাহ তাআলা তোমাদের ওপর হজ ফরজ করেছেন।’ আকরা ইবনে হাবিস (রা.) দাঁড়িয়ে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! এটা কি প্রত্যেক বছর ফরজ?’ উত্তরে রাসুল (স.) বললেন—

যাদের ওপর হজ ফরজ, যত দ্রুত সম্ভব হজ আদায় করা উত্তম। যেখানে মানুষের জীবন-মরণের এক সেকেন্ডের নিশ্চয়তা নেই, সেখানে এক বছর অনেক দীর্ঘ সময়। তাই রাসুল (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি হজ করার ইচ্ছে করেছে, সে যেন তাড়াতাড়ি তা করে নেয়।’ (সুনানে আবু দাউদ: ১৭৩২)

কার ওপর হজ ফরজ?

পাঁচটি শর্তসাপেক্ষে হজ ফরজ। ১) মুসলিম হওয়া ২) আকল থাকা বা বিবেকবান হওয়া অর্থাৎ পাগল না হওয়া ৩) বালেগ বা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া ৪) আজাদ বা স্বাধীন হওয়া অর্থাৎ কারো গোলাম না হওয়া এবং ৫) দৈহিক ও আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান হওয়া। তবে মহিলাদের ক্ষেত্রে আরেকটি শর্ত যুক্ত হবে, সেটি হলো- সঙ্গে ‘মাহরাম’ (যেসব পুরুষের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাত জায়েজ) থাকা।

স্মরণ রাখতে হবে, জাকাত ফরজ না হয়েও কারো ওপর হজ ফরজ হতে পারে। কেননা হজ ও জাকাতের মধ্যে বিশেষ পার্থক্য রয়েছে। যেমন, জাকাতের সম্পর্ক নির্ধারিত নিসাবের সঙ্গে। হজের সম্পর্ক মক্কায় আসা-যাওয়ার খরচের সঙ্গে।

মুসলিম সমাজে একটি ভুল ধারণা প্রচলিত আছে, সেটি হলো- আগে মাতা-পিতার হজ করাবে, পরে নিজের কথা চিন্তা করবে; এটি সঠিক নয়, বরং সামর্থ্য থাকলে তাঁদের নিয়ে একসঙ্গে হজ করবে। অন্যথায় আগে নিজের ফরজ আদায় করবে। (রহিমিয়া: ৮/২৮২)

ইসলামে হজ সর্বোত্তম আমল

যে কাজে কষ্ট বেশি, তার সওয়াব ও ফজিলত তত বেশি। তাই রাসুল (স.)-এর প্রতি ঈমান আনার পর জিহাদ ও হজকে সর্বোত্তম আমল বলা হয়েছে। একবার রাসুল (স.)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, ‘সর্বোত্তম আমল কোনটি?’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ঈমান আনা।’ প্রশ্ন করা হলো, ‘তারপর কোনটি?’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা।’ আবার প্রশ্ন করা হলো, ‘এরপর কোনটি?’ তিনি বললেন, ‘হজে মাবরুর তথা মকবুল হজ।’ (বুখারি: ১৫১৯)।

হজ নিষ্পাপ হওয়ার মাধ্যম

ওমরা ও হজ দারিদ্র ধ্বংস করে

রাসুল (স.) বলেন, ‘তোমরা হজ-ওমরা সঙ্গে সঙ্গে করো। কেননা, এ দুটি দারিদ্র্য ও গোনাহ এভাবে দূর করে, যেভাবে হাঁপর লোহা ও সোনা-রুপার ময়লা দূর করে। আর মকবুল হজের বিনিময় জান্নাত’ (সুনানে ইবনে মাজাহ: ২৮৮৭)

হজের বিনিময় জান্নাত

আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন—

হজ না করার পরিণাম

সামর্থ থাকার পরও হজ না করার পরিণাম ভয়াবহ। ফরজ হজ ত্যাগ করলে ইহুদি-নাসারার মতো মৃত্যু হবে বলে হাদিসে সতর্ক করা হয়েছে। ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) বলেন-

আর কেউ যদি হজ অস্বীকার করে বা কোনো ধরনের অবহেলা প্রদর্শন করে তবে সে আল্লাহর জিম্মার বাইরে বলে বিবেচিত হবে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-

এছাড়াও হাদিসে কুদসিতে মহান আল্লাহ তায়ালা হজ না করার পরিণতি সম্পর্কে বলেছেন, ‘যে বান্দাকে আমি দৈহিক সুস্থতা দিয়েছি এবং আর্থিক প্রাচুর্য দান করেছি, অতঃপর (গড়িমসি করে) তার পাঁচ বছর অতিবাহিত হয়ে যায় অথচ আমার দিকে (হজব্রত পালন করতে) আগমন করে না, সে অবশ্যই বঞ্চিত।’ (ইবনে হিব্বান: ৩৭০৩)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সামর্থ্যবানদের হজের গুরুত্ব সম্পর্কে সঠিক উপলব্ধি দান করুন। আর্থিকভাবে অক্ষম হজপ্রত্যাশীদের সক্ষমতা দান করুন এবং মকবুল হজ নসিব করুন। আমিন।

হজ্জের গুরুত্ব ও ফজিলত, হজ্জের সামাজিক গুরুত্ব, ওমরা হজের ফজিলত, হজ্জ সম্পর্কে কোরআনের আয়াত, হজ্জের ইতিহাস, হজ্জ না করার শাস্তি, হজ্জের ফরজ কয়টি, হজের গুরুত্ব,