আল্লাহ তাআলা মানুষ সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদত করার জন্য। বিষয়টি পবিত্র কোরআনে এসেছে এভাবে— وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ ‘আমি মানুষ ও জিন সৃষ্টি করেছি কেবল আমার ইবাদত করার জন্য।’ (সুরা জারিয়াত: ৫৬)
তাই মুমিন বান্দার উচিত তাঁর প্রত্যেক কাজকে সুন্নাহ অনুযায়ী করার মাধ্যমে নেক আমলে পরিণত করা। এছাড়াও চাইলে জিকির-আজকারে পূণ্যময় করে নেওয়া যায় কর্মব্যস্ত সারাটি দিন। হাদিস অনুযায়ী, জান্নাতে যাওয়ার পরও একজন মুমিন জিকিরবিহীন অহেতুক অতিবাহিত সময়টুকুর জন্য আফসোস করবে। (আত-তারগিব ওয়াত তারহিব: ৪৯৮৬)
বিজ্ঞাপন
চাইলে খুব সহজে ব্যস্ত সময়কেও কল্যাণময় করা যায়। সেটি কীভাবে, তা দেখে নেওয়া যাক। কর্মব্যস্ততার বাঁকে বাঁকে সহজসাধ্য ইবাদতগুলো হলো—
১) দোয়া করা
দোয়ার মাধ্যমে যাবতীয় সমস্যা আল্লাহর কাছে পেশ করা। এটি একটি পরীক্ষিত আমল। বিশেষ করে সফররত অবস্থায় আল্লাহ তাআলা কারো হাত খালি ফেরান না। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (স.) বলেন, তিন ব্যক্তির দোয়া নিঃসন্দেহে কবুল হয়, (এক) পিতা-মাতার দোয়া, (দুই) মুসাফিরের দোয়া, (তিন) মজলুমের দোয়া। (আবু দাউদ: ১৫৩৬)
২) জিকির করা
বিজ্ঞাপন
অসংখ্য আয়াত ও হাদিসে জিকির ও ইস্তেগফারের বিশেষ ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। আবদুল্লাহ ইবনে বুসর (রা.) থেকে বর্ণিত, এক লোক বলল, হে আল্লাহর রাসুল, আমার জন্য ইসলামের বিষয়াদি অতিরিক্ত হয়ে গেছে। সুতরাং আমাকে এমন একটি বিষয় বলুন, যা আমি শক্তভাবে আঁকড়ে থাকতে পারি। তিনি বলেন, সর্বদা তোমার জিহ্বা যেন আল্লাহ তাআলার জিকির দ্বারা সজীব ও প্রাণবন্ত থাকে। (সুনানে তিরমিজি: ৩৩৭৫)
৩) তেলাওয়াত করা
নফল ইবাদতের মধ্যে সর্বোত্তম ইবাদত হলো কোরআন তেলাওয়াত। আবদুল্লাহ ইবনে মুগাফফাল (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (স.) উষ্ট্রীর পিঠে অথবা উটের পিঠে আরোহিত অবস্থায় যখন উটটি চলছিল, তখন আমি তিলাওয়াত করতে দেখেছি। তিনি ‘সুরা ফাতহ’ বা ‘সুরা ফাতহ’-এর অংশবিশেষ অত্যন্ত নরম এবং মধুর ও ছন্দোময় সুরে পাঠ করছিলেন। (সহিহ বুখারি: ৫০৪৭)
৪) তেলাওয়াত শোনা
আমর ইবনে মুররা (রা.) বলেন, নবী (স.) আমাকে বলেন, আমার কাছে কোরআন পাঠ করো। আমি বললাম, আমি আপনার কাছে পাঠ করব? অথচ আপনার কাছেই তা অবতীর্ণ হয়েছে। তিনি বললেন, অন্যের মুখ থেকে শুনতে আমি পছন্দ করি। এরপর আমি তাঁর কাছে সুরা ‘নিসা’ পাঠ করলাম। যখন আমি এই আয়াত পাঠ করলাম, অর্থ: ‘আর তখন কী অবস্থা দাঁড়াবে, যখন আমি ডেকে আনব প্রতিটি উম্মতের মধ্য থেকে অবস্থা বর্ণনাকারী এবং আপনাকে ডাকব তাদের ওপর অবস্থা বর্ণনাকারীরূপে।’—এ পর্যন্ত পাঠ করলাম, তিনি বললেন, থামো, থামো। তখন তাঁর দুচোখ থেকে টপ টপ করে অশ্রু ঝরছিল। (সহিহ বুখারি: ৪৫৮২)
৫) দাওয়াত দেওয়া ও কল্যাণকর জ্ঞানচর্চা করা
কর্মব্যবস্ততার মধ্যে পাশের ব্যক্তিকে দীনের দাওয়াত দেওয়া যায়। তবে, এটি করতে হবে সুন্নত পদ্ধতিতে। এজন্য প্রথমে তাঁর সঙ্গে হৃদ্যতা তৈরি করতে হবে। এরপর তাঁকে দাওয়াত দিতে হবে। এছাড়াও উপকারী জ্ঞানের চর্চা করা যায়। ধরেন, আমার পাশে কোনো আলেম অবস্থান করছেন, তখন নিজের কল্যাণে এ সুযোগটি লুফে নেওয়া যায়। রাসুল (স.) বলেছেন, হে আলী, তোমার মাধ্যমে একজন লোক হেদায়াত পাওয়া তা আরবের লাল উটের চেয়ে উত্তম। (সহিহ মুসলিম: ৬১১৭)
৬) সৃষ্টিজগত, মৃত্যু ও পরকাল নিয়ে ভাবা
কাজের ভেতরে বিরক্তি আসলে সৃষ্টিজগত, মৃত্যু ও পরকাল নিয়ে ভাবা একটি নেক আমল। আল্লাহ তাআলা এসব গভীরভাবে চিন্তা করার জন্য উৎসাহ দিয়ে বলেন—
‘তিনিই ভূ-মণ্ডলকে বিস্তৃত করেছেন এবং তাতে পাহাড়-পর্বত ও নদ-নদী স্থাপন করেছেন এবং প্রত্যেক প্রকারের ফল তিনি জোড়া জোড়া সৃষ্টি করে রেখেছেন। তিনি দিনকে রাত দ্বারা আবৃত করেন। এতে তাদের জন্য নিদর্শন রয়েছে, যারা চিন্তা করে।’ (সুরা রাআদ: ৩)
উল্লেখ্য, এখানে কাজের ফাঁকে বলতে নিজের কাজ বোঝানো হয়েছে। কিন্তু যারা চাকরি করেন, তাদের সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করাই ইবাদত। কর্তব্যে অবহেলার জন্য প্রত্যেককে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। নবী (স.) বলেন, তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল; আর তোমরা প্রত্যেকেই তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে (বুখারি: ৮৫৩; মুসলিম: ৪৮২৮)
তাছাড়া অনেক চাকরিজীবীর কোরআন তেলাওয়াত বা সৃষ্টিজগত নিয়ে ভাবার সুযোগ নেই। যেমন মস্তিষ্কের শ্রম দিয়ে বা ব্রেন খাটিয়ে যারা চাকরি করেন, তারা তেলাওয়াত করতে গেলে বা জীবন-মৃত্যু নিয়ে বেশি ভাবতে গেলে কাজের ক্ষতি হওয়ার অথবা দায়িত্বহীন হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তাই তাদের তেলাওয়াত করা-শোনা কিংবা সৃষ্টিজগত নিয়ে ভাবা জরুরি নয়। তারা মাঝেমধ্যে আল্লাহু আকবর অথবা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ কিংবা লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ, ইস্তেগফার ও দরুদ পাঠ করতে পারেন। হাদিস অনুযায়ী, তাতেই যথেষ্ট সওয়াব পাওয়া যাবে।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে তাঁর প্রকৃত বান্দা হওয়ার এবং কাজের ফাঁকে উপরোক্ত ইবাদতগুলো করার তাওফিক দান করুন।

