রোববার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

শবে বরাতে মানুষকে কিছু খাওয়ানো যাবে?

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৬:০০ পিএম

শেয়ার করুন:

শবে বরাতে মানুষকে কিছু খাওয়ানো যাবে?

শবে বরাত ফারসি শব্দ। ‘শব’ অর্থ রাত, ‘বরাত’ অর্থ নাজাত বা মুক্তি। দুই শব্দ মিলে অর্থ হয় মুক্তির রজনী। শবে বরাতে আল্লাহ তাআলা অনুগত বান্দাদের ক্ষমা করে দেন—তাই রাতটি মুক্তির রজনী নামে খ্যাত। আরবি পরিভাষায় একে ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান’ বা অর্ধ শাবানের রাত বলা হয়। এই রাতের ফজিলত সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘অর্ধ শাবানের রাতে অর্থাৎ শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে আল্লাহ তাআলা সমগ্র সৃষ্টিকুলের প্রতি রহমতের দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও হিংসুক লোক ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৩৯০; সহিহ ইবনে হিব্বান: ৫৬৬৫)

রাতটি ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে কাটাতেন সলফে সালেহিনরা। রাতভর নফল নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, তসবিহ-তাহলিল পাঠ, তওবা-ইস্তেগফার ইত্যাদি আমলে তাঁরা মশগুল থাকতেন। শবে বরাতে একাকী কবর জেয়ারত করাও মোস্তাহাব আমল। 


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: শবে বরাতে নবীজি যে আমল করতেন

দান-সদকা, মানুষকে খাওয়ানো সবসময়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নেক আমল। শবে বরাতের রাতেও এ আমল করা যাবে এবং এর কারণে সওয়াব লাভ হবে। সুতরাং প্রতিবেশী, আত্মীয় স্বজন বা দরিদ্রদের হালুয়া-রুটিসহ যেকোনো খাবার খাওয়ানো, হাদিয়া পাঠানো নাজায়েজ হওয়ার কোনো কারণ নেই।

তবে হালুয়া-রুটি বানানো, খাওয়া ও বিরতরণকে শবে বরাতের জরুরি বা বিশেষ ফজিলতপূর্ণ আমল মনে করলে তা বিদআত গণ্য হবে। কেননা হালুয়া রুটি বানানো, খাওয়া বা বিতরণ করা শবে বরাতের বিশেষ কোনো আমল নয়। 

কাউকে বলতে শোনা যায়, ‘শবে বরাতে হালুয়া-রুটি বানালে আরশের নিচে ছায়া পাওয়া যাবে।’ অথচ রাসুলুল্লাহ (স.)-এর হাদিসের সঙ্গে এর দূরতম সম্পর্ক নেই। আবার কাউকে বলতে শোনা যায়, ওহুদ যুদ্ধে নবীজির দানদান মোবারক শহীদ হওয়ায় কিছুদিন তিনি শক্ত খাবার খেতে পারেননি—সেই ঘটনার প্রতি সমবেদনা জানিয়ে এই দিনে ঘটা করে হালুয়া রুটি খাওয়া হয়। অথচ ওহুদ যুদ্ধ শাওয়ালের ৭ তারিখে, শাবান মাসের ১৫ তারিখের সঙ্গে এর সম্পর্ক নেই।


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: শবে বরাতের রোজা কয়টি

তাই আলেমদের পরামর্শ হলো- শবে বরাতে ঘটা করে হালুয়া-রুটি খাওয়ানো থেকে বিরত থাকাই শ্রেয়। কেননা পরবর্তী প্রজন্মে এর ধারাবাহিকতা রক্ষার গুরুত্ব সৃষ্টি হতে পারে। যেমনটি একবার শুরু হওয়ার কারণে হালুয়া-রুটি বানানোকে শবে বরাতের ইবাদত মনে করে থাকেন কেউ কেউ। তাই উত্তম হলো- এসবের পেছনে সময় নষ্ট না করে মূল ইবাদতের দিকে মনোনিবেশ করে শবে বরাতের ফজিলত লাভ করা।

তবে হ্যাঁ, শবে বরাতের বিশেষ আমল মনে না করলে বা এ রকম ভুল ধারণা সৃষ্টি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা না থাকলে মানুষকে হালুয়া-রুটিসহ যেকোনো খাবার খাওয়ানো ও বিরতরণ করা নাজায়েজ নয়। আল্লাহ তাআলা আমাদের যাবতীয় ত্রুটি থেকে রক্ষা করুন। কোরআন সুন্নাহর নির্দেশনা যথাযথ মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর