শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

নবীজির লজ্জাশীলতা

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৫:৪৯ পিএম

শেয়ার করুন:

নবীজির লজ্জাশীলতা

প্রিয়নবীজির চরিত্রের এক অনুপম দিক ছিল লজ্জাশীলতা। ছোটবেলা থেকেই তিনি ভীষণ লজ্জাশীল ছিলেন। ছোটবেলায় একবার লুঙ্গি উপরে উঠার কারণে তিনি বেহুঁশ হয়ে গিয়েছিলেন। এ ঘটনা বর্ণনায় জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (স.) নবুয়তের আগে কুরাইশদের সঙ্গে কাবাঘর সংস্কারের সময় পাথর তুলে দিচ্ছিলেন। তাঁর পরিধানে ছিল লুঙ্গি। তাঁর চাচা আব্বাস (রা.) বললেন, ভাতিজা, লুঙ্গি খুলে কাঁধে পাথরের নিচে রাখলে ভালো হতো। জাবের (রা.) বলেন, তিনি লুঙ্গি খুলে কাঁধে রাখলেন এবং তৎক্ষণাৎ বেহুঁশ হয়ে পড়লেন। এরপর তাঁকে আর কখনো নগ্ন অবস্থায় দেখা যায়নি। (সহিহ বুখারি: ৩৬৪)

দ্বীন ইসলামের বিধিবিধান, বিভিন্ন মাসয়ালা জেনে নিতে পুরুষ-নারী সবাই যেতেন নবীজির কাছে। মহানবী (স.) নারীদের সঙ্গে লজ্জাজনক মাসয়ালা বলার ক্ষেত্রে শালীনতার পরিচয় দিতেন, খোলামেলাভাবে মাসয়ালা বর্ণনা করতেন না। অবশ্য দ্বীনের ক্ষতি হবে মনে করলে কিছুক্ষেত্রে খোলামেলাভাবেই বলতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, এক নারী রাসুল (স.)-কে হায়েজের গোসল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল। তিনি তাকে গোসলের নিয়ম বলে দিলেন যে, ‘এক টুকরা কস্তুরি লাগানো নেকড়া নিয়ে পবিত্রতা হাসিল করো।’ নারীটি বলল, ‘কীভাবে পবিত্রতা হাসিল করব?’ রাসুল (স.) বললেন, ‘তা দিয়ে পবিত্রতা হাসিল করো।’ নারীটি (তৃতীয়বার) বলল, ‘কীভাবে?’ রাসুল (স.) লজ্জায় (মুখ ঢেকে) বললেন, ‘সুবহানাল্লাহ! তা দিয়ে তুমি পবিত্রতা হাসিল করো।’ আয়েশা (রা.) বলেন, তখন আমি তাকে টেনে আমার কাছে নিয়ে এলাম। এরপর বললাম, ‘তা দিয়ে রক্তের চিহ্ন বিশেষভাবে মুছে ফেল।’ (সহিহ বুখারি: ৩১৪)


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: নবীজির জীবনী পড়ার উপকারিতা

অনেক সাহাবি নবীজির লাজুক হওয়ার বিষয়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, পর্দার অন্তরালের কুমারীদের চেয়েও নবীজি (স.) অধিক লজ্জাশীল ছিলেন। যখন তিনি তাঁর কাছে অপছন্দনীয় কিছু দেখতেন, তখন আমরা তাঁর চেহারা দেখেই তা বুঝতে পারতাম (সহিহ বুখারি : ৬১০২)

যদি কখনো নবীজির কাছে কোনো সাহাবির ব্যাপারে কোনো ধরনের অভিযোগ আসত, তখন আভিজাত্য, ভদ্রতা, শালীনতা ও লজ্জাশীলতার কারণে মহানবী (স.) সেই সাহাবির নাম উল্লেখ না করে ব্যাপকভাবে সব লোককে সে সম্পর্কে সতর্ক করে দিতেন। এতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে সঙ্গে অন্য লোকেরাও সতর্ক হয়ে যেত। আয়েশা (রা.) বলেন, নবীজি (স.)-কে কোনো ব্যক্তির কোনো বিষয়ে জানানো হলে তিনি এভাবে বলতেন না, তার কী হলো যে, সে এ কথা বলে? বরং বলতেন, লোকজনের কী হলো যে, তারা এই এই বলে? (আবু দাউদ: ৪৭৮৮)

আরও পড়ুন: কত বছর বয়সে বিয়ে করা ‍সুন্নত


বিজ্ঞাপন


লজ্জা, শালীনতা, ভদ্রতা ও ব্যক্তিত্ববোধের কারণে রাসুলুল্লাহ (স.) ব্যক্তিগত অপছন্দের কথা মুখে বলতে সংকোচ করতেন; এমনকি তিনি মনে মনে কষ্ট অনুভব করলেও মুখে তা প্রকাশ করতেন না। এজন্য মহান আল্লাহ সাহাবিদের সতর্ক করে বলেন, ‘তোমাদের আহ্বান করলে তোমরা (ঘরে) প্রবেশ করো এবং খাওয়া শেষে তোমরা চলে যেয়ো; তোমরা কথাবার্তায় মশগুল হয়ে পোড়ো না। কেননা তোমাদের এই আচরণ নবীকে পীড়া দেয়, সে তোমাদের উঠিয়ে দিতে সংকোচ বোধ করে। কিন্তু আল্লাহ সত্য বলতে সংকোচ বোধ করেন না।’ (সুরা আহজাব: ৫৩)

অতএব, এটি প্রমাণিত যে তীব্র লজ্জাবোধ শুধু নারীর বৈশিষ্ট্য নয়, তা ব্যক্তিত্ববান পুরুষেরও বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নবীজির জীবনী থেকে শিক্ষা নেওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর