ইসলামের প্রথম শিক্ষা হলো তাওহিদ। যাকে ইসলামের রুহ বলা হয়। পৃথিবীতে আল্লাহর প্রেরিত সব নবী-রাসুল মানবজাতিকে তাওহিদের শিক্ষা দিয়েছেন। শিরক ও তাগুতের বিপরীতে এক আল্লাহর ইবাদত করার আহ্বান জানিয়েছেন। তাওহিদ অর্থ একক বা একত্ব, কোনো কিছুকে একক করা বা অদ্বিতীয় সাব্যস্ত করা। ‘ইবাদতের জন্য একমাত্র আল্লাহকে একক গণ্য করাই হল তাওহিদ।’ (আল-উছায়মিন, শারহু ছালাছাতিল উসুল, পৃ-৩৯)
তাওহিদ না জানলে ঈমান রক্ষা করা সম্ভব নয়। তাই মুসলমানদের জন্য সর্বপ্রথম তাওহিদ জানা জরুরি। আসলে মানুষ ও জ্বিন জাতিকে সৃষ্টি করার মৌলিক উদ্দেশ্যই হলো- তারা যেন তাদের সার্বিক জীবনে একমাত্র আল্লাহর তাওহিদ প্রতিষ্ঠা করে (সুরা জারিয়াত: ৫৬)
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: ‘ন্যায়বিচার’ আল্লাহর মহান গুণ
তাওহিদ তিন শ্রেণিতে বিভক্ত। প্রত্যেকটি শ্রেণি সম্পর্কে বিশদ জ্ঞান না থাকলে কোনো না কোনোভাবে শিরক-তাগুতে জড়িয়ে পড়ার আশংকা রয়েছে। নিচে তিন শ্রেণির শিরকের পরিচিতি তুলে ধরা হলো।
১. তাওহিদে রুবুবিয়্যাহ
এটি তাওহিদের প্রথম প্রকার। তাওহিদে রুবুবিয়্যাহ হলো- প্রতিপালনে, পরিচালনায় একমাত্র আল্লাহই রব—সে বিষয়ে মনেপ্রাণে স্বীকারোক্তি প্রদান করা। এতে কাউকে বা কোনোকিছুকে আল্লাহর সঙ্গে শরিক না করা। অর্থাৎ সবকিছুর পালনকর্তা, সৃষ্টিকর্তা, রিজিকদাতা, জীবনদাতা, মরণদাতা, আইনদাতা ও সবকিছুর মালিক হিসেবে একমাত্র আল্লাহকে বিশ্বাস করাই হলো তাওহিদে রুবুবিয়্যাহ। (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমুউল ফতোয়া: ৩/১০৩)
২. তাওহিদে উলুহিয়্যাহ
ইবাদতের যোগ্য হিসেবে এবং হুকুম পালনে একমাত্র আল্লাহকে ইলাহরূপে গ্রহণ করাই হলো তাওহিদে উলুহিয়্যাহ। যারা শুধুমাত্র নামাজ, রোজা, হজের ক্ষেত্রে আল্লাহর বিধান অনুসরণ করে, কিন্তু অন্যান্যক্ষেত্রে করে না, তারা এক প্রকার শিরকের মধ্যে নিমজ্জিত। অতএব, তাওহিদে উলুহিয়্যাহ সম্পর্কে জানতে হবে। মূলত তাওহিদে উলুহিয়্যাহ হলো- ‘যাবতীয় ইবাদত, দোয়া, প্রত্যাশা, ভয়-ভীতি, আগ্রহ, ভরসা, প্রত্যাবর্তন, জবেহ, মানত, কোরবানি সবই পেশ করার জন্য আল্লাহকে একক গণ্য করা। (আকিদাতুত তাওহিদ, পৃ-৪২)
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে ১৬ আমল
মনে রাখতে হবে, আল্লাহর পক্ষ থেকে নাজিল হওয়া তাওরাত, ইঞ্জিল, জাবুরসহ অন্যান্য কিতাব যদি ইসলামি শরিয়তে বাতিল বলে গণ্য হয়, তাহলে গাইরুল্লাহর তৈরি আইন কীভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে? তাই মানুষকে আগে তাওহিদের জ্ঞান অর্জন করতে হবে। (আলবানি, আত-তাওহিদ আওয়ালান, পৃ-২৮)
৩. তাওহিদে আসমা ওয়াস সিফাত
তাওহিদের এই প্রকারটি হলো- আল্লাহর নামসমূহ ও তাঁর গুণাবলী এককভাবে তাঁর সঙ্গেই সম্পৃক্ত করা, অন্যকারো সঙ্গে তুলনা না করা। পবিত্র কোরআন ও সহিহ হাদিসে যেভাবে বর্ণিত হয়েছে, ওভাবেই বিশ্বাস করা। কোনো রূপক বা বিকৃত অর্থ না করা এবং কল্পিত ব্যাখ্যার আশ্রয় না নেওয়া (ফতোয়া উছায়মিন: ১/৮৩)
আল্লাহ মুসলিম উম্মাহকে তাওহিদ বুঝার ও তা বলিষ্ঠভাবে সংরক্ষণ করার তাওফিক দান করুন। সেইসঙ্গে তাওহিদবিরোধী যাবতীয় কার্যক্রম থেকে হেফাজত করুন। আমিন।

