সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

প্রবীণ আলেম মুফতি আব্দুর রউফের ইন্তেকাল

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৫:১০ পিএম

শেয়ার করুন:

প্রবীণ আলেম মুফতি আব্দুর রউফের ইন্তেকাল

গোপালগঞ্জের গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসার শাইখুল হাদিস ও নায়েবে মুহতামিম হাফেজ মাওলানা মুফতি আব্দুর রউফ সাহেব (ঢাকার হুজুর) ইন্তেকাল করেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।

আজ বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) আনুমানিক সকাল ৬ টায় তিনি ইন্তেকাল করেন। দুপুর আড়াইটায় গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসা ময়দানে জানাজার নামাজশেষে মাকবারায় শামছিয়াতে তাকে দাফন করা হয়। জানাজার নামাজে ইমামতি করেন গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসার মুহতামিম আল্লামা মুফতি রুহুল আমিন সাহেব। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ৪ ছেলে, ৪ মেয়েসহ অসংখ্য ছাত্র, ভক্ত, গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। 


বিজ্ঞাপন


মাওলানা আব্দুর রউফ মুন্সীগঞ্জের (বিক্রমপুর) সিরাজদিখান উপজেলার বাহেরকুচি গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে ৩ মার্চ ১৯৩৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম আ. আজিজ, মায়ের নাম জোবায়দা খাতুন। তার বাবা ছিলেন মোজাহেদে আজম আল্লামা শামছুল হক ফরিদপুরী ছদর ছাহেব (রহ)-এর ভক্ত। হজরত ছদর ছাহেব (রহ)-এর পরামর্শে তাকে আষ্টম শ্রেণিতে পড়াকালিন সময় মাদ্রাসায় ভর্তি করেন। মাত্র দুই বছরে তিনি পবিত্র কোরআন হেফজ সম্পন্ন করেন। সেখানে কাফিয়া জামাত পর্যন্ত পড়ালেখা করেন। এরপর হজরত ছদর ছাহেব (রহ) তাকে জামেয়া কোরআনিয়া আরাবিয়া লালবাগ মাদ্রাসায় নিজের কাছে ভর্তি করেন। ছদর ছাহেব (রহ)-এর নিবিড় পরিচর্যায় লালবাগ মাদ্রাসা থেকে দাওরায় হাদিস শেষ করেন।

লালবাগ থেকে ফারেগ হয়ে তিনি হজরত ছদর ছাহেব (রহ)-এর প্রতিষ্ঠিত মোস্তফাগঞ্জ মাদ্রাসায় খেদমত শুরু করেন। কিছুদিন পর হজরত ছদর ছাহেব (রহ) তাকে উচ্চশিক্ষার জন্য হজরত বিননূরী (রহ.)-এর কাছে চিঠি লিখে উলুমুল হাদিস পড়ার জন্য পাকিস্তান পাঠিয়ে দেন। তখন বাংলাদেশের কোথাও উলুমুল হাদিস (উচ্চতর হাদিসশাস্ত্র) বিষয়ে পড়াশোনার ব্যবস্থা ছিল না। ছদর ছাহেব হুজুরের চিঠি হজরত বিননূরী (রহ.)-কে দিলে কোনো ধরনের ভর্তি পরীক্ষা ছাড়াই ঢাকার হুজুরকে ভর্তি করে নেন। 

উলুমুল হাদিস পড়া শেষ হলে হজরত বিননূরী (রহ) ছদর ছাহেব হুজুর (রহ)-এর কাছে চিঠি লিখে ঢাকার হুজুরকে পাঠিয়ে দেন। চিঠির ভাষ্য ছিল অনেকটা এমন, ‘এই ছেলের হাদিস পড়ানোর মতো পরিপূর্ণ যোগ্যতা অর্জন হয়েছে, তাকে আপনি হাদিসের কাজে লাগাতে পারেন।’ বাংলাদেশে আসার পর ছদর ছাহেব হুজুর (রহ) তাকে গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসার উস্তাদ হিসেবে নিয়োগ দেন। সেই সময় থেকেই তিনি গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসায় হাদিসের খেদমতে নিয়জিত ছিলেন।

হাফেজ মাওলানা মুফতি আব্দুর রউফ শায়খুল হাদিস হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসায় খেদমত করেন। এছাড়ও তিনি পঞ্চাশটিরও অধিক মাদ্রাসায় বোখারির দরস দেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু মাদ্রাসা হলো- ঢালকানগর মাদ্রাসা, মিরপুর জামেউল উলুম মাদ্রাসা, ফয়জুল উলুম মাদ্রাসা, সাইনবোর্ড মাদ্রাসা ও মোস্তফাগঞ্জ মাদ্রাসা, জামিয়াতুস সুন্নাহ, রায়েরমহল মাদ্রাসা, রাজৈর মাদ্রাসা, গোপালগঞ্জ কোর্ট মসজিদ মাদ্রাসা, মেরী গোপিনাথপুর মাদ্রাসা। দক্ষিণ অঞ্চলের প্রায় সব বড় মাদ্রাসায় তিনি বোখারি শরিফ পড়িয়েছেন। তার হাদিসের দরস ছিল খুবই জামে- মানে একজন শিক্ষক হিসেবে কথাবার্তা, চাল-চলন, যুক্তিপূর্ণ বিচার-বিশ্লেষণ ও নৈতিক গুণাবলীতে তিনি এমন এক আদর্শ স্থাপন করেছিলেন, যা শিক্ষার্থীসহ সকলের সামনে অনুকরণীয় হয়ে থাকবে। 


বিজ্ঞাপন


mao-abdur-rauf

তাঁর মৃত্যুতে গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসার মুহতামিম হাফেজ মাওলানা মুফতি রুহুল আমিন সাহেব গভীর শোক প্রকাশ করে বলেন, হজরত ঢাকা হুজুরের ইন্তকালে একজন অভিভাবক সহকর্মী হারালাম। তিনি আমার বাবা হজরত ছদর ছাহেব (রহ)-এর খুব কাছের শিষ্য। খুব বিচক্ষণ মানুষ। খুব সাবলীলভাবে হাদিসের দরস দিতেন। হাদিসের কঠিন কঠিন বিষয়গুল খুব সহজভাবে উপস্থাপন করতেন, ফলে তালিবুল ইলমরা সহজেই বুঝে নিতেন। তাঁর মৃত্যুতে হাদিসের দরসে গভীর শুণ্যতা সৃষ্টি হলো। আল্লাহ আমাদের ধৈর্য ধারণের তাওফিক দান করুন এবং তাকে জান্নাতের উচ্চ মাকাম দান করুন। 

আরো শোক প্রকাশ করেছেন গওহরডাঙ্গা মাদরাসার নায়েবে মুহতামিম, হাফেজ মাওলানা মুফতি উসামা আমীন, নাজেমে তা'লীমাত মুফতি নুরুল ইসলাম সাহেব, গওহরডাঙ্গা বোর্ডের মহাসচিব মাওলানা শামছুল হক, খাদেমুল ইসলাম বাংলাদেশের সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা ঝিনাত আলী, গওহরডাঙ্গা বিভাগীয় জিম্মাদার মাওলানা আব্দুস সালাম, ঢাকা মহানগর জিম্মাদার, মাওলানা আজিজুর রহমান, ঢাকা বিভাগীয় সহকারী জিম্মাদার মুফতি অহিদুল আলম, তানজিমুল মুদাররিসিন বাংলাদেশের মাওলানা আতাউর রহমান, মুফতি মোহাম্মদ তাসনীম, মুফতি মোস্তফা কাসেমসহ উলামা- মাশায়েখগণ।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর