ইসলামি শরিয়তে মানুষের প্রশংসা করার ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম-নীতি রয়েছে। কারো সামনে কিংবা পেছনে অতিরিক্ত প্রশংসা করতে নিষেধ করেছেন রাসুলুল্লাহ (স.)। তিনি বলেন, ‘কারো সামনে তার প্রশংসা করা তার পিঠে ছুরি মারা বা তার গলা কেটে ফেলার সমান।’ (আদাবুল মুফরাদ: ৩৩৫)
কেউ কারো সামনাসামনি প্রশংসা করলে প্রশংসাকারীকে সতর্ক করার নির্দেশ রয়েছে হাদিসে। নবীজি (স.) বলেছেন, ‘কেউ তোমাদের সামনাসামনি প্রশংসা করলে তার মুখে তোমরা পাথর ছুড়ে মারো।’ (আদাবুল মুফরাদ: ৩৪০)
বিজ্ঞাপন
একজন সাহাবি রাসুল (স.)-এর কাছে অন্য এক সাহাবি সম্পর্কে উচ্চ প্রশংসা করেন। তা শুনে রাসুল (স.) বলেন, ‘আফসোস, তুমি তো তোমার সঙ্গীর গর্দান কেটে ফেললে! কথাটি নবীজি (স.) তিনবার বলেন। অতঃপর বলেন, যদি কারো প্রশংসা করতেই হয়, তাহলে সে যেন এভাবে বলে- আমি তার ব্যাপারে এমন এমন ধারণা পোষণ করি। কারণ তার প্রকৃত হিসাব মহান আল্লাহ জানেন।’ (মুসলিম, মেশকাত: ৪৮২৭)
অনুপস্থিতিতেও কারো অতি প্রশংসা করা, যা তার জন্য প্রযোজ্য নয়, ইসলামে নিন্দনীয়। স্বয়ং নবীজি (স.) তা পছন্দ করতেন না। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহর শপথ! আল্লাহ আমাকে যে মর্যাদা দান করেছেন তার চেয়ে উঁচু মর্যাদা আমাকে দান করো, সেটা আমি পছন্দ করি না।’ (মুসনাদে আহমদ: ১২১৪১)
আরও পড়ুন: মানুষের সম্মান রক্ষার ফজিলত
যারা প্রশংসা প্রত্যাশা করে পবিত্র কোরআনে তাদের নিন্দা করে বলা হয়েছে, ‘যারা নিজেরা যা করেছে তাতে আনন্দ প্রকাশ করে এবং যা নিজেরা করেনি এমন কাজের জন্য প্রশংসিত হতে ভালোবাসে, তারা শাস্তি থেকে মুক্তি পাবে—এমন তুমি কখনো মনে করো না। তাদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি।’ (সুরা আলে ইমরান: ১৮৮)
বিজ্ঞাপন
পাপিষ্ঠ ব্যক্তির প্রশংসা তথা যে ব্যক্তি প্রকাশ্য পাপাচারে লিপ্ত, যে মানুষের ওপর অত্যাচার করে তার প্রশংসা করা ইসলাম নিষিদ্ধ করেছে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘তোমরা মুনাফিককে ‘আমাদের নেতা’ বলে সম্বোধন করো না। কেননা সে যদি নেতা হয়, তবে তোমরা তোমাদের মহামহিম আল্লাহকে ক্রোধান্বিত করলে।’ (সুনানে আবি দাউদ: ৪৯৭৭)
নিজের প্রশংসা বা আত্মপ্রশংসাও ইসলামের দৃষ্টিতে নিষিদ্ধ। মহান আল্লাহ বলেন, ‘অতএব তোমরা আত্মপ্রশংসা করো না, তিনিই সম্যক জানেন কে আল্লাহভীরু।’ (সুরা নাজম: ৩২)
সামনাসামনি কেউ আপনার প্রশংসা করলে করণীয় হলো- তাকে সতর্ক করার পাশাপাশি আল্লাহর কাছে এই দোয়া করা—‘আল্লাহুম্মা লা তুআখিজনি বিমা ইয়াকুলুন, ওয়াগফিরলি মা লা ইয়ালামুন।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ, তারা যা বলছে সে ব্যাপারে আমাকে পাকড়াও করো না এবং যে বিষয়ে তারা জানে না, সে বিষয়ে আমাকে ক্ষমা করে দাও।’ (আল-আদাবুল মুফরাদ: ৭৬১)
আরও পড়ুন: আল্লাহর শুকরিয়ার মধ্যে যে প্রতিদান রয়েছে
তবে, প্রশংসাকৃত ব্যক্তির ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা না থাকলে এবং এতে তার কল্যাণের সম্ভাবনা থাকলে প্রশংসা করা যেতে পারে। (ফতোয়া লাজনা দায়েমা: ২৬/১২৪)
এছাড়া ভালো কাজে উৎসাহিত করতেও নিয়ম মেনে প্রশংসা জায়েজ। যেমনটি হাদিসে দেখা যায় যে, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছিলেন, ‘আবদুল্লাহ কতই না উত্তম ব্যক্তি যদি সে তাহাজ্জুদ আদায় করত।’ (সহিহ বুখারি: ১১৫৬)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সবক্ষেত্রে সব বিষয়ে ইসলামি নিয়ম-নীতি, বিধি-বিধান মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।

