ইবাদতে সন্দেহ বা ওয়াসওয়াসা সৃষ্টির নেপথ্যে থাকে শয়তান। তার উদ্দেশ্য- মহান ইবাদতকে মুমিনের পেরেশানির কারণ বানিয়ে দেওয়া। এর প্রতিকার হচ্ছে- যেকোনো সময় বেশি বেশি ‘লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ’ পড়া এবং ‘আউজুবিল্লাহ’ পড়ে বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া।
নামাজেও এ বিষয়ে ভ্রুক্ষেপ না করার পরামর্শ দেন আলেমরা। তাঁরা বলেন, যতই সন্দেহবাতিককে উপেক্ষা করা হবে, ততই শয়তানের ক্ষতি করার সুযোগ ব্যাহত হবে। কারণ, শয়তানের দৌঁড় তাকে পাত্তা দেওয়া পর্যন্ত। হাদিসে আছে, اَلْحَمْدُ لِلهِ الَّذِىْ رَدَّ اَمْرَهُ عَلَى الْوَسْوَسَة অর্থাৎ ‘সমস্ত প্রশংসা ওই আল্লাহর যিনি শয়তানের বিষয়টি কুমন্ত্রণা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রেখেছেন।’(নাসায়ি )
বিজ্ঞাপন
সহিহ বুখারি ও মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে, যখন এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (স.)-এর কাছে অভিযোগ করলেন যে, তার কাছে মনে হয়- সে নামাজের মধ্যে কিছু একটা পাচ্ছে। তখন তিনি বললেন, لاَ يَنْصَرِفُ حَتَّى يَسْمَعَ صَوْتًا ، أَوْ يَجِدَ رِيحًا সে যেন শব্দ শোনা কিংবা গন্ধ পাওয়া ছাড়া নামাজ না ছাড়ে। (সহিহ বুখারি: ১৩৭; সহিহ মুসলিম: ৩৬১)
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা আমার খাতিরে আমার উম্মতের অন্তরে চলে আসা ওয়াসওয়াসা (শয়তানি প্ররোচনা) বিষয়ে কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ/শাস্তি প্রদান করবেন না, যতক্ষণ না সে কথা বা কাজের মাধ্যমে সেটাকে বাস্তব রূপ দিচ্ছে। (সহিহ বুখারি: ২৩৯১; সহিহ মুসলিম: ১২৭)
নামাজ না ছাড়ার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো- অজু ভাঙ্গার ব্যাপারে সম্পূর্ণ নিশ্চিত হওয়া ছাড়া আপনি এটাই মনে করবেন যে, আপনার অজু ভাঙেনি। অর্থাৎ আপনার নামাজ শুদ্ধ। এমনকি বাস্তবে যদি অজু ভেঙ্গে গিয়ে থাকে তবুও। ইবনে হাজার আল-হাইছামিকে এর প্রতিকার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন,
‘এর ওষুধ একটাই, সেটা হচ্ছে– ওয়াসওয়াসাকে সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে যাওয়া; এমনকি মনের মধ্যে কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকা সত্ত্বেও। কেননা কেউ যদি সেটাকে ভ্রুক্ষেপ না করে, তাহলে সেটা স্থির হবে না। কিছু সময় পর চলে যাবে; যেমনটি তাওফিকপ্রাপ্ত লোকেরা যাচাই করে পেয়েছেন। আর যে ব্যক্তি ওয়াসওয়াসাকে পাত্তা দেবে এবং সে অনুযায়ী কাজ করবে, সে ব্যক্তির ওয়াসওয়াসা বাড়তেই থাকবে; এক পর্যায়ে তাকে পাগলের কাতারে নিয়ে পৌঁছাবে কিংবা পাগলের চেয়েও নিকৃষ্ট পর্যায়ে পৌঁছাবে।’ (আল-ফতোয়া আল-ফিকহিয়্যা আল-কুবরা: ১/১৪৯)
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত হাদিসে এসেছে, কিছু সাহাবা রাসুলুল্লাহ (স.)-এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করলেন,আমাদের অন্তরে অনেক সময় মন্দ চিন্তাভাবনা চলে আসে। রাসুলুল্লাহ (স.) বললেন, এটা কি সম্ভব? তারা বলল, জ্বী হ্যাঁ। রাসুলুল্লাহ (স.) বললেন, মাঝেমধ্যে এমন সন্দেহ মনে উঁকি দেয়াই হলো কামিল ঈমানের পরিচায়ক। (সহিহ মুসলিম: ১৩২)
উক্ত হাদিসের ব্যাখ্যায় ইমাম নববি (রহ) বলেন, শয়তান কাউকে গোমরাহ করতে নিরাশ হয়ে গেলে সর্বশেষে সে মনে সন্দেহ ঢুকিয়ে দিতে চায়। কাফেরকে প্ররোচনা দেওয়ার কোনো প্রয়োজন তার থাকে না। কেননা সে যেকোনো সময় কাফেরকে ব্যবহার করতে পারে। সুতরাং হাদিসের অর্থ হলো অন্তরে ঈমানের দানা থাকার দরুণই শয়তান ঈমানদারদেরকে প্ররোচনা দিয়ে থাকে। আর এ বিষয়ে কাজি ইয়াজ (রহ) এর নিকট পছন্দনীয় ব্যাখ্যা এটাই। (আল-মিনহাজ্ব-২/১৫৪)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বেশি বেশি নেক আমলের তাওফিক দান করুন এবং শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে রক্ষা করুন। আমিন।