রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

মধ্যপন্থা ইসলামের অন্যতম বৈশিষ্ট্য

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫ নভেম্বর ২০২৩, ০৩:২৩ পিএম

শেয়ার করুন:

মধ্যপন্থা ইসলামের অন্যতম বৈশিষ্ট্য

ইসলাম পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। এর প্রতিটি বিধান ন্যায়নিষ্ঠ ও ভারসাম্যপূর্ণ। মধ্যপন্থা ইসলামের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। ইবাদত, লেনদেন, আইন-কানুন, ব্যক্তিগত ও সামাজিক বিষয়াবলী, আবেগ, আদর্শ সবকিছুতেই ইসলাম মধ্যপন্থা অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছে। পবিত্র কোরআনের বহু আয়াত থেকে মধ্যপন্থার ধারণা পাওয়া যায়। ইরশাদ হয়েছে  ‘তুমি তোমার নামাজে স্বর উঁচু করো না এবং তাতে মৃদুও করো না; বরং এর মাঝামাঝি পথ অবলম্বন করো।’ (সুরা বনি ইসরাঈল: ১১০)

অন্যত্র আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তুমি তোমার হাত তোমার ঘাড়ে আবদ্ধ রেখো না এবং তা পুরোপুরি প্রসারিত করো না, তাহলে তুমি নিন্দিত ও নিঃস্ব হয়ে বসে পড়বে।’ (সুরা বনি ইসরাঈল: ২৯)


বিজ্ঞাপন


আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে মধ্যপন্থী উম্মত বানিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, এভাবেই আমি তোমাদেরকে বানিয়েছি মধ্যপন্থী উম্মত, যাতে তোমরা (কেয়ামতের দিন) মানুষ সম্পর্কে সাক্ষী হতে পার (বাকারা: ১৪৩)

এই আয়াতে বলা হচ্ছে- সাক্ষী হওয়ার জন্য মধ্যপন্থী হওয়া অপরিহার্য। সাক্ষী যদি মধ্যপন্থী না হয়, সে যদি তার দেখা ঘটনার যথাযথ বিবরণ না দেয়, বরং কোনও একদিকে ঝুঁকে পড়ে, দোষ-গুণ বাড়িয়ে-কমিয়ে বলে, তাহলে ন্যায়বিচার সম্ভব হয় না। পরিণামে সমাজে জুলুম ও অনাচারের পথ খুলে যায়। সুতরাং সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা, শৃঙ্খলা রক্ষা ও ন্যায়-বিচারের স্বার্থে মধ্যপন্থী হওয়া জরুরি। নবীজি (স.) উম্মতকে মধ্যপন্থী হওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘তোমরা সহজ করো, কঠিন করো না। তোমরা মানুষকে সুসংবাদ দাও, তাদের মধ্যে বিরক্তি সৃষ্টি করো না।’ (সহিহ বুখারি: ৬১২৫) রাসুল (স.) আরও বলেন,  তোমরা আমলে মধ্যপন্থা অবলম্বন করো, বাড়াবাড়ি করো না। সকাল-সন্ধ্যায় (ইবাদতের জন্য) বের হয়ে পড়ো এবং রাতের কিছু অংশেও। তোমরা অবশ্যই পরিমিতি রক্ষা করো। তাহলে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে।’ (সহিহ বুখারি: ৬৪৬৩)

আরও পড়ুন: হারিয়ে যাওয়া ২২টি মর্যাদাপূর্ণ সুন্নত

তাই বিশ্বাস ও আমলের ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা অবলম্বন করতে হবে। জোরজবরদস্তি কিংবা একেবারেই ছাড়াছাড়ি কোনোটিই ইসলামের সঙ্গে যায় না। ইসলাম একটি স্বভাবজাত সরল ধর্ম। এতে কোনো কঠোরতা ও কাঠিন্য নেই। এর প্রতিটি বিধান ন্যায়নিষ্ঠ ও ভারসাম্যপূর্ণ। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ তাআলা তোমাদের জন্য যা সহজ তা করতে চান, তিনি তোমাদের জন্য জটিলতা সৃষ্টি করতে চান না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৫)। অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনি দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের প্রতি কোনো সংকীর্ণতা আরোপ করেননি।’ (সুরা হজ: ৭৮)


বিজ্ঞাপন


ইসলাম কখনো দুনিয়া বাদ দিয়ে শুধু ইবাদত-বন্দেগিতে জীবন কাটিয়ে দিতে আদেশ দেয় না। আবার আখেরাতের চিন্তা থেকেও বিমুখ হতে বলে না। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আল্লাহ তোমাকে যা দান করেছেন তাতে তুমি আখেরাতের নিবাস অনুসন্ধান করো। তবে তুমি দুনিয়া থেকে তোমার অংশ ভুলে যেয়ো না। তোমার প্রতি আল্লাহ যেরূপ অনুগ্রহ করেছেন তুমিও সেরূপ অনুগ্রহ করো। আর জমিনে ফাসাদ করতে চেয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ ফাসাদকারীদের ভালোবাসেন না।’ (সুরা আল কাসাস: ৭৭)

আরও পড়ুন: মহান আল্লাহর সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ার ১৭ আমল

আনাস (রা.) বলেন, ‘একদা তিন ব্যক্তি রাসুল (স.)-এর ইবাদত সম্পর্কে জানার জন্য তাঁর স্ত্রীদের কাছে এলো। তাদের যখন এ ব্যাপারে অবগত করানো হলো, তখন তারা যেন তা কম বলে ভাবল। তারা বলল, ‘আমরা কোথায়, আর রাসুল (স.) কোথায়! আল্লাহ তো তাঁর সামনের ও পেছনের সব গুনাহই মাফ করে দিয়েছেন।’ তখন তাদের মধ্যে একজন বলল, ‘আমি আজীবন রাতভর নামাজ পড়ব’, অন্যজন বলল, ‘আমি জীবনভর রোজা রাখব, কখনো রোজা ভাঙব না’, তৃতীয়জন বলল, ‘আমি নারীর সঙ্গ থেকে দূরে থাকব। কখনো বিয়ে করব না।’ রাসুল (স.) তাদের কাছে এলেন। তিনি বললেন, ‘তোমরা এরূপ এরূপ কথা বলেছ! আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের মধ্যে বেশি আল্লাহ ভীরু, বেশি তাকওয়াবান। তবে আমি রোজা রাখি ও রোজা ভঙ্গ করি। নামাজ পড়ি ও ঘুম যাই এবং নারীকে বিবাহ করি। তাই যে ব্যক্তি আমার সুন্নত থেকে বিমুখ হবে, সে আমার দলভুক্ত নয়। (সহিহ বুখারি: ৫০৬৩)

দ্বীন প্রচারেও মধ্যপন্থার নির্দেশনা দেয় ইসলাম। সৎ কাজের আদেশ  দেওয়া এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করা ইসলামের অন্যতম বিধান। বহু জাতি এই বিধানকে কেন্দ্র করে পথভ্রষ্ট হয়েছে। কেউ এই বিধানকে একেবারেই ছেড়ে দিয়েছে। কেউ এই বিধান পালনে ত্রুটি বা কমতি করেছে। যথাযথভাবে তা পালন করেনি। খুব কমসংখ্যক ব্যক্তিই এই বিধানকে যথাযথভাবে পালন করেছে। কোরআনে এই বিধানের মধ্যপন্থা সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা হলে সর্বোত্তম উম্মত, যাদের মানুষের জন্য বের করা হয়েছে। তোমরা সৎ কাজের আদেশ দেবে এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করবে, আর আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে।’ (সুরা আলে ইমরান: ১১০)

উল্লেখিত আয়াত ও হাদিসের আলোকে এ কথা স্পষ্ট যে প্রত্যেক কাজেই মধ্যপন্থা অবলম্বন করার গুরুত্ব ইসলামে অনেক বেশি। শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রমে, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে, পানাহারে, ঘুম ও বিশ্রামে, দুঃখ-কষ্টে, ইবাদত-বন্দেগিতে, চলাফেরা ও কথা-বার্তাসহ সার্বিক দিক থেকেই বাড়াবাড়ি-ছাড়াছাড়ি না করে মধ্যপন্থা বজায় রেখে কাজ করাই হাদিসের নির্দেশনা এবং মুমিনের অন্যতম গুণ। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জীবনের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা অবলম্বনের তাওফিক দান করুন। ভারসাম্যপূর্ণ উত্তম জীবন যাপনের তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর