সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

মানুষ হত্যার ভয়ংকর পরিণাম

প্রকাশিত: ২৯ অক্টোবর ২০২৩, ১২:১০ পিএম

শেয়ার করুন:

মানুষ হত্যার ভয়ঙ্কর পরিণাম

ইসলামে মানুষ হত্যা জঘন্য অপরাধ। মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত। ইসলামে মানুষের জীবনের মূল্য অনেক বেশি। কোনো মানুষের অধিকার নেই অন্য কারো জীবন ছিনিয়ে নেওয়া। মানুষকে হত্যার ইচ্ছা করা, হত্যার পরিকল্পনা করা, হত্যার জন্য কাউকে প্ররোচিত করাও হত্যার অপরাধ হিসেবে বিবেচিত। একজন মুমিন যার মধ্যে খোদাভীতি আছে সে কখনও অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যা করতে পারে না, মানুষ হত্যায় কাউকে প্ররোচিত করতেও পারে না। বরং মানুষের জীবনের সুরক্ষা ও নিরাপত্তার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে।

মানুষ হত্যার ব্যাপারে কোরআনে রয়েছে কঠোর হুঁশিয়ারি। মহান আল্লাহ বলেন, ‘কেউ স্বেচ্ছায় কোনো মুমিনকে হত্যা করলে তার শাস্তি জাহান্নাম, সেখানে সে চিরকাল অবস্থান করবে। আর আল্লাহ তার প্রতি ক্রুদ্ধ হয়েছেন ও তাকে অভিশপ্ত করেছেন এবং তার জন্য মারাত্মক শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন।’ (সুরা নিসা: ৯৩)


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: ৬ পাপে আল্লাহর ক্রোধ

রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘আল্লাহর কাছে কোনো মুসলমানের হত্যাকাণ্ড সমগ্র পৃথিবীর ধ্বংস হয়ে যাওয়ার চেয়েও মারাত্মক ঘটনা।’ (তিরমিজি: ১৩৯৫)

কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম হত্যাকাণ্ডের বিচার করা হবে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘হত্যার ভয়াবহতার কারণে কেয়ামত দিবসে সর্বপ্রথম খুনের বিচার করা হবে।’ (বুখারি: ৬৩৫৭)

রাসুলুল্লাহ (স.) কোনো মুসলমানকে অন্যায়ভাবে হত্যা করাকে কুফরি বলে আখ্যায়িত করে বলেছেন, ‘কোনো মুসলমানকে গালি দেওয়া ফাসেকি কাজ এবং তাকে হত্যা করা কুফরি।’ (বুখারি: ৬০৪৪)


বিজ্ঞাপন


নিরপরাধ মানুষকে হত্যা চিরতরে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ যার হত্যা নিষিদ্ধ করেছেন, যথার্থ কারণ ব্যতিরেকে তোমরা তাকে হত্যা করো না।’ (সুরা বনি ইসরাইল: ৩৩)

আরও পড়ুন: অন্যায়ের প্রতিবাদ না করার ক্ষতি, কোরআন হাদিস যা বলছে

পবিত্র কোরআনে একজন নিরপরাধ মানুষের হত্যাকে পুরো মানবজাতির হত্যা বলে অভিহিত করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে- ‘যে কেউ প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ অথবা পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করা ছাড়া কাউকে হত্যা করল, সে যেন গোটা মানবজাতিকেই হত্যা করল।’ (সুরা মায়েদা: ৩১)

অন্যদিকে একজন মানুষের জীবন রক্ষাকে গোটা মানবজাতির জীবন রক্ষা বলে সাব্যস্ত করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং যে ব্যক্তি কারও জীবন বাঁচাল, সে যেন গোটা মানবজাতিকে বাঁচাল।’ (সুরা মায়েদা: ৩২)

মানুষের জীবনের মূল্য অত্যন্ত বেশি হওয়ায় আল্লাহ তাআলা মানুষ হত্যার বিচারে কিসাসের বিধান দিয়েছেন। কিসাস হচ্ছে কেউ কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করলে এর শাস্তিস্বরূপ ঘাতককে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘হে ইমানদারগণ! তোমাদের প্রতি নিহতদের ব্যাপারে কিসাস গ্রহণ করা বিধিবদ্ধ করা হয়েছে।’ (সুরা বাকারা: ১৭৮)

অন্যায়ভাবে যখন কেউ কোনো মানুষকে হত্যা করে তখন সে বেঁচে থাকার অধিকার হারিয়ে ফেলে। সে মানব সমাজের নিরাপত্তার জন্য হুমকিতে পরিণত হয়। মানব সমাজ টিকিয়ে রাখার জন্য তার অপসারণ অপরিহার্য হয়ে ওঠে। আর এই অপসারণের কাজটিই সম্পন্ন করা হয় কিসাস তথা ঘাতকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের মাধ্যমে। কিসাসের উপকারিতা সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে বুদ্ধিমানগণ! কিসাসের মধ্যে তোমাদের জন্য জীবন রয়েছে, যাতে তোমরা সাবধান হতে পার।’ (সুরা বাকারা: ১৭৯)

কিসাস বা শাস্তি প্রয়োগের এই কাজটি দ্রুত সম্পন্ন করবে হুকুমত তথা রাষ্ট্রশক্তি। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী এই কাজ করবে না। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ইসলামের প্রত্যেকটি বিধান যথাযথ পালন করার তাওফিক দান করুন। মানুষ হত্যার চিন্তা থেকেও দূরে থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর