শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

রমজানে কোরআন চর্চা যেন অটুট থাকে

ড. হাবিবুর রহমান
প্রকাশিত: ২১ এপ্রিল ২০২২, ০৩:৩৮ পিএম

শেয়ার করুন:

রমজানে কোরআন চর্চা যেন অটুট থাকে

রমজানের প্রথম দশক ইতোমধ্যে আমাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়েছে। শেষের পথে দ্বিতীয় দশকও। এই রমজানে একজন মুমিনের করণীয় কী—এ সম্পর্কে যদি আমরা চিন্তা করি, প্রথম যে বিষয়টি সামনে আসে, সেটি হলো কোরআন নাজিলের মাস মাহে রমজান। আল্লাহ তাআলা বলেছেন—

شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِيَ أُنزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ هُدًى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِّنَ الْهُدَى وَالْفُرْقَانِ ‘রোজার মাসেই পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে। যা বিশ্ব মানবতার জন্য হেদায়াত এবং সত্য ও মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টিকারী মানদণ্ড এই কোরআন।’ (সুরা বাকারা: ১৮৫)

আমরা সুরা কদর থেকে জানতে পারি যে, লাইলাতুল কদরে কোরআনকে আল্লাহ তাআলা আরশে আজিম থেকে এই দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। কাজেই রমজানে কোরআন অধ্যয়ন করা, কোরআন জানা-বুঝা একজন মুমিনের জন্য অপরিহার্য।

আল্লাহ তাআলা বলেছেন, اتَّبِعُوا مَا أُنزِلَ إِلَيْكُم مِّن رَّبِّكُمْ وَلَا تَتَّبِعُوا مِن دُونِهِ أَوْلِيَاءَ ‘আমি যা নাজিল করেছি (অর্থাৎ এই কোরআনকে) তোমরা সকলে মেনে নাও। আর তাঁকে (আল্লাহকে) ছাড়া অন্য অভিভাবকের অনুসরণ করো না।’

সুরা জুমারের ৫৫ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তাআলা আরো সুন্দর বলেছেন, وَ اتَّبِعُوۡۤا اَحۡسَنَ مَاۤ اُنۡزِلَ اِلَیۡکُمۡ مِّنۡ رَّبِّکُمۡ مِّنۡ قَبۡلِ اَنۡ یَّاۡتِیَکُمُ الۡعَذَابُ بَغۡتَۃً ‘তোমরা সকলে মেনে নাও সর্বোত্তম বিষয়টিকে, যা তোমাদের রবের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ করা হয়েছে, اَنۡ یَّاۡتِیَکُمُ الۡعَذَابُ بَغۡتَۃً হঠাৎ আজাব এসে যাওয়ার আগেই।’

অর্থাৎ আজাব কখন আসবে, মৃত্যু কখন আসবে কেউ জানে না। আল্লাহ তাআলা বলছেন, আজাব হঠাৎ এসে যেতে পারে। তার আগেই কোরআনকে মেনে নাও।


বিজ্ঞাপন


এজন্য রমজানে মুমিনের এক নম্বর দায়িত্ব হওয়া দরকার কোরআন পড়া-বুঝা বা অধ্যয়ন করা। রাসুলুল্লাহ (স.)-কে জিব্রাইল আমিন এই রমজানে তিনবার কোরআন খতম করে শুনিয়েছেন। পুরো কোরআন শরিফ তেলাওয়াত করে করে শোনাতেন তিনি।

ইতোমধ্যে যেহেতু অনেক রোজা বিদায় নিয়েছে। আর সামনে কয়েকদিন রোজা বাকি আছে মাত্র। এজন্য আমরা যারা এখনও কোরআনের সাথে আমাদের জীবনকে মেলাতে পারিনি, এখন থেকেই সিদ্ধান্ত নেবো যে, প্রতিদিন আমরা কোরআন অধ্যয়ন না করে, তেলাওয়াত না করে অন্যকোনো কাজে হাত দেবো না।

যারা কোরআন সহিহ শুদ্ধ করে তেলাওয়াত করতে পারি, অন্তত এক খতম কোরআন পড়ব। আসলে অর্থসহ কোরআন পড়লেই আল্লাহ তাআলা কী বলেছেন সব জানা যায়। এমন কোনো দিক-বিভাগ বাকি নেই, যা তিনি কোরআনে বলেননি।

সুরা নাহলের ৮৯ নম্বর আয়াতে সে বিষয়টিও আল্লাহ তাআলা উল্লেখ করেন এভাবে, وَ نَزَّلۡنَا عَلَیۡکَ الۡکِتٰبَ تِبۡیَانًا لِّکُلِّ شَیۡءٍ وَّ هُدًی وَّ رَحۡمَۃً وَّ بُشۡرٰی لِلۡمُسۡلِمِیۡنَ হে নবী আপনার ওপর একখানা কিতাব অবতীর্ণ করেছি। তিবইয়ানাল্লিকুল্লি শাইয়িন-এর মধ্যে প্রতিটি বিষয়ের স্পষ্ট বর্ণনা, মানবসমস্যার যত সমাধান, সবই আছে।

সুতরাং এই রমজানে নোট করে করে অধ্যয়ন করা উচিত হবে যে, আল্লাহ তাআলা আমাদের কী বলেছেন, আর কী নিষেধ করেছেন। যেটা করতে বলেছেন সেটাকে গ্রহণ করা, যেটা নিষেধ করেছেন সেটাকে পরিত্যাগ করাই হচ্ছে কোরআনের দাবী। 

আমরা যখন তাহাজ্জুদে দাঁড়াবো, যতটুকু মুখস্ত আছে, আয়াতগুলো, সুরাগুলো তেলাওয়াত করবো। শুধু রাকাতসংখ্যা বাড়ানো নয়, বরং দুই রাকাতে আপনি যত পারেন, তেলাওয়াত করেন। দুই রাকাতে চাইলে পুরো কোরআন শরিফও তেলাওয়াত করার সুযোগ আছে। আল্লাহ তাআলা সুরা মুজ্জাম্মিলে ২০ নম্বর আয়াতে বলছেন, فَاقۡرَءُوۡا مَا تَیَسَّرَ مِنَ الۡقُرۡاٰنِ ‘তোমরা কোরআন থেকে যতটুকু সহজ ততটুকু পড়ো।’

এই তেলাওয়াত মাহে রমজানে বেশি বেশি করতে হবে। সেহরি খাওয়ার অন্তত এক ঘণ্টা আগে যদি ঘুম থেকে উঠতে পারি, অজু করে নামাজে দাঁড়িয়ে গেলাম। যতটুকু মুখস্ত আছে, পুরোটাই তেলাওয়াত করলাম। তখন হৃদয়টা প্রশান্ত হয়ে যাবে। আর তেলাওয়াত যখন হৃদয়ের আবেগ দিয়ে করা হবে, ঈমানটা বেড়ে যাবে। কারণ কোরআন তেলাওয়াত করলে ঈমান বেড়ে যায়।

আল্লাহ বলছেন, اِنَّمَا الۡمُؤۡمِنُوۡنَ الَّذِیۡنَ اِذَا ذُکِرَ اللّٰهُ وَجِلَتۡ قُلُوۡبُهُمۡ وَ اِذَا تُلِیَتۡ عَلَیۡهِمۡ اٰیٰتُهٗ زَادَتۡهُمۡ اِیۡمَانًا وَّ عَلٰی رَبِّهِمۡ یَتَوَکَّلُوۡنَ ‘মুমিন তো তারাই, যখন আল্লাহর স্মরণ হয়, তাদের হৃদয়টা প্রকম্পিত হয়, ভীত সন্ত্রস্ত হয়। আর যখন আল্লাহর আয়াত বা নিদর্শন তেলাওয়াত করা হয়, তখন তাদের ঈমান বেড়ে যায় এবং আল্লাহর ওপরেই তারা ভরসা করে।’ وَالَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلاةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُونَ أُولَئِكَ هُمُ الْمُؤْمِنُونَ حَقًّا আর যারা নামাজ কায়েম করে এবং আল্লাহর দেওয়া রিজিক আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে, আল্লাহ তাআলা বলছেন, ঈমানের দাবিতে এরাই সত্যবাদী। হকপন্থী মুমিন তাঁরাই। ‘ওয়ারিজকুন কারীম’ আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁদের জন্য রয়েছে মর্যাদা ও সম্মানজনক রিজিক, যা আল্লাহ তাআলা তাদের জন্য ব্যবস্থা করেছেন।

এই রমজান আমাদের মাঝ থেকে বিদায় নিচ্ছে। আর যে কয়দিন আমরা পাবো, কোরআন অধ্যয়ন ছাড়া কোরআন জানা-বুঝা ছাড়া একটি দিনও যেন অতিবাহিত না করি। তবেই পবিত্র রমজানে কোরআন নাজিলকে সম্মান রক্ষা করা হবে। আর যদি কোরআন আমরা না জানি, বুঝার চেষ্টাও না করি, সারাটা জীবন রোজা রাখলেও আমাদের ঈমানের উন্নতি হবে না। 

আমাদের কেউ ৩০ রমজানে রোজা রেখেছি, অনেকে ৬০ বছরে ৬০ মাস রোজা রেখেছি, কিন্তু আমাদের আমল পরিবর্তন হয়নি। কারণ এই কোরআনকে আমরা অনুধাবন করার চেষ্টা করিনি।

কাজেই আমাদের দায়িত্ব এই রমজানে কোরআনকে নিজের জীবনের সাথি বানিয়ে নেওয়া। কোরআনের আলোতে ব্যক্তিজীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন পরিচালনা করার জন্য চেষ্টা করা। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সেই তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক: মিডিয়া আলোচক, খতিব, আদ দ্বীন মেডিকেল কলেজ মসজিদ, মগবাজার

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর