বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

দোয়া দ্রুত কবুল না হলে যা করবেন

প্রকাশিত: ০৪ অক্টোবর ২০২৩, ০১:৪২ পিএম

শেয়ার করুন:

দোয়া দ্রুত কবুল না হলে যা করবেন

দোয়া একটি মর্যাদাপূর্ণ ইবাদত। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে ‘মহান আল্লাহর কাছে দোয়ার চেয়ে অধিক সম্মানিত কোনো কিছু নেই।’ (ইবনে মাজাহ: ৩৮২৯) পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব।’ (সুরা মুমিন: ৬০)

তাই দোয়া থেকে গাফেল হওয়া অনুচিত। তাছাড়া ভাগ্য পরিবর্তনে দোয়া অসামান্য ভূমিকা পালন করে। রাসুল (স.) বলেছেন, ‘তাকদিরের বিরুদ্ধে সতর্কতা কোনো কাজেই আসবে না। যা ঘটেছে ও যা ঘটতে পারে—তা থেকে শুধু দোয়াই পারে নিষ্কৃতি দিতে। কোনো কোনো দুর্দশার সঙ্গে মোকাবেলা করে বিচার দিন পর্যন্ত লড়াই করতে থাকে দোয়া।’ (তাবরানি আউসাত: ১৫১৯)


বিজ্ঞাপন


মনে রাখতে হবে- দোয়া কখনো বিফলে যায় না। তাই দোয়ার ফল পেতে দেরি হলে হতাশ হওয়া অনুচিত। হাদিস শরিফে আছে, ‘যখন কোনো মুসলমান দোয়া করে, যদি তার দোয়ায় গুনাহের কাজ কিংবা সম্পর্কচ্ছেদের আবেদন না থাকে, তাহলে আল্লাহ তাআলা তিনটি প্রতিদানের যেকোনো একটি অবশ্যই দান করেন। সঙ্গে সঙ্গে দোয়া কবুল করেন এবং তার কাঙ্ক্ষিত জিনিস দিয়ে দেন। দোয়ার কারণে কোনো অকল্যাণ বা বিপদ থেকে হেফাজত করেন অথবা আখিরাতের কল্যাণের জন্য তা জমা করে রাখেন।’ (মুসনাদে আহমদ: ১১১৪৯)

আরও পড়ুন: যে দোয়া ৩ বার পড়লে কেউ ক্ষতি করতে পারবে না

দোয়া কবুল হতে বিলম্ব হলে এর কারণ উদঘাটন করতে হবে এবং দোয়া চালিয়ে যেতে হবে। কোনোভাবেই দোয়া বাদ দেওয়া যাবে না। দোয়া দ্রুত কবুল না হলে বা কবুলে বিলম্ব হলে করণীয় কী—নিচে তা তুলে ধরা হলো

১. আল্লাহর সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট থাকা
দোয়া দ্রুত কবুল না হলে আপনার প্রথম দায়িত্ব হবে—আল্লাহর সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট থাকা। কারণ একজন অনুগত বান্দা হিসেবে মাথায় রাখতে হবে যে, আল্লাহ কার দোয়া কবুল করবেন আর কার দোয়া কবুল করবেন না কিংবা কখন কবুল করবেন আর কখন করবেন না এটা সম্পূর্ণ তাঁরই ইচ্ছাধীন। তিনি সঙ্গেসঙ্গে কিছু দিলে সেটা যেমন হেকমতপূর্ণ, আবার সঙ্গেসঙ্গে না দিলে বা বঞ্চিত রাখলে তাও প্রজ্ঞাপূর্ণ। সুতরাং আল্লাহর সিদ্ধান্তের প্রতি সন্তুষ্ট থাকতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর অবশ্যই তোমরা এমন বহু কিছু অপছন্দ করো, যা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর অবশ্যই এমন বহু কিছু পছন্দ করো, যা তোমাদের জন্য ক্ষতিকর। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ সব কিছু জানেন; কিন্তু তোমরা জানো না।’ (সুরা বাকারা: ২১৬)


বিজ্ঞাপন


সুফিয়ান সাওরি (রহ.) বলেন, বান্দাকে না দেওয়াটাও একটা দান। এটা এজন্য যে তিনি তাকে কৃপণতা ও অন্য খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখেন। মূলত, তিনি বান্দার কল্যাণের দিকে লক্ষ্য রাখেন। অতঃপর তাকে না দেওয়াটাও কল্যাণকর বিষয়।’ (মাদারিজুস সালিকিন, পৃষ্ঠা-২/২১৫)

২. ধৈর্য ধারণ করা
দোয়া কবুলে বিলম্ব হলে মুমিনের উচিত ধৈর্য ধারণ করা। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর আমি তোমাদের মন্দ ও ভালো দ্বারা পরীক্ষা করে থাকি এবং আমার কাছেই তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।’ (সুরা আম্বিয়া: ৩৫)
রাসুলুল্লাহ (সা.) ধৈর্যশীল মুমিনদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করে বলেন, ‘মুমিনের ব্যাপারটি বড়ই বিস্ময়কর। তার সমস্ত বিষয়টিই কল্যাণময়। মুমিন ব্যতীত আর কারো জন্য এরূপ নেই। যখন তাকে কল্যাণ স্পর্শ করে, তখন সে শুকরিয়া আদায় করে। ফলে এটা তার জন্য কল্যাণকর হয়। আর যখন তাকে অকল্যাণ স্পর্শ করে, তখন সে সবর করে। ফলে এটাও তার জন্য কল্যাণকর হয়।’ (মুসলিম: ২৯৯৯)

আরও পড়ুন: ৬ শ্রেণির মানুষ দোয়া করলেই কবুল

৩. দোয়া কবুল না হওয়ার কারণ অনুসন্ধান ও পাপকাজ বর্জন করা
দোয়া দেরিতে কবুল হলে তার কারণ অনুসন্ধান করা জরুরি। কারণ কখনো দোয়াকারীর ভুলের কারণে দোয়া কবুল হয় না, কখনো নিষিদ্ধ কোনো পাপাচারে জড়িত থাকায় তা কবুল হয় না। তাই দোয়া কবুলের জন্য কারণ অনুসন্ধানের পাশাপাশি পাপকাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখা প্রয়োজন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘বস্তুত যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য কর্ম সহজ করে দেন।’ (সুরা তাহরিম: ৪)

৪. দোয়ায় মনোযোগ বাড়িয়ে দেওয়া
আল্লাহ চান তাঁর বান্দারা যেন মর্যাদাপূর্ণ ইবাদতটি অত্যন্ত ভাবগাম্ভীর্যতার সঙ্গে পূর্ণ করে। মনোযোগের সঙ্গে আদায় করে। অবহেলা বা তাড়াহুড়ো যেন না করা। দোয়া দেরিতে কবুল করা বান্দার জন্য পরীক্ষাও বটে। কেননা বান্দাকে কষ্টে রাখা কিংবা অতি সুখে রাখা আল্লাহ তাআলার পরীক্ষা। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা যখন তাঁর কোনো বান্দার মঙ্গল সাধনের ইচ্ছা করেন তখন দুনিয়ায় তাকে অতি তাড়াতাড়ি বিপদাপদের সম্মুখীন করেন। আর যখন তিনি কোনো বান্দার অকল্যাণের ইচ্ছা করেন তখন তার গুনাহের শাস্তি প্রদান থেকে বিরত থাকেন। অবশেষে কেয়ামতের দিন তাকে এর পরিপূর্ণ শাস্তি প্রদান করেন। আর আল্লাহ তাআলা যখন কোনো সম্প্রদায়কে ভালোবাসেন তখন তাদের তিনি পরীক্ষায় ফেলেন। যে তাতে সন্তুষ্ট থাকে তার জন্য (আল্লাহর) সন্তুষ্টি থাকে। আর যে তাতে অসন্তুষ্ট হয় তার জন্য (আল্লাহর) অসন্তুষ্টি থাকে।’ (তিরমিজি: ২৩৯৬)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে দোয়া কবুল না হওয়ার কারণ উদঘাটন করার, হতাশ না হয়ে ধৈর্যধারণ করার এবং দোয়ার পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়ার তাওফিক দান করুন। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবার দোয়া কবুল করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর