রোববার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

নবীজির আদর্শ হোক জীবনের পাথেয়

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৭:৪৩ এএম

শেয়ার করুন:

নবীজির আদর্শ হোক জীবনের পাথেয়

আজ ১২ রবিউল আউয়াল। প্রিয়নবী হজরত মোহাম্মদ (স.)-এর স্মৃতি বিজড়িত দিন। প্রসিদ্ধ বর্ণনামতে, ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের এই দিনে বিশ্বনবী (.) জন্মগ্রহণ করেন; আবার ৬৩ বছর বয়সে এই দিনেই তিনি ইন্তেকাল করেন। তাই প্রতি বছর ১২ রবিউল আউয়াল সারা বিশ্বের মুসলমানরা নতুন করে তাঁর আদর্শ অনুসরণ দীনের পথে অবিচল থাকার শপথ ব্যক্ত করেন। কারণ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব মহানবী (.)-এর আদর্শ অনুসরণেই রয়েছে মানবতার মুক্তি। এজন্য প্রত্যেক মুমিনের জীবনের একান্ত পাথেয় হওয়া উচিত প্রিয়নবীর আদর্শ।

মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন- ‘অবশ্যই তোমাদের জন্য রয়েছে রাসুলুল্লাহর মধ্যে উত্তম আদর্শ..’ (সুরা আহজাব: ২১) অপর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘বলুন, হে মানবজাতি! নিশ্চয়ই আমি তোমাদের সবার জন্য আল্লাহর রাসুল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছি..’(সুরা আরাফ: ১৫৮)


বিজ্ঞাপন


তাই মানবতার মুক্তির দূত হজরত মুহাম্মদ (.) হলেন সব মানুষের নবী, বিশ্বনবী। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, সম্প্রদায়, দেশ-কাল নির্বিশেষে তিনি হলেন সব মানুষের জন্য মহান আল্লাহ প্রেরিত সর্বশ্রেষ্ঠ মহাপুরুষ; যিনি বিশ্বমানবতার জন্য সর্বোত্তম আদর্শের মূর্ত প্রতীক।

মানবজীবনের সব দিক বিভাগে যাঁকে অনুসরণ করলে মহান আল্লাহর নৈকট্য ভালোবাসা অর্জিত হবে, তিনি হলেন সেই সর্বোত্তম আদর্শ বিশ্বনবী (.) ইরশাদ হচ্ছে- ‘হে রাসুল, আপনি বলে দিন- তোমরা যদি আল্লাহর ভালোবাসা চাও তাহলে আমাকে অনুসরণ করো; তবেই আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন (সুরা ইমরান :৩১)

আল্লাহ তায়ালা তাঁকে রাহমাতুল্লিল আলামিন বা সারা বিশ্বের রহমতস্বরূপ দুনিয়ায় পাঠান। ইরশাদ হয়েছে— ‘হে নবী আমি আপনাকে সারা বিশ্বের জন্য রহমত হিসেবে প্রেরণ করেছি।’ (সুরা আম্বিয়া: ১০৭)

 এজন্যই মহানবী (.) যেদিন, যে মুহূর্তে পৃথিবীতে তাশরিফ এনেছিলেন, সেদিন সেই মুহূর্তটি বিশ্বজগতের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ দিন হিসেবে বিবেচিত। এদিন প্রতিক্ষণেই বিশ্বের প্রতি প্রান্তে অযুত কণ্ঠে প্রতিধ্বনিত হয় তাঁর মহিমাগাথা। মহানবী (.) বিশ্বমানবতার প্রতীক সত্য-সুন্দরের বাণীবাহক। তাঁর কারণেই আরবজাহানে নবজীবন সঞ্চারিত হয়েছিল, নতুন সংস্কৃতির উন্মেষ, নবীন সভ্যতার গোড়াপত্তন হয়েছিল এবং উদ্ভব ঘটে একটি নতুন জীবনব্যবস্থার। নানা গোত্রে বিভক্ত, কলহপ্রিয়, অধঃপতিত, যাযাবর বর্বর আরব জাতি একটি সুমহান জাতিতে পরিণত হয় তাঁর আদর্শ চারিত্রিক মাধুর্যের গুণে। তাঁর সর্বোৎকৃষ্ট চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে মহান স্রষ্টার ঘোষণা- ‘হে রাসুল, আপনি সর্বোন্নত চারিত্রিক মাধুর্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত আছেন।’ (সুরা আল কলম: )


বিজ্ঞাপন


তাই আমাদেরকেও সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী এই মহামানবের আদর্শে বলিয়ান হতে হবে। উৎপীড়িত অত্যাচারিত মানুষের প্রকৃত বন্ধু দরদি ছিলেন তিনি। অনাথ, দাস, কন্যাশিশু, বিধবা নারী গরিব-দুঃখীর দুঃখমোচনে তিনি সদা তৎপর থাকতেন। ইসলামপূর্ব সময়েই তিনি সব মানুষের প্রিয়ভাজন হয়ে ওঠেন। ৬১০ খ্রিস্টাব্দে হেরা গুহায় নবুয়তপ্রাপ্তির আগেই তাঁকে সবাই আল আমিন (বিশ্বস্ত) আস-সাদিক (সত্যবাদী) উপাধিতে ভূষিত করেন।

একবিংশ শতাব্দীতে আমরা নিরাপত্তাহীনতাসহ নানা সংকটে শান্তির অন্বেষায় দিশাহারা। দেশে দেশে মানুষ মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। ব্যাহত হচ্ছে শান্তি, বাড়ছে সন্ত্রাস। একমাত্র মহানবী (.)-এর দেখানো পথ অনুসরণের মধ্য দিয়ে আমরা এই হানাহানির পথ থেকে সরে আসতে পারি। গড়ে তুলতে পারি এক সুন্দর পৃথিবী। আমাদের মনে রাখতে হবে, সব ধরনের নৈরাশ্য ফ্যাসাদ বা সন্ত্রাস দূর করতেই ইসলামের আবির্ভাব। এই কঠিন সময় নবী (.)-এর শিক্ষা আদর্শই আমাদের সঠিক পথ দেখাতে পারে। নবী (.)-এর পদাঙ্ক অনুসরণের মধ্যেই আমাদের যাবতীয় মুক্তি, সমৃদ্ধি কল্যাণ নিহিত।

সুতরাং শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়, নবীজি (.)-এর বাণী হৃদয়ে ধারণ করে তা মেনে চলার মধ্যেই রয়েছে এই দিবস উদযাপনের প্রকৃত তাৎপর্য। আল্লাহ তাওফিক দিন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর