রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর বিষয়ে ইসলাম কী বলে

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯ আগস্ট ২০২৩, ০৬:০৮ পিএম

শেয়ার করুন:

বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর বিষয়ে ইসলাম কী বলে

বৃষ্টিপাত ও বন্যায় দেশের অনেক জায়গায় জনজীবন বিপন্ন। গত কয়েকদিন ধরে অনেক এলাকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে ঈমানদারের বিশেষ দায়-দায়িত্ব আছে। ইসলাম এমন অবস্থায় সহনশীলতার পাশাপাশি সর্বোচ্চ মানবিকতা, সহমর্মিতা ও মহানুভবতার শিক্ষা দেয়।

বিপন্ন মানুষের খোঁজ-খবর নেওয়া ও তাদের অসুবিধাগুলো চিহ্নিত করে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া ধনীদের দায়িত্ব। আল্লাহ তাআলা মানুষকে ধনী-গরিবে বিভক্ত করার মূল কারণও এটাই। গরিব অভাবের কারণে নাফরমানিতে লিপ্ত হয় কি না এবং ধনীরা আল্লাহকে ভুলে হাত গুটিয়ে বসে থাকে কি না—এই পরীক্ষা আল্লাহ তাআলা নেবেন। দুনিয়ার অল্প হায়াতে এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। অন্যথায় বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ যাদের সম্পদশালী করেছেন অথচ তারা সে সম্পদ নিয়ে কার্পণ্য করছে, তাদের ধারণা করা উচিত নয় যে সেই সম্পদ তাদের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে, বরং তা তাদের জন্য অকল্যাণকর হবে। অচিরেই কেয়ামত দিবসে যা নিয়ে কার্পণ্য করছে, তা দিয়ে তাদের গলদেশ শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হবে।’ (সুরা আলে ইমরান: ১৮০)


বিজ্ঞাপন


আল্লাহ তাআলার এক হেকমত হলো- পৃথিবীর প্রতিটি ভূখণ্ডে তিনি গরিবের পাশাপাশি ধনীও রেখেছেন। দরিদ্র জনসংখ্যার প্রয়োজন পূরণে ধনীদের পর্যাপ্ত ধন-সম্পদ দান করেছেন। এই সম্পদ আল্লাহ তাআলাই দান করেছেন। যদি কেউ মনে করে যে, আল্লাহ তাআলার সাহায্য ছাড়াই সে কামাই করেছে, তা হবে অহংকার ও অকৃতজ্ঞতা। এজন্যই আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘তিনিই (আল্লাহ) তোমাদের কান, চোখ ও মন দিয়েছেন (অথচ) তোমরা অল্পই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে থাক। (সুরা মুমিনুন: ৭৮) অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আমি তো তোমাদের পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত করেছি এবং তার মধ্যে তোমাদের জীবিকার ব্যবস্থাও করেছি। তোমরা খুব অল্পই শোকর আদায় করো। (সুরা আরাফ: ১০)

প্রত্যেক অঞ্চলে সম্পদের সুষম বণ্টন হলে পৃথিবীর কোথাও মানুষ দূরের কথা, কোনো প্রাণীরই কষ্ট পাওয়ার কথা নয়। প্রয়োজনের সময় সাহায্য পাওয়ার অধিকার গরিবের রয়েছে। কারণ গরিব আছে বলেই ধনীর অস্থিত্ব আছে। সাহাবি সাদ (রা.) দরিদ্র সাহাবিদের চেয়ে নিজেকে অভিজাত মনে করলে রাসুল (স.) বলেন, ‘দুর্বল লোকদের দোয়ার কারণেই তোমাদের সাহায্য করা হয় এবং রিজিক দেওয়া হয়।’ (বুখারি, মেশকাত: ৫২৩২)

মনে রাখা উচিত যে, বিপন্ন মানুষকে আল্লাহ খুবই ভালোবাসেন। তাদের যারা ভালোবাসে, তাদেরও নিশ্চয়ই তিনি ভালোবাসবেন। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘তোমরা আমাকে দুর্বলদের মধ্যে তালাশ করো। অর্থাৎ তাদের প্রতি সদাচরণের মাধ্যমে আমার সন্তুষ্টি অন্বেষণ করো।’ (আবু দাউদ: ২৫৯৪) এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (স.)-এর কাছে তার অন্তর কঠিন হওয়ার অভিযোগ করলে তিনি তাকে বলেন, ‘তুমি এতিমের মাথায় হাত বুলাও এবং অভাবগ্রস্তকে খানা খাওয়াও।’ (মুসনাদে আহমদ: ৮৫৪)

বিপন্ন মানুষের সহায়তার মাধ্যমে ঈমান পরিপূর্ণ হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তারা তাদের খাবারের প্রতি ভালোবাসা থাকা সত্ত্বেও সে খাবার অসহায়, এতিম এবং বন্দিদের খাওয়ায়।’ (সুরা দাহার: ৮)


বিজ্ঞাপন


মহান আল্লাহ আরও বলেন, ‘তুমি কি জানো, বন্ধুর গিরিপথ কী? এটা হচ্ছে দাসমুক্তি অথবা এতিম আত্মীয়কে বা দরিদ্র নিঃস্বকে দুর্ভিক্ষের দিনে আহার দেওয়া। এরপরই সে ঈমানদারের অন্তর্ভুক্ত হবে...।’ (সুরা বালাদ: ১২-১৭)

এই মর্মে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘ওই ব্যক্তি মুমিন নয়, যে পেট পুরে খায় অথচ তার পাশের প্রতিবেশী না খেয়ে থাকে। (আদাবুল মুফরাদ: ১১২) আসুন, আমরা বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়াই। নিজের সহায়-সম্পদের কিছু অংশ আর্তমানবতার সেবায় উৎসর্গ করি। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মানসিকতা দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর