রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

নবী অবমাননার যে শাস্তি দিতে বলে ইসলাম

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬ আগস্ট ২০২৩, ০৪:৪৫ পিএম

শেয়ার করুন:

নবী অবমাননার যে শাস্তি দিতে বলে ইসলাম

সম্মানিত নবী-রাসুল ও ধর্মীয় গ্রন্থ নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য সমাজে স্থিতিশীলতা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার পরিপন্থী। তাছাড়া ইসলাম এ বিষয়ে আপস করে না। তাই আম্বিয়ায়ে কেরাম ও ধর্মীয় গ্রন্থ অবমাননার বিরুদ্ধে কঠোর আইন থাকা অত্যাবশ্যক।

রাসুলুল্লাহ (স.)-এর অবমানাকারী তথা শাতেমে রাসুলের ব্যাপারে শ্রেষ্ঠ চার মাজহাবেরই ফতোয়া হলো- ১. সে ইসলামের গণ্ডি থেকে বের হয়ে যাবে। ২. তার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।


বিজ্ঞাপন


হানাফি মাজহাবের প্রসিদ্ধ কিতাব ফতোয়ায়ে শামীতে উল্লেখ করা হয়েছে— হানাফি মাজহাবের প্রসিদ্ধ আলেম আবু বকর ইবনে মুনজির (রহ) বলেন, এ ব্যাপারে সকল ওলামায়ে কেরাম একমত যে, যে ব্যক্তি নবী (স.)-কে কটাক্ষ করবে বা গালি দিবে তাকে হত্যা করতে হবে। ইমাম মালিক ইবনে আনাস, লাইস, আহমদ, ইসহাক ও ইমাম শাফেয়ি রাহিমাহুল্লাহও অনুরূপ মত ব্যক্ত করেছেন ৷ (ফতোয়ায়ে শামি: ৪/৪১৭ পৃষ্ঠা)

শাফেয়ি মাজহাবের প্রসিদ্ধ ফকিহ ইমাম খাত্তাবি (রহ.) বলেন, নবী (স.)-এর গালিদাতাকে হত্যা ওয়াজিব হওয়ার ব্যাপারে কোনো দ্বিমত আছে বলে আমার জানা নেই ৷ (আস সারেমুল মাসলুল: ১:৯ পৃষ্ঠা)

মালেকি মাজহাবের আলেমগণ সকলেই একমত যে, কোনো ব্যক্তি যদি নবী (স.)-কে কটাক্ষ করে কিংবা গালি দেয় তাহলে তাকে হত্যা করা জরুরি এবং তার তওবা গ্রহণযোগ্য হবে না। ( আজ জাখিরা ফি ফিকহিল মালেকি: ১১: ৩০ পৃষ্ঠা)

হাম্বলি মাজহাবের ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.)-এর মাজহাবের আলেমগণ সকলেই একমত যে, কোনো ব্যক্তি নবী (স.)-কে কটাক্ষ করলে কিংবা গালি দিলে তাকে হত্যা করা হবে। চাই সে মুসলিম হোক বা কাফের। তাকে তাওবা করারও সুযোগ দেওয়া হবে না ৷ (আস সারেমুল মাসলুল ১:১০ পৃষ্ঠা)


বিজ্ঞাপন


তবে, হত্যার পূর্বে তার থেকে তাওবা চাইতে বলে হানাফি মাজহাব। এ বিষয়ে হানাফি মাজহাবের ফতোয়া হলো— তার নিকট তাওবা তলব করা হবে অথবা সে যদি তাওবা করে, তাহলে তা গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হবে।

ফিকহে মালেকি ও হাম্বলি মতানুযায়ী শাতেমের তাওবা কবুল হবে না। তার থেকে তাওবা চাওয়াও হবে না এবং সে নিজে তাওবা করলেও তা কবুল হবে না। তাঁদের সিদ্ধান্ত হলো, তাকে হত্যা করতে হবে।

শাফেয়ি মাজহাবের ইমামদেরর থেকে বিভিন্ন বক্তব্য পাওয়া গেলেও মাজহাবের ফতোয়া হলো— শাতেমের তাওবা গ্রহণযোগ্য হবে। সুতরাং তার থেকে তাওবা চেয়ে ইসলামে ফিরে আসতেও বলা হবে। এবং সে নিজে তাওবা করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে।

হত্যা করার দায়িত্ব কার
ইমাম আবু হানিফা (রহ) এবং ইমাম শাফেয়ি (রহ)-এর মতানুসারে তাকে হত্যা করবে রাষ্ট্রপ্রধান বা তার প্রতিনিধিরা। ইসলামি হুকুমত (শাসন ব্যবস্থা) না থাকলে কীভাবে তা সম্ভব হবে— এ বিষয়ে আলেমদের বক্তব্য হলো- ইসলামি হুকুমত না থাকলে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার জন্য রাষ্ট্রপক্ষকে চাপ দেবে মুসলিম উম্মাহ। তারা নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করবে। নিজের হাতে নবী অবমাননাকারীকে হত্যা করবে না। কারণ এ অনুমতি থাকলে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে।

নবী (স.)-এর অবমাননার শাস্তি সম্পর্কে কোরআনের আয়াত
১. নিশ্চয়ই যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাদের দুনিয়া ও আখেরাতে লানত করেন এবং তিনি তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।’ (সুরা আহজাব: ৫৭)
২. ‘তারা কি জানে না, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের বিরোধিতা করে, তার জন্য অবশ্যই জাহান্নাম, তাতে সে চিরকাল থাকবে। এটা মহালাঞ্ছনা।’ (সুরা তাওবা: ৬৩)
৩. ‘আর যে হেদায়াত পাওয়ার পর রাসুলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মুমিনদের বিপরীত পথ অনুসরণ করে, আমি তাকে ফেরাব যেদিকে সে ফেরে এবং তাকে প্রবেশ করাব জাহান্নামে। আর আবাস হিসেবে তা খুবই মন্দ।’ (সুরা নিসা: ১১৫)

নবী (স.)-এর অবমাননার শাস্তি সম্পর্কে হাদিস
১. কাব বিন আশরাফ নামের একজন ইহুদি যে ইসলাম ও মুসলিমদের প্রতি অত্যন্ত শত্রুতা ও হিংসা পোষণ করত। সে নবী (স.)-কে কষ্ট দিত এবং তাঁর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যভাবে যুদ্ধের হুমকি দিয়ে বেড়াত। এমনকি মদিনায় ফিরে সাহাবায়ে কেরাম (রা.)-দের স্ত্রীদের ব্যাপারে বাজে কবিতা বলতে শুরু করে এবং কটূক্তির মাধ্যমে তাঁদের ভীষণ কষ্ট দিতে থাকে। তার এ দুর্ব্যবহারে অতিষ্ঠ হয়ে রাসুল (স.) কাব বিন আশরাফকে হত্যার নির্দেশ দিলে মুহাম্মদ ইবনে মাসলামাহ (রা.)-এর নেতৃত্বে কয়েকজন সাহাবি তাকে হত্যা করেন। (আর রাহিকুল মাখতুম, পৃ- ২৮৫)
২. আবু রাফে নামের এক ইহুদিকে রাসুল (স.) এজন্যই হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন, সে রাসুল (স.)-এর বিরুদ্ধে সব সময় কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করত। আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) ‘আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া’ গ্রন্থে ইমাম বুখারি (রহ.)-এর সূত্রে বর্ণনা করেন, রাসুল (স.) আবু রাফেকে হত্যা করার জন্য বেশ কজন আনসারি সাহাবিকে নির্বাচিত করলেন এবং আবদুল্লাহ ইবনে আতিক (রা.)-কে তাঁদের দলপতি নিয়োগ করলেন। আবু রাফে রাসুল (স.)-কে কষ্ট দিত এবং এ কাজে অন্যদের সাহায্য করত। (বুখারি: ৪০৩৯, ৪০৪০)
৩. মুজাহিদ (রহ.) বলেন, ওমর (রা.)-এর দরবারে এমন এক ব্যক্তিকে আনা হলো, যে রাসুল (স.)-কে গালি দিয়েছে। ওমর (রা.) তাকে হত্যা করেন। অতঃপর বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ বা কোনো নবীকে গালি দেবে তোমরা তাকে হত্যা করবে। (সারিমুল মাসলুল: ৪/৪১৯)

বর্তমান যুগে নবী অবমাননা ও ধর্মীয় গ্রন্থ অবমাননা বেড়ে গেছে। এ অবস্থায় শাসকদের জন্য আবশ্যক হলো এ ধরনের লোকদের চিহ্নিত করে আইনের মাধ্যমে তাদের মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করা। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে যার যার দায়িত্ব যথাযথ পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর