মহানবী (স.) প্রত্যেক নামাজের পর বিভিন্ন দোয়া পাঠ করতেন। বিশেষ করে ফজর ও মাগরিবের নামাজের পর কিছু দোয়া পাঠ করার অনেক ফজিলত বর্ণিত হয়েছে হাদিসে। এ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু দোয়া নিচে তুলে ধরা হলো।
১. জাহান্নাম থেকে মুক্তির দোয়া সাত বার: اللَّهُمَّ أَجِرْنِي مِنَ النَّارِ উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আজিরনি মিনান নার। অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করুন।’ এই দোয়া সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি ফজর ও মাগরিবের পর কারো সাথে কথাবার্তা না বলে সাতবার দোয়াটি পাঠ করে এবং ওই দিনে বা রাতে তার মৃত্যু হয় তাহলে সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করবে। (আবু দাউদ: ৫০৭৯)
বিজ্ঞাপন
২. জান্নাত লাভের দোয়া তিন বার: رَضيتُ بالله رَبّاً ، وبالإسلامِ ديناً ، وبمحمَدٍ نَبِيًّا وَّرَسولاً উচ্চারণ: রাদিতু বিল্লাহি রাব্বাউঁ ওয়া বিল ইসলামী দ্বিনাউঁ ওয়া বিমুহাম্মাদিন নাবিয়্যাঁও ওয়া রাসুলা’। অর্থ: ‘আমি আল্লাহকে রব, ইসলামকে দ্বীন এবং মুহাম্মদ (স.)-কে রাসুল হিসেবে সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নিয়েছি।’ আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন- যে ব্যক্তি দোয়াটি পাঠ করবে, তার জন্যে জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়। (মুসলিম: ১৮৮৪; আবু দাউদ: ১৫২৯; মুজামু কাবির: ৮৩৮; মুজামুস সাহাবাহ: ১৬৯৬) অন্য বর্ণনায় রয়েছে, ‘যে ব্যক্তি সকাল-বিকেল তিনবার এই দোয়া পড়বে, কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তাকে নেকি বৃদ্ধির দ্বারা সন্তুষ্ট করবেন।’ (তিরমিজি: ২/১৭৬)
৩. সকল অনিষ্ট থেকে রক্ষার জন্য নির্দিষ্ট সুরা পাঠ: সুরা ইখলাস, ফালাক ও সুরা নাস—প্রত্যেকটি তিন বার করে ফজর ও মাগরিবের পর পড়া। রাসুল (স.) বলেন, সকাল-সন্ধ্যায় এগুলো পাঠ করলে সকল প্রকার অনিষ্টতা থেকে হেফাজতের জন্য যথেষ্ট হবে। (তিরমিজি: ৩৫৭৫)
৪. সাইয়্যিদুল ইস্তেগফার পাঠ করা। ইস্তেগফারটি হলো— اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لاَ إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ، خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ، وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ، أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ، أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ، وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي، إِنَّهُ لاَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْت অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আপনি আমার প্রতিপালক। আপনি ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন। আর আমি আপনার গোলাম। আমি আপনার ওয়াদা-প্রতিশ্রুতির ওপর যথাসাধ্য আছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্টতা থেকে আশ্রয় চাচ্ছি। আমি আমার ওপর আপনার অনুগ্রহ স্বীকার করছি। আবার আমার গুনাহের কথাও স্বীকার করছি। অতএব, আমাকে ক্ষমা করে দিন। কেননা আপনি ছাড়া আর কেউ গুনাহসমূহ ক্ষমা করতে পারবে না।’ রাসুল (স.) বলেন, যদি কেউ দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে সকাল-সন্ধ্যা ইস্তেগফারটি পড়ে এবং ওই দিনে বা রাতে ইন্তেকাল করে, তবে সে জান্নাতি হবে।’ (বুখারি: ৬৩০৬)
৫. সকল অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাওয়ার দোয়া তিন বার: بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لاَ يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الأَرْضِ وَلاَ فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ উচ্চারণ: বিসমিল্লা-হিল্লাযি লা ইয়াদুর্রু মা‘আস্মিহি শাইয়ূন ফিল আরদি, ওয়ালা ফিস্ সামায়ি ওয়া হুয়াস্ সামিউল আলিম। অর্থ: ‘আল্লাহ তাআলার নামে যাঁর নামের বরকতে আকাশ ও মাটির কোনোকিছুই কোনো অনিষ্ট করতে পারে না। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী।’ প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় যে ব্যক্তি এ দোয়াটি তিনবার পাঠ করবে কোনোকিছুই তার কোনো অনিষ্ট করতে পারবে না।’ (তিরমিজি: ৩৩৮৮; ইবনে মাজাহ: ৩৮৬৯) ফজর নামাজের পর দোয়া
বিজ্ঞাপন
৬. ঋণ ও সকল দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির দোয়া: اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الهَمّ وَالْحَزَنِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ الْعَجْزِ وَالْكَسَلِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ الْجُبْنِ وَالْبُخْلِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ غَلَبَةِ الدَّيْنِ وَقَهْرِ الرِّجَالِ উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আ’উযুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হুযনি, ওয়া আউযুবিকা মিনাল আজযি ওয়াল কাসালি ওয়া আউযুবিকা মিনাল জুবনি ওয়াল বুখলি, ওয়া আউযুবিকা মিন গালাবাতিদ-দায়নি ওয়া কাহরির রিজাল। অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট যাবতীয় চিন্তা-ভাবনা হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি, আমি আপনার নিকট দুর্বলতা ও অলসতা হতে আশ্রয় কামনা করছি, আপনার নিকট কাপুরুষতা ও কৃপণতা হতে নাজাত কামানা করছি এবং আমি আপনার নিকট ঋণভার ও মানুষের দুষ্ট প্রভাব হতে পরিত্রাণ চাচ্ছি।’ রাসুল (স.) এ দোয়াটি শিক্ষা দিয়ে আবু উমামা (রা.)-কে বলেন- তুমি সকাল- সন্ধায় দোয়াটি পড়বে। আল্লাহ তোমার দুশ্চিন্তা দূরীভূত করবেন এবং তোমার কর্জ পরিশোধের ব্যবস্থা করবেন। আবু উমামা (রা.) বলেন, অতঃপর আমি ওইরূপ আমল করি, যার ফলশ্রুতিতে আল্লাহ তাআলা আমার চিন্তা-ভাবনা বিদূরিত করেন এবং ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করে দেন।’ (আবু দাউদ: ১৫৫৫)
৭. ফজর ও মাগরিবের পর আউযুবিল্লাহিস সামিয়িল আলিমি, মিনাশ শাইতানির রজিম ৩ বার পড়ে সূরা হাশরের শেষ ৩ আয়াত ১ বার পড়া। আয়াতগুলো হলো—هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ هُوَ الرَّحْمَنُ الرَّحِيمُ هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْمَلِكُ الْقُدُّوسُ السَّلَامُ الْمُؤْمِنُ الْمُهَيْمِنُ الْعَزِيزُ الْجَبَّارُ الْمُتَكَبِّرُ سُبْحَانَ اللَّهِ عَمَّا يُشْرِكُونَ هُوَ اللَّهُ الْخَالِقُ الْبَارِئُ الْمُصَوِّرُ لَهُ الْأَسْمَاء الْحُسْنَى يُسَبِّحُ لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ অর্থ: ‘তিনিই আল্লাহ তা'আলা, যিনি ব্যতিত কোনো উপাস্য নেই; তিনি দৃশ্য ও অদৃশ্যকে জানেন, তিনি পরম দয়ালু, অসীম দাতা। তিনিই আল্লাহ, তিনি ব্যতিত কোনো উপাস্য নেই। তিনিই একমাত্র মালিক, পবিত্র, শান্তি ও নিরাপত্তাদাতা, আশ্রয়দাতা, পরাক্রান্ত, প্রতাপান্বিত, মাহাত্মশীল। তারা যাকে অংশীদার করে আল্লাহ তা' আলা তা থেকে পবিত্র। তিনিই আল্লাহ তাআলা, স্রষ্টা, উদ্ভাবক, রূপদাতা, উত্তম নামগুলো তাঁরই। নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলে যা কিছু আছে, সবই তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করে। তিনি পরাক্রান্ত প্রজ্ঞাময়। (সুরা হাশর: ২২- ২৪) ‘যে ব্যক্তি এই আমল করবে আল্লাহ তায়ালা তাঁর জন্য সত্তর হাজার রহমতের ফেরেশতা নিযুক্ত করে দিবেন। তাঁরা সন্ধ্যা পর্যন্ত পাঠকারীর জন্য রহমতের দু'আ করবে। সেদিন সে মারা গেলে শহিদের মৃত্যু হাসিল হবে । যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় এভাবে পাঠ করবে, সে-ও সকাল পর্যন্ত এই মর্তবা লাভ করবে।’ (তিরমিজি: ২৯২২) মাগরিব নামাজের পর দোয়া
উল্লেখিত দোয়াগুলো ফজর ও মাগরিব নামাজের পর পড়লে বিশেষ ফজিলত লাভ হবে বলে হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে। তাই আমাদের চেষ্টা করতে হবে যেন দোয়াগুলো নিয়মিত সকাল-সন্ধ্যা পাঠ করতে পারি। অবশ্য যেকোনো দোয়া করলে সমস্যা নেই। যেমন এই দোয়াটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ— سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِهِ উচ্চারণ: সুবহানাল্লা-হি ওয়াবিহামদিহি। অর্থ: ‘আল্লাহ তা'আলার সপ্রশংস পবিত্রতা বর্ণনা করছি।’ এ সম্পর্কে রাসুল (স.) বলেন, যে ব্যক্তি দৈনিক ১০০ বার তাসবিহটি পাঠ করবে তাঁর পাপগুলো মুছে ফেলা হবে, যদিও তা সমুদ্রের ফেনারাশির সমান হয়ে থাকে। (বুখারি: ৬৪০৫)
এছাড়াও যারা অসুস্থ তারা এই দোয়াটি পড়বেন— اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْبَرَصِ وَالْجُنُونِ وَالْجُذَامِ وَمِنْ سَيِّئِ الأَسْقَامِ উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিনাল বারাসি, ওয়াল জুনুনি, ওয়াল জুযামি, ওয়া মিন সাইয়্যিইল আসকাম। অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই শ্বেত, উন্মাদনা, কুষ্ঠ এবং সব দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে।’ (আবু দাউদ: ১৫৫৪) সুস্থ হওয়ার দোয়া
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে উল্লেখিত দোয়াগুলো সকাল-সন্ধ্যায় নিয়মিত পাঠ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

