প্রত্যেকের জীবনে সংকট আসে। অনেকগুলো বিপদ একসঙ্গে আসে। এমন অবস্থায় মানুষ অস্থির হয়ে পড়ে এবং ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে। অথচ মহান আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে তাঁর কাছে সমাধান চাইলে তিনি বান্দাকে ফিরিয়ে দেন না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব।’ (সুরা গাফির: ৬০)
আল্লাহ সাড়া দেওয়া মানে বান্দার কোনো চিন্তার প্রয়োজন নেই। তাই আমাদের দায়িত্ব হলো— যেকোনো প্রয়োজনে এবং যেকোনো সংকটময় পরিস্থিতিতে দয়াবান আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া। প্রিয়নবী (স.) বিভিন্ন সময় ও প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন দোয়া করেছেন এবং উম্মতকে শিক্ষা দিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে কঠিন পরিস্থিতি থেকে মুক্তিলাভের দোয়া। অবশ্য এরকম একাধিক দোয়ার উল্লেখ রয়েছে কোরআন-হাদিসে। ওখান থেকে খুব গুরুত্বপূর্ণ দোয়াগুলো নিচে তুলে ধরা হলো। আমরা মুখস্থ করে নেব ইনশাআল্লাহ।
বিজ্ঞাপন
১. اللهمَّ إنِّي أعُوذُ بِكَ مِنْ جَهْدِ الْبَلَاءِ، وَدَرَكِ الشَّقَاءِ، وَسُوءِ الْقَضَاءِ، وَشَمَاتَةِ الْأَعْدَاءِ উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন জাহদিল বালা-ই, ওয়া দারাকিশ শাকা-ই, ওয়া সু-ইল কদা-ই, ওয়া শামাতাতিল আ‘দা-ই।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই কঠিন বিপদ, দুর্ভাগ্যে পতিত হওয়া, ভাগ্যের অশুভ পরিণতি এবং শত্রুর আনন্দিত হওয়া থেকে।’ আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, আল্লাহর রাসুল (স.) এই দোয়াটি পড়ে মহান আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতেন। (বুখারি: ৬৩৪৭; মুসলিম: ২৭০৭)
২. اللَّهمَّ لا سَهلَ إلَّا ما جَعَلتَه سَهلًا، وأنتَ تَجعَلُ الحَزْنَ إذا شِئتَ سَهلًا উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা লা সাহলা ইল্লা মা জায়ালতাহু সাহলান, ওয়াআনতা তাজআলুল হুযনা সাহলান ইযা শিইতা।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ, কোনো বিষয় সহজ নয়, যদি না তুমি সহজ করে দাও। যখন তুমি চাও তখন তুমি মুশকিলকে সহজ করে দাও।’ আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, আল্লাহর রাসুল (স.) এই দোয়াটি করতেন। (ইবনে হিব্বান: ৯৭৪)
৩. يَا حَيُّ يَا قَيُّومُ بِرَحْمَتِكَ أَسْتَغِيثُ উচ্চারণ: ‘ইয়া হাইয়্যু ইয়া কাইয়্যুমু বিরাহমাতিকা আসতাগিছ।’ অর্থ: ‘হে চিরঞ্জীব! হে বিশ্ব চরাচরে ধারক! আমি তোমার রহমতের আশ্রয় প্রার্থনা করছি।’ আনাস (রা.) বলেন, ‘যখন রাসুলুল্লাহ (স.)-এর ওপর কোনো কাজ কঠিন হয়ে দেখা দিত, তখন তিনি দোয়াটি পড়তেন। (তিরমিজি, মেশকাত: ২৪৫৪)
৪. যেকোনো কঠিন সময়ে দোয়া ইউনুস পাঠ করা বেশ কার্যকর আমল। দোয়া ইউনুস হলো— لَّاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنۡتَ سُبۡحٰنَکَ اِنِّیۡ کُنۡتُ مِنَ الظّٰلِمِیۡنَ উচ্চারণ: ‘লাইলা-হা ইল্লা আনতা সুবহা-নাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ্জালিমিন।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! তুমি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, তুমি মহাপবিত্র। নিশ্চয়ই আমি সীমা লঙ্ঘনকারীদের অন্তর্ভুক্ত।’ (সুরা আম্বিয়া: ৮৭) দোয়া ইউনুস সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, মাছের পেটে ইউনুস (আ.) এ দোয়া পড়ে আল্লাহকে ডেকে ছিলেন এবং মুক্তি পেয়েছিলেন। যদি কোনো মুসলিম বিপদে পড়ে এ দোয়া পাঠ করে, আল্লাহ তা কবুল করবেন।’ (আহমদ, তিরমিজি, মেশকাত: ২২৯২)
বিজ্ঞাপন
৫. بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لاَ يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلاَ فِي السّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ উচ্চারণ: বিসমিল্লাহিল্লাযী লা ইয়াদ্বুররু মা‘আ ইসমিহী শাইউন ফিল আরদ্বি ওয়ালা ফিস সামা-ই, ওয়াহুয়াস সামী‘উল ‘আলীম। অর্থ: ‘আল্লাহর নামে, যার নাম (স্মরণের) সাথে আসমান ও জমিনে কোনো কিছুই ক্ষতি করতে পারে না। আর তিনি সর্বশ্রোতা, মহাজ্ঞানী।’ উসমান বিন আফফান (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (স.)-কে বলতে শুনেছি যে, ‘প্রতিদিন সকালে ও সন্ধ্যায় যে বান্দা তিনবার এ দোয়া পাঠ করবে কিছুই তার অনিষ্ট করতে পারবে না।’ (সুনানে তিরমিজি: ৩৩৮৮, ইমাম তিরমিজি বলেন, হাদিসটি হাসান গরিব সহিহ; ইবনুল কাইয়্যেম জাদুল মাআদ গ্রন্থে (২/৩৩৮)
৬. إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ اللَّهُمَّ أْجُرْنِي فِي مُصِيبَتِي وَأَخْلِفْ لِي خَيْرًا مِنْهَا উচ্চরণ: ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন, আল্লাহুম্মা আজিরনি ফি মুসিবাতি ওয়া আখলিফ-লি খাইরাম মিনহা’ অর্থ: ‘নিশ্চয় আমরা সবাই আল্লাহর জন্য। এবং আমরা তারই দিকে ফিরে যাব। হে আল্লাহ! আমাকে আমার এ বিপদে ছাওয়াব দান করুন। এবং এর চেয়ে উত্তম বস্তু বিনিময়ে দান করুন।’ উম্মে সালমা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (স.)–কে বলতে শুনেছি, মানুষের ওপর কোনো বিপদ এলে যেন এই দোয়াটি পাঠ করে, তখন আল্লাহ তাআলা তাকে তার বিপদ দূর করে দেন এবং সে যা কিছু হারিয়েছে, তার বদলে তার চেয়ে উত্তম কিছু দান করেন।’ (সহিহ মুসলিম: ১৯৯৮) কঠিন পরিস্থিতিতে দোয়া, বিপদ থেকে মুক্তির দোয়া, সমস্যা সমাধানের দোয়া
আমরা চেষ্টা করব- যেকোনো কঠিন পরিস্থিতিতে উল্লেখিত সবগুলো দোয়া পড়তে। আল্লাহ তাআলা আমাদের দোয়া ফিরিয়ে দেবেন না ইনশা আল্লাহ।

