শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

সম্ভাবনাময়ী ব্রিটিশ বাংলাদেশি নাজমা রহমান 

নজরুল ইসলাম
প্রকাশিত: ০৩ জুন ২০২৩, ১২:৩৪ পিএম

শেয়ার করুন:

সম্ভাবনাময়ী ব্রিটিশ বাংলাদেশি নাজমা রহমান 

ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি সুনাকের ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হওয়া যুক্তরাজ্যের সামাজিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। যুক্তরাজ্যে এ যেন ব্রিটিশ দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিবিদদের জয় জয়কার।  স্কটল্যান্ডের প্রথম মন্ত্রী হিসেবে হুমজা ইউসুফকে নিয়োগের পর যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে দক্ষিণ এশীয় নেতাদের উত্থানের বিষয়টি সকলের দৃষ্টি কেড়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার অনেক রাজনীতিবিদ যুক্তরাজ্যের রাজনৈতিক দল এবং স্থানীয় সরকারগুলিতে শীর্ষ পদে অধিষ্ঠিত থাকায়, যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে দক্ষিণ এশীয়দের উত্থান অনস্বীকার্য। 

আজ একজন ব্রিটিশ বাংলাদেশি সম্ভাবনাময়ী লেবার রাজনীতিবিদ কমিউনিটি ও নারী নেত্রীকে নিয়ে লিখতে চাই। যিনি সকল প্রতিকূলতাকে ভেদ করে সামনের দিকে এগিয়ে চলছেন। যাকে নিয়ে ইতিমধ্যে ব্রিটিশ বাংলাদেশি কমিউনিটি গৌরববোধ করছে। 


বিজ্ঞাপন


কাউন্সিলর নাজমা রহমান যিনি অদ্য যুক্তরাজ্যের লন্ডন বরো অফ ক্যামডেন এর মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। মেয়র নাজমা রহমানকে নিয়ে লিখার পূর্বে ব্রিটিশ রাজনীতির প্যাটার্ন একটু জেনে নিলে ভালো।

যুক্তরাজ্যের রাজনীতি একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্রের মধ্যে কাজ করে যেখানে কার্যনির্বাহী ক্ষমতা আইন প্রণয়ন এবং সামাজিক সম্মেলন দ্বারা একক সংসদীয় গণতন্ত্রে অর্পণ করা হয়। 

এখান থেকে একজন বংশগত সম্রাট, বর্তমানে চার্লস তৃতীয়, রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক নির্বাচিত সরকার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। 

যুক্তরাজ্যের রাজনৈতিক ব্যবস্থার সাংগঠনিক চার্ট ইউনাইটেড কিংডমের পার্লামেন্টারি ব্যবস্থা ব্রিটিশ সরকার দ্বারা কার্যকরী ক্ষমতা প্রয়োগ করে, যা রাজার পক্ষে নিযুক্ত হয়।


বিজ্ঞাপন


পাঠক, কাউন্সিলর নাজমা রহমান একজন সম্ভাবনাময়ী উদীয়মান রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ব্রিটেনে লেবার পার্টির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। লেবার পার্টির কিলবার্ন এবং ওয়েস্ট হ্যামস্টেড এলাকায় কাজ করছেন। এই অঞ্চল থেকেই রেজওয়ানা সিদ্দিক টিউলিপ ব্রিটিশ পার্লামেন্টে এমপি নির্বাচিত হন। 

মেয়র নাজমা রহমানের আজকের এই সাফল্যকে ব্রিটেনের মূলধারার রাজনীতিতে আরেকজন বাংলাদেশি নারীর সাফল্য বলে মনে করছে ব্রিটেনে বাঙালি কমিউনিটি। তার এমন সফলতা নিয়ে কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ উচ্ছ্বসিত।

পাঠক, জীবনে বড় হতে হলে নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস বাড়াতে হবে। বড় হতে হলে যেমন দরকার আত্মবিশ্বাস তেমন দরকার চিন্তা ভাবনার পরিবর্তন। সব সময় বড় চিন্তা করতে হবে, আকাঙ্ক্ষাকে সামনের দিকে নিতে হবে। সবকিছু যে নিজের মনের মত ঘটবে তা নয়।

মেয়র নাজমার রহমানের কথা ভাবলে মনে পড়ে যায় মান্নাদের গানের সেই লিরিক্স- এই কূলে আমি আর ঐ কূলে তুমি মাঝখানে নদী ঐ বয়ে চলে যায়। আজাদুর রহমান আজাদ ও নাজমা রহমান, তারা স্বামী-স্ত্রী। সিলেট সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর আজাদুর রহমানের সহধর্মিণী। জনসেবার মহান ব্রত নিয়ে দুজন দুই দেশে জনপ্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। রাজনীতিতে ইহা স্বামী স্ত্রীর একটা চমকই মনে হচ্ছে।

একান্ত আলাপচারিতায় কাউন্সিলর মেয়র নাজমা রহমানের কাছ থেকে জানতে পেরেছি, তিনি গত ৪ বছর ধরে কাউন্সিলর হিসেবে ওয়েস্ট হ্যাম্পস্টেড এলাকায় কাজ করছেন। গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য এ বছর তিনি যুক্তরাজ্যের লোকাল গভর্নমেন্ট ইনফরমেশন ইউনিটের রেজিলিয়েন্স এন্ড রিকভারি’ ক্যাটাগরিতে সেরা কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। 

তিনি স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্বেগের কথা শুনেছেন, সঠিক নেতৃত্বের মাধ্যমে তাদের সমস্যা গুলো মোকাবেলা করার চেষ্টা করেছেন, শিওর স্টার্ট এবং হোম স্টার্ট পরিষেবাগুলি ব্যবহার এসব সেবা রক্ষার জন্য লড়াই করেছেন। কমিউনিটি ইস্যু সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার, ভোটারদের বাড়ি লিফলেট বিতরণ (কোভিড নিরাপদ) করোনাকালীন সময়ে জনসচেতনতা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। 

করোনা মহামারী কালীন সময়ে তিনি গর্ভাবস্থায় কাজ করেছেন। বেবি ক্যারিয়ারে তার শিশু বাচ্চাকে নিয়ে তিনি Cllr অ্যান ক্লার্ক লন্ডন অ্যাসেম্বলি মেয়র সাদিক খান এবং স্থানীয় কাউন্সিলরদের জন্য কাজ করেছেন। 

মাতৃত্বকালীন ছুটিতে তিনি কাজ করে একটি উদাহরণ সৃষ্টি করছেন। মহামারী চলাকালীন এবং ছুটিতে থাকাকালীন অনলাইনে লেবার গ্রুপের জন্য কাজ করেছেন। এছাড়াও মহামারী চলাকালীন কমিউনিটির লোকদের কাছে খাবার পৌঁছে দিয়েছেন। ওয়ার্ডে স্থানীয় কমিউনিটি ইভেন্টের আয়োজন, আন্তর্জাতিক নারী দিবস, মায়ের গ্রুপের সাথে মা দিবসের অনুষ্ঠানের আয়োজন, খাদ্য ভাগাভাগি এবং খাদ্যের অপচয় রোধ করতে শেরিফ সেন্টারে (কমিউনিটি স্পেস) একটি কমিউনিটি ফ্রিজ ইন্সটল ও অর্থায়ন করতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন। 

খাদ্য ব্যাংকের জন্য স্থানীয় কমিউনিটি সেন্টারের অর্থায়ন। প্রতিটি রাস্তায় তার ওয়ার্ডে তহবিলযুক্ত দ্রুত বৈদ্যুতিক গাড়ির চার্জিং (EVC)। তার নিজ ওয়ার্ড এবং পার্শ্ববর্তী ওয়ার্ডের স্থানীয় পার্কগুলিকে উন্নত করার জন্য অর্থায়ন উল্লেখযোগ্য কাজে ভূমিকা রেখেছেন।

অদ্য এক জমকালো আনুষ্ঠানিকতায় কাউন্সিলর নাজমা রহমান Camden Town Hal হলে বরো অফ ক্যামডেনের মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণ করছেন। জমকালো সেই অনুষ্ঠানে তিনি আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। আনন্দঘন সেই মুহূর্তে আমি জানতে চেয়েছিলাম তার অনুভূতি। মেয়র নাজমা রহমান বলেন, আমি ক্যামডেনের মেয়র হতে পেরে আনন্দিত। 

আশা করি যে, ক্যামডেনের মেয়র- বরোর প্রথম নাগরিক হিসাবে, আমি BAME ব্যাকগ্রাউন্ডের ছোট বাচ্চাদের সাথে অন্যান্য মায়েদের অনুপ্রাণিত করব এবং তাদের দেখাব যে আপনি পরিবারের ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং সফলভাবে কাজ করতে পারেন। আমি তরুণদের তাদের স্বপ্ন অনুসরণ করতে এবং আত্ম-উন্নতির জন্য চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে অনুপ্রাণিত করতে চাই। 

তাই, আমি ঘোষণা করতে চাই যে আমার মেয়রের দাতব্য সংস্থাগুলি হবে: দ্য ডিউক অফ এডিনবার্গ অ্যাওয়ার্ডস এবং ইয়াং ক্যামডেন ফাউন্ডেশন। কেন এই দাতব্য সংস্থাগুলোকে তিনি বেছে নিলেন এমন প্রশ্নের উত্তরে নাজমা রহমান বলেন, আমি এই দাতব্য সংস্থাগুলিকে বেছে নিয়েছি কারণ আমি তরুণদের তাদের স্বপ্ন অর্জনে সমর্থন করার বিষয়ে উৎসাহী। DOE এবং YCF পুরস্কার, তরুণদের তাদের দক্ষতা ও প্রতিভা অর্জন ও বৃদ্ধি করতে উৎসাহিত করবে এবং চ্যালেঞ্জে অংশ নেওয়ার মাধ্যমে তাদের পূর্ণ সম্ভাবনায় পৌঁছাতে উৎসাহিত করবে।

পাঠক, দায়িত্ব হচ্ছে কোনো যথোপযুক্ত ব্যক্তি বা সংস্থা কর্তৃক প্রদত্ত নীতিমালা বা বিধিনিষেধ, যেটি করতে মানুষ বাধ্য। দায়িত্বশীল ব্যক্তিকে যা করতেই হবে তা-ই দায়িত্ব। না করলে জবাবদিহি করতে হবে। অন্য দিকে কর্তব্য হচ্ছে- যেটি মানুষের করা উচিত; কিন্তু না করলে সমস্যা হতে পারে বা না-ও হতে পারে। সাধারণত আগ্রহ ও আন্তরিকতাসহকারে দায়িত্ব সম্পাদন করাই কর্তব্যপরায়ণতা। কাউন্সিলর মেয়র নাজমা রহমানকে নিয়ে প্রাসঙ্গিক আলোচনা করতে গিয়ে যা বের হয়ে এসেছে তিনি একজন দায়িত্ব সচেতন কর্তব্যপরায়ণ তরুণ উদ্যমী সম্ভাবনাময়ী নারী নেত্রী।

একজন সম্ভাবনাময়ী নারীকে লিখতে গিয়ে তার সম্পর্কে অনেক কিছু জানার সুযোগ হয়েছে আমার, যা আপনাদের সাথে শেয়ার করার opportunity হাতছাড়া করতে চাইনা। ফ্র্যাঙ্ক লয়েড (আমেরিকান লেখক ও শিল্পী)  লিখেছেন সাফল্যের জন্য তোমাকে ৩টি মূল্য দিতে হবে: ভালোবাসা, কঠোর পরিশ্রম, আর স্বপ্নকে বাস্তব হতে দেখার জন্য ব্যর্থতার পরও কাজ করে যাওয়া।” মেয়র নাজমা রহমান সকল প্রতিকূলতা ভেদ করে সেই দিকেই ছুটছেন।

লেখক: জার্নালিস্ট, ওয়ার্কিং ফর ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (NHS) লন্ডন। মেম্বার, দ্য ন্যাশনাল অটিস্টিক সোসাইটি ইউনাইটেড কিংডম।

একে

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর