শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

যে কারণে টিকটক নিষিদ্ধ করতে যাচ্ছে ইউরোপ-আমেরিকা

রহমান মৃধা
প্রকাশিত: ১২ এপ্রিল ২০২৩, ০৫:১৬ এএম

শেয়ার করুন:

যে কারণে টিকটক নিষিদ্ধ করতে যাচ্ছে ইউরোপ-আমেরিকা

ছোটবেলায় হাডুডু খেলেছি এবং খেলা দেখেছি, যা সত্যিই নিঃসন্দেহে সে সময়ের সব ধরনের খেলাধুলার মধ্যে অন্যতম বিনোদনমূলক খেলা ছিল। তখন ভাবনায় আসেনি আমরা বাঙালি জাতি কাউকে সামনের দিকে যেতে বাধাগ্রস্ত করি। সময়ের সাথে আমাদের আচরণের পরিবর্তন হয়েছে বিধায় একটার সঙ্গে অন্যটার তুলনা করি। তাই এ ধরনের মন্তব্য।

যাই হোক, আমরা না হয় হাডুডু খেলায় অভ্যস্ত। সেক্ষেত্রে কারো ভালো সহ্য করতে পারি না, কিন্তু কী অবস্থা গোটা বিশ্বের? তারা তো আর হাডুডু খেলে না। তবে কেন তারা একে অপরের পিছে লেগে আছে? যখনই কেউ নতুন কিছু উদ্ভাবন করছে তখনই তাকে ক্রেডিট না দিয়ে বরং নানা ধরনের অজুহাত খুঁজে নিষেধাজ্ঞা জারি করছে।


বিজ্ঞাপন


টিকটক তেমন একটি অ্যাপস যা উত্তর থেকে দক্ষিণ মেরু এবং পশ্চিম থেকে পূর্ব, এমন কোনো জায়গা নেই পৃথিবীর মানুষ ব্যবহার করছে না। টিকটক যুগের সব বিনোদনের মধ্যে একটি যা ব্যবহার করছে বিশ্বের এক বিলিয়নের বেশি মানুষ। অথচ সেটাকে বন্ধ করতে উঠেপড়ে লেগেছে আমেরিকা, ইউরোপ। আমেরিকা ও ইউরোপের কথায় নিরাপত্তা ইস্যুর হুমকি টিকটক। তাই নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে তারা।

সত্যিকারার্থে এটাই কি কারণ? আমি বলব, না। টিকটক চীনের উদ্ভাবন- এটাই মূল কারণ। চীন অতীতে লো কোয়লিটিসম্পন্ন টেকনোলজি উৎপাদন করেছে। বর্তমান চীন হাই-টেক টেকনোলজিতে কম খরচে বহুগুণে গুণগত এবং মানসম্মত টেকনোলজি ডেলিভারি দিতে সক্ষম হচ্ছে। এটাই আমেরিকা, ইউরোপ সহ্য করতে পারছে না।

হাডুডু খেলা উঠে গেছে প্রায় বাংলাদেশ থেকে। কিন্তু কারো উন্নতিতে বাধা দেওয়া বা টেনে ধরা বিশ্ব থেকে উঠেনি, বরং বেড়ে চলছে। ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার, ফেসবুক এসব অ্যাপস থেকে টিকটক কি এমন আলাদা যে একটি রাষ্ট্রের গোপন কথা ফাঁস করে দেবে? বরং আইফোন শুধু গোপনীয়তা নয়, তথ্য থেকে শুরু করে অর্থসহ সব ধরনের খবরাখবর ফাঁস করা এবং গোয়েন্দাগিরি করতে পারে। কই সেটা তো বন্ধ করা হচ্ছে না? কারণ আইফোন তো চীনের তৈরি নয়। এটাই সত্য।

আমি চীনপন্থী নই বা আমেরিকা বিরোধীও নই। শুধু অপ্রিয় সত্য তুলে ধরলাম মাত্র। সুইডেনে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। কথা উঠেছে রাষ্ট্রের কর্মচারী এবং সংসদ সদস্যদের টিকটক ব্যবহার বন্ধ করার জন্য। পরামর্শ দিয়েছে কিছু বিরোধীদল। কারণ ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সংসদ সদস্যদের টিকটক ব্যবহারে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।


বিজ্ঞাপন


সুইডিশদের মধ্যে অনেকেই প্রশ্ন করছে, সুইডিশ ভলভো গাড়ি এখন চীনের নেতৃত্বাধীন। ১৯৯৯ সালে সাড়ে ছয় বিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে সুইডিশ কোম্পানি ভলভোর মালিকানা কিনে নিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের মোটর জায়েন্ট ফোর্ড মোটর কোম্পানি। কিন্তু মন্দায় আক্রান্ত অর্থনীতির মধ্যে মার্কিনিরাও এই হাই-টেক সুইডিশ গাড়ির মালিকানা ধরে রাখতে পারেনি। ২০০৮ সালেই ভলভোকে বিক্রি করে দেওয়ার ঘোষণা দেয় ফোর্ড ৷ গিলির এই ভলভো কিনে নেওয়ার চুক্তি কোনো চীনা কোম্পানির ইউরোপের কোনো হাই-টেক ব্র্যান্ড কিনে নেওয়ার প্রথম এবং সবচেয়ে বড় ঘটনা৷ ভলভো গাড়ির রেডিও সিস্টেম চীনের তৈরি যা সব ধরনের ইনফরমেশন ধারণ করার ক্ষমতা রাখে। তাহলে সুইডিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে সংসদ সদস্যসহ  কূটনৈতিক মহলে ভলভো গাড়ি ব্যবহারও বন্ধ করা উচিত।

অতীতে দেখেছি, জাপান টেকনোলজিতে এশিয়ার মধ্যে ডমিনেট করেছে এবং কোয়ালিটিসম্পন্ন টেকনোলজি কম খরচে বিশ্ব দরবারে ডেলিভারি দিতে সক্ষম হয়েছে। বর্তমানে চীন একইভাবে গ্লোবাল মার্কেট ডমিনেট করছে ,কম খরচে কোয়ালিটিসম্পন্ন টেকনোলজি ডেলিভারি দিচ্ছে, যা ইউরোপ এবং আমেরিকার জন্য থ্রেট হয়ে দাঁড়িয়েছে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে। এটাই মূল কারণ টিকটক বন্ধ করার পেছনে।

লেখক: সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন। 
ইমেইল: [email protected]

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর