সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জাতিসংঘের বিশ্ব মেধাস্বত্ত্ব সংস্থার (ডব্লিউআইপিও) সদর দফতরে নানা আয়োজনে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপিত হয়েছে।
এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জ্ঞানভিত্তিক এবং উদ্ভাবনী জাতি প্রতিষ্ঠায় ‘স্মার্ট বাংলাদেশ-২০৪১ রূপকল্প’ বাঙালি জাতির সোনার বাংলার স্বপ্ন বাস্তবায়নে একটি আশাব্যঞ্জক ধাপ বলে মন্তব্য করেন জেনেভাস্থ জাতিসংঘ দফরে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মো. সুফিউর রহমান।
বিজ্ঞাপন
উপরাষ্ট্রদূত সঞ্চিতা হকের সঞ্চালনায় মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপনের অংশ হিসেবে স্থায়ী মিশনে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশ একটি শান্তিপ্রিয়, প্রগতিশীল ও দায়িত্বশীল রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছে। সেই সঙ্গে ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরিতা নয়’- এই মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর থেকে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় কার্যকর ভূমিকা পালন করে আসছে।
এ দিন নিজ বক্তব্যে রাষ্ট্রদূত স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে বাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস তুলে ধরেন। সেই সঙ্গে তিনি বলেন, সমস্ত বাধা-বিপত্তি কাটিয়ে বাংলাদেশ এখন একটি উদার, গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক শান্তিকামী রাষ্ট্র হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
এ সময় সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সাফল্য, দারিদ্র্য দূরীকরণে সাফল্য, নারীর ক্ষমতায়ন, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা, সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও মানবাধিকার সুরক্ষায় বাংলাদেশের ভূমিকা তুলে ধরেন রাষ্ট্রদূত।
শান্তির সংস্কৃতি বিনির্মাণে সবাইকে একযোগে কাজ করার পাশাপাশি কার্যকর অবদান রাখার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে রাষ্ট্রদূত কোভিড-১৯ পরবর্তী বিশ্ব অর্থনীতিতে ইউক্রেনের যুদ্ধ, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত, খাদ্য ও জ্বালানি সংকট মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সহমর্মিতার ভিত্তিতে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। সেই সঙ্গে নিম্নকার্বন ও সীমিত জ্বালানি নির্ভর উৎপাদন ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
বিজ্ঞাপন
এ দিন বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫২তম বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ২৬ মার্চ ২০২৩ তারিখ সকালে মিশন প্রাঙ্গণে রাষ্ট্রদূত কর্তৃক জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়। পরে এক মিনিট নীরবতা পালনের মাধ্যমে শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে দূতাবাস মিলনায়তনে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
সভায় অংশ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ ও দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি, উপ-স্থায়ী প্রতিনিধি, ইকোনমিক মিনিস্টার এবং কমিউনিটির সদস্যবৃন্দ। এ সময় স্থায়ী প্রতিনিধি স্বাধিকার আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রেক্ষিত বর্ণনা করে স্বাধীনতার চেতনার প্রায়োগিক দিকসমূহের ওপরে আলোকপাত করেন। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের উত্তরোত্তর অগ্রগতির জন্য জাতীয় ঐক্য, সম্প্রীতি এবং সংখ্যালঘুদের স্বার্থ সংরক্ষণের ওপর জোর দিয়ে অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীল দেশ গঠনের আহ্বান জানান।
>> আরও পড়ুন: রোমে বাংলাদেশ দূতাবাসে ‘গণহত্যা দিবস’ পালিত
বিশ্ব মেধাস্বত্ত্ব সংস্থার (ডব্লিউআইপিও) সদর দফতরে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে প্রায় ১০০টি দেশের রাষ্ট্রদূত/স্থায়ী প্রতিনিধি ও কূটনীতিক, জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগণ ছাড়াও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও বাংলাদেশি কমিউনিটির সদস্যগণসহ তিন শতাধিক আমন্ত্রিত অতিথিরা অংশগ্রহণ করেন।
এছাড়া বিশেষ আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে এতে উপস্থিত ছিলেন জেনেভা সেন্টার ফর সিকিউরিটিজ স্টাডিজ এর পরিচালক রাষ্ট্রদূত নাথালি চুয়ার্ড। পাশাপাশি অন্যদের মধ্যে সুইজারল্যান্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি জমাদার নজরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক শ্যামল খান, সহ-সভাপতি মশিউর রহমান, মোর্শেদ গোলাম, বিপুল তালুকদার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুম খান দুলাল, উপদেষ্টা স্বপন কুমার সাহা, আশোক কুমার সরকার রবি, সাংগঠনিক সম্পাদক গৌরিচরন সসীম, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আইয়ান জুনায়েদ, সুইজ বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইমরান খান মুরাদ প্রমুখ এতে উপস্থিত ছিলেন।
এ দিন অনুষ্ঠানে আগত অতিথিদের বাংলাদেশি ঐতিহ্যবাহী খাবার ও মিষ্টান্ন সহযোগে আপ্যায়ন করা হয় এবং শুভেচ্ছা উপহার প্রদান করা হয়।
প্রতিনিধি/এমআর/আইএইচ