শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

গ্রিসে দক্ষ হাতে ব্যবসা সামলান বাংলাদেশি নারীরা

প্রবাস ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৮ আগস্ট ২০২২, ১২:৪৫ পিএম

শেয়ার করুন:

গ্রিসে দক্ষ হাতে ব্যবসা সামলান বাংলাদেশি নারীরা
ছবি: ডয়চে ভেলে

বাঙালি নারীরা বরাবরই কর্মোদ্যোগী। গ্রিসের পাতিশিয়াতেও দেখা গেল সেই ছবি। সংস্কৃতি থেকে ব্যবসা, সবকিছু দক্ষ হাতে সামলাচ্ছেন বাংলাদেশি নারীরা। সম্প্রতি গ্রিস ঘুরে তাদের গল্প তুলে এনেছেন জার্মানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে। 

বাংলাদেশি নারী নীতু গত ১৩ বছর গ্রিসের বাসিন্দা। স্বামীর সঙ্গে দুইটি দোকান চালান তিনি। মেয়ের পড়াশোনা শেখানোর পাশাপাশি সামলান রেস্তোরাঁর ব্যবসাও। এথেন্সের পাতিশিয়া শহরে তাদের দোকান। গ্রিসে থাকতে থাকতে সবকিছুর সঙ্গেই সহজে মানিয়ে নিয়েছেন তিনি। ঘরের পাশাপাশি সমানতালে দোকানের কাজ সামলান নীতু। 


বিজ্ঞাপন


তার কথায়, ‘পাতিশিয়া একটা বাণিজ্যিক এলাকা। আট বছর এখানেই আছি। আমাদের আনাবিয়া সুপারমার্কেটে দেশি জিনিসপত্র পাওয়া যায়৷ কিছু বাংলাদেশ থেকেও আসে। কিছু উৎপাদনও হয়৷ পাটশাকও পাওয়া যায় এই দোকানে।

নিজের উদ্যোগে ব্যবসা শুরু করেছেন নীতু। স্বামীর দোকানের পাশাপাশি সেই ব্যবসাও সামলান তিনি। তার কথায়, ‘বাংলাদেশে রাত ১২টা হলে সঙ্গে কাউকে নিয়ে বেরোতাম কিন্তু এখানে বেশি নিরাপদ। দোকান বন্ধ করে রাত ১২টায় ফিরতেও তাই সমস্যা নেই।’

ধর্মচর্চার বিষয়ে নীতু বলেন, পৃথিবীতে দুই ধরনের মানুষ রয়েছে। সব মানুষ তো এক না। ব্যক্তিগতভাবে ধর্মচর্চায় নিজেকে স্বাধীন বলে মনে করেন এই নারী। 

নূরজাহান বেগম শিউলি নামের অপর এক নারী গ্রিসে রয়েছেন প্রায় ১১ বছর। তিনি নিজেকে একজন সংস্কৃতিকর্মী ও নতুন উদ্যোক্তা বলে পরিচয় দেন। বাংলার সংস্কৃতি চর্চা বজায় রাখতে চেষ্টা করেন দোয়েল অ্যাকাডেমি নামে সংগঠনের এই সম্পাদিকা। তিনি জানান, ‘সংস্কৃতি চর্চা তো বজায় রাখতেই হবে। দেশের মতো করেই পহেলা বৈশাখ, বিজয় দিবস, ২১ ফেব্রুয়ারি সবটাই পালন করি এখানে।’


বিজ্ঞাপন


শিউলি বলেন, ‘আমি এথেন্সের নারীদের জন্য শাড়ি রাখি। কুমিল্লার খাদি শাড়ি, টাঙ্গাইল শাড়ি, ঢাকাই শাড়ি বিক্রি করি৷ কার্গোর মাধ্যমে আনি৷ বাংলাদেশে ভাইদের মাধ্যমে সংগ্রহ করি। দেশের খাঁটি জিনিস পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করি।’

তার কথায়, ‘বাংলাদেশ থেকে ৮০০ টাকা দিয়ে আনা শাড়ি কমপক্ষে ১৬০০ টাকায় বিক্রি হয়৷ প্রতি মাসে প্রায় ৩০ থেকে ৪০টা শাড়ি বিক্রি করি৷ এথেন্সে নারীর সংখ্যা অনেক। আমার কাছে তালিকা অনুযায়ী ১৪৬ জন বাংলাদেশি নারী রয়েছেন। একটা সংগঠনের ইচ্ছা ছিল। সেটা ব্যর্থ হয়।’ নতুন উদ্যোক্তা হিসাবে ব্যবসায় সমৃদ্ধি আনার চেষ্টা করছেন এই নারীও৷ 

মাহমুদা হুসেন নামে অপর এক নারী উদ্যোক্তা জানান, গ্রিস এবং বাংলাদেশের জনশক্তি সমঝোতা চুক্তিতে লাভবান হবে বাংলাদেশিরা৷ হুন্ডিতে টাকা পাঠানোয় বাংলাদেশ সরকারের ক্ষতি হচ্ছে। অনিয়মিত বলে অনেককে ঠকানো হচ্ছে৷ সেটা আর হবে না।

২০০৮ সালের নভেম্বরে গ্রিসে এসেছিলেন মাহমুদা। শুকনো খাবার থেকে শুরু করে একাধিক পণ্যের ব্যবসা করেন তিনি। মাহমুদা বলেন, ‘সবাই উন্নত জীবনযাপন করতে চায়। গ্রিসের সংস্কৃতি আমার ভালো লাগে। অন্য দেশে সেই সৌজন্য পাইনি।’ তাই গ্রিসে থাকতে চান তিনি। বলকান রুট ধরে ফ্রান্স, ইতালি বা জার্মানি যাওয়ার কথা ভাবেন না কখনো।

বাংলাদেশের এক নারী ব্যবসায়ী একটি রেস্তোরাঁ চালান পাতিশিয়ায়৷ রেস্তোরাঁর নাম ‘হাউস অফ ফ্লেভার’। স্থানীয়রা একে ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্টও বলেন। দোকানের মালিক মিলি বলেন, ‘২২ বছর গ্রিসে আছি। নারী হিসেবে গ্রিসে বসবাসের অভিজ্ঞতা খুব ভাল।বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বেশি ভাল আছি। আবহাওয়া, খাওয়াদাওয়া সবটাই ভাল লাগে৷ স্বামী মারা যাওয়ার পর একটা রেস্তোরাঁ বিক্রি করে দিয়েছি। একটা চালাচ্ছি। আর অন্য দোকানও সামলাচ্ছি।’

বিফ, শাক, তরকারি, চিকেন বিরিয়ানি, সব ‘হাউস অফ ফ্লেভার’-এ পাওয়া যায়। ভারতীয় খাবারও নিয়মিতভাবে বিক্রি হয়। অনলাইন ডেলিভারিও চলে। তবে বাংলাদেশের মানুষদের জন্য বিশেষ সুবিধা দেন তিনি দোকানে। বাংলাদেশিদের জন্য ভাত, রুটি সহ চার ইউরো বা ৪০০ টাকায় গরুর মাংস পাওয়া যায়। আর গ্রিকদের জন্য যার দাম ১১ ইউরো বা ১১০০ টাকা।

মিলি বলেন, ‘এখানে গ্রিকদের সঙ্গে আমার ব্যবসা রয়েছে। আমি গয়না বিক্রি করি। গ্রিসের মূল পার্লামেন্টের সামনে দোকান আছে। অ্যাকসেসরিজ, মোবাইল কভার ব্যাগ ইত্যাদিও রাখি গয়নার পাশাপাশি। করোনা একটু থিতু হওয়ার পর ফেব্রুয়ারি থেকে পর্যটক বেড়েছে। বিক্রিও ভাল হয়েছে।’

তার কথায়, ‘গ্রিসের মূল সমাজ আগে অভিবাসীদের ভালভাবেই দেখত। এখন অতিরিক্ত শরণার্থী বেড়ে যাওয়ায় প্রভাব পড়ছে।অভিবাসন সমস্যায় আচমকা সবকিছুর দাম বেড়ে গিয়েছে। গ্রিকরা ভারতীয়, বাংলাদেশিদের খুব ভালবাসে। অর্থনীতির কারণে আসলে তারা বিরক্ত৷ আমাদের পারস্পরিক সম্পর্ক ভালই।’

১৭ বছর ধরে গ্রিসে রয়েছেন স্বর্ণা আখতার। এই নারী মিনি মার্কেটের ব্যবসা করেন। বাঙালি শাক সবজি থেকে গ্রিসদের প্রিয় খাবার, ফল সবকিছুই পাওয়া যায় তার দোকানে। মিলি, শিউলি, স্বর্ণা কিংবা নীতু, প্রত্যেকেই স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। অভিবাসী বাঙালি নারীরা এইভাবে কোথাও যেন নারীর ক্ষমতায়নের দিকটাও ইউরোপের কাছে তুলে ধরছেন।

একে

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর