পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার শাসনব্যবস্থা ছিল ইতালির একনায়ক মুসোলিনির কার্বন কপি উল্লেখ করে মেক্সিকোতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী বলেছেন, যেমন মুসোলিনির চারপাশে স্তাবক শ্রেণি গড়ে উঠেছিল, তেমনি শেখ হাসিনাকেও ঘিরে তৈরি হয়েছিল এক চাটুকার পরিবেশ, যেখানে কোনো ভিন্নমত সহ্য করা হতো না।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) ঐতিহাসিক জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে মেক্সিকো সিটিতে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
মুশফিকুল ফজল আনসারী বলেছেন, গণতন্ত্রবিরোধী চক্রান্ত এখনো চলমান রয়েছে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি বলেন, পলাতক ষড়যন্ত্রকারীরা এখনো ঘাপটি মেরে আছে৷
মেক্সিকোতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।
তিনি বলেন, মুসোলিনির ব্ল্যাক শার্ট বাহিনীর অনুকরণে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগকে হেলমেটধারী বাহিনীতে রূপান্তর করে বিরোধীমত দমন করা হয়েছিল। শিক্ষার্থী, সাংবাদিক, রাজনীতিক, এমনকি সাধারণ মানুষ, কেউই নিরাপদ ছিল না। দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করে মতপ্রকাশের অধিকার হরণ করা হয়েছিল।
রাষ্ট্রদূত বলেন, অনেকে মনে করেছিল বাংলাদেশ আর কখনো মুক্ত হবে না। কিন্তু সেই ধারণা ভুল প্রমাণ করেছে ছাত্রসমাজ, যুবক, শ্রমজীবী মানুষ এবং দেশের প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলসমূহ। তাদের সম্মিলিত প্রতিরোধে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হয়েছে। এই বিজয় কোনো একক ব্যক্তি বা দলের নয়—এটি সার্বজনীন, যেখানে মা, বাবা, শ্রমিক, ছাত্র, শিক্ষক সবাই যুক্ত ছিলেন।
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও বলেন, এই আন্দোলনে প্রায় দুই হাজার মানুষ শহীদ হয়েছেন। তাদের আত্মত্যাগ যেন বৃথা না যায়। যারা দমন-পীড়নের নেতৃত্ব দিয়েছে, তাদের বিচারের মুখোমুখি করতেই হবে।
রাষ্ট্রদূত মুশফিক বলেন, নতুন সরকার একটি ভগ্ন রাষ্ট্র কাঠামো পেয়েছে, যেখানে প্রশাসন দলীয়করণে বিপর্যস্ত, বৈদেশিক মুদ্রার ভাণ্ডার শূন্য এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো জনগণের আস্থাহীনতায় নিমজ্জিত। এখন সময় এসেছে আমূল সংস্কারের, বিশেষ করে সেই আমলাতন্ত্রে, যারা গত ১৫ বছর ধরে একনায়কতন্ত্রের প্রশস্তি লিখেছে।
তিনি সবাইকে সতর্ক করে বলেন, যারা গণতন্ত্রবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল, তারা এখনো সক্রিয়। আমাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করলেই তাদের পথ সহজ হবে। তাই মতের ভিন্নতা থাকলেও সেটিকে বিদ্বেষে পরিণত না করে জাতীয় ঐক্য বজায় রাখা জরুরি।
রাষ্ট্রদূত মানবপাচার রোধে বাংলাদেশের সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির কথা পুনর্ব্যক্ত করেন এবং নিরাপদ, নিয়মিত ও বৈধ অভিবাসনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। মানবপাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন তিনি।
এমআর/এএস

