ডাক্তার বন্ধু গেল সেদিন চলে,
আমার বাবা-মা বিদায় নিয়েছেন,
অনেকের বাবা-মা দিন গুনছেন নিঃশব্দে।
অনেকে একাকিত্বে ভুগছেন,
ক্ষুধার কষ্টে নয় শুধু,
জীবনের দুঃখ, সঙ্গীর বিরহ,
মনে নিয়ে এক ব্যথার ঢেউ।
পরিবারের ঝামেলা হয়ে যারা বেঁচে আছেন,
মনে মনে হয়তো গুনছেন, কবে বাজবে ছুটির ঘণ্টা তাদের।
কারণ মরতে তো একদিন হবেই,
জীবনটা তো মরার জন্যই সৃষ্টি।
বিজ্ঞাপন
ছোটবেলার সেই পরিবার,
যাদের দেখেছি পঞ্চাশ বছর আগে,
দেশ ছেড়ে বিদেশে থাকার কারণে,
তাদের সাথে আর দেখা হয়নি।
সেদিন এক বন্ধুকে জিজ্ঞেস করলাম তাদের খোঁজ,
তখন যে গল্প শুনলাম,
মনে হলো যেন এই গল্পের প্রতিধ্বনি।
বুড়ি গেল সেদিন চলে,
বুড়োটা দেখল নিস্তব্ধ চোখে,
কিছু জল ঝরল তার কোণ থেকে,
লোক দেখানো শোক,
কিছুদিন চলল নাটকের মতো,
বুড়ির গয়নার ভাগ নিয়ে শুরু হলো তর্ক,
কে কোনটা নেবে এই নিয়ে দন্দ,
মেয়েদের মাঝে চলছে বিতর্ক।
বুড়ো একা বসে দেখছে তাদের কাণ্ডকারখানা,
মনের মাঝে স্মৃতি বিক্রি হচ্ছে, মস্তিষ্কের কোন এক ফাঁকে।
হাতের লাঠিতে ভর করে এদিক সেদিক হাঁটে বুড়ো,
নাতনী বলল সেদিন,
‘দাদু, লাঠিটা আমাকে দিও,
তুমি চলে গেলে আমি ওটা নিয়ে খেলব।’
বউমার ধমক,
‘এমন কথা বলিস না, ছি! বলেছি তোকে আগে!’
বুড়ো হাসে, বউমার শাসনে তার মনে প্রফুল্লতা জাগে।
নাতি বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়,
দাদুর ঘরে উইকেট পড়ার আশায়,
বুড়ো শুধু আকাশ দেখে,
ফেলে দীর্ঘশ্বাস ভারাক্রান্তে।
বিজ্ঞাপন
দুই ছেলের মাঝে ঝগড়া,
কে নেবে বুড়োর দায় ক'দিন,
বুড়ো আজ কারো বাবা নয়,
শ্বশুর নয়, দাদুও নয়,
শুধু একা এক বোঝা।
আজ বুড়োর জন্মদিন,
কিন্তু কেউ বলে না কিছু,
গত বছর বুড়ি ছিল, পায়েস রেঁধে খাইয়েছিল।
আজ সারাটা দিন নীরব,
জন্মের কথা কেউ মনে করে না,
মৃত্যুর পরেও তো খাওয়াবে সবাই,
তখনও ঝগড়া করবে দুই ভাই।
বুড়ো ভাবে, কিসের এ জীবন,
কাদের জন্য এত কিছু!
চশমা মুছে ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে সব,
মনে প্রশ্ন জাগে, কি পেলাম জীবনে?
আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে,
‘পৃথিবীর সমস্ত বাবা-মা যেন বাবা-মা হয়েই বাঁচে,
বোঝা হয়ে নয়!’
বৃদ্ধ বয়সে যেন কেউ বোঝা না হয়,
সন্তানরা যেন যত্ন নেয়, সম্মান দেয়।
সমাজের সচেতনতা,
বাবা-মায়ের যত্নের প্রয়োজনীয়তা।
পরিবারে শিক্ষা,
ছোটবেলা থেকে যত্নশীল হতে শেখানো,
সামাজিক সংস্থা, বেসরকারি সহায়তা,
বৃদ্ধদের পাশে থাকা।
মানবতার মাঝে যেন ফুলগুলো না ঝরে,
সবার মাঝে সম্মান, স্নেহের আঁচলে ধরে।
আমাদের বিদায়ের সময় যেন,
বুড়ো-বুড়ি না হয়ে মরি
বেঁচে থাকতে তাই সবাই মিলে,
আসুন নতুন কিছু করি।
রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন। [email protected]