শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

একজন মানুষ গড়ার কারিগরের নতুন যাত্রা

রহমান মৃধা
প্রকাশিত: ২২ জুন ২০২৪, ০৮:০৬ পিএম

শেয়ার করুন:

একজন মানুষ গড়ার কারিগরের নতুন যাত্রা

অধ্যাপক ড. মান্নান মৃধা, একজন নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক ও বিজ্ঞানী, আজ তার শিক্ষাজীবনের পরিসমাপ্তি ঘোষণা করেছেন। তার অবসর গ্রহণ শুধু তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের নয়, গোটা শিক্ষাক্ষেত্রের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। ড. মৃধা একজন সত্যিকারের মানুষ গড়ার কারিগর, যিনি তার জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত শিক্ষাদান, গবেষণা এবং সমাজের উন্নয়নে ব্যয় করেছেন।

শিক্ষাজীবন: ১৯৬৩ সালে, স্কুল জীবনে ড. মৃধা প্রথমবারের মতো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গোপালগঞ্জে দেখেন এবং তার নেতৃত্বে অনুপ্রাণিত হন। ১৯৭৩ সালে ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজের ক্যাডেট হিসেবে বঙ্গবন্ধুর সাথে সাক্ষাৎ করেন। ১৯৭৪ সালে, উচ্চ শিক্ষার জন্য বাংলাদেশ ত্যাগ করেন এবং পোল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, সুইডেন, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, ভারত, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও আফ্রিকায় শিক্ষা ও গবেষণার কার্যক্রম চালিয়ে যান।


বিজ্ঞাপন


শিক্ষাদানে অবদান: ড. মৃধা বুয়েটে বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোগ্রাম শুরু করার পাশাপাশি টেলিমেডিসিন, ই-হেলথ ও ই-এডুকেশন-এর উন্নয়নে কাজ করেছেন। তার নেতৃত্বে এবং সুইডেনের সহযোগিতায়, KTH-এর R&D কার্যক্রম বাংলাদেশের গ্রামীণ উন্নয়নে আইসিটি প্রচারে অবদান রেখেছে।

আন্তর্জাতিক অবদান: ড. মৃধার অবদান শুধু বাংলাদেশ বা সুইডেনেই সীমাবদ্ধ নয়। তিনি জাপান, যুক্তরাজ্য, ইতালিসহ বিভিন্ন স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করেছেন। তার অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান আন্তর্জাতিক স্তরে উচ্চ প্রশংসিত হয়েছে এবং বিভিন্ন দেশে স্বাস্থ্য ও শিক্ষাক্ষেত্রে উন্নয়নে সহায়ক হয়েছে।

শিক্ষার আলো: অবসরের পরও ড. মৃধা শিশুদের শিক্ষার প্রতি তার ভালোবাসা বজায় রেখেছেন। বর্তমানে বাংলাদেশে তিনি কিন্ডারগার্টেন থেকে শিক্ষার আলো জ্বালিয়ে চলেছেন, যার মাধ্যমে শিশুদের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছেন।

নতুন জীবনের শুরু: অবসর গ্রহণের এই মুহূর্তে ড. মৃধা প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষার্থীদের গণিত ও পদার্থবিজ্ঞান শেখানোর পাশাপাশি নতুন শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, শিক্ষার মজাটি ধরিয়ে দিতে হবে তরুণ প্রজন্মের মাঝে যাতে তারা ঝরে না যায়। তার বিশ্বাস, তরুণ প্রজন্মকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারলে একটি আদর্শ সমাজ গঠন করা সম্ভব।


বিজ্ঞাপন


উদারতা ও মহানুভবতার পরিসমাপ্তি: ড. মৃধা তার অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান ব্যবহার করে একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম শুরু করার পরিকল্পনা করছেন, যেখানে তরুণ শিক্ষকদের জন্য প্রশিক্ষণ ও নির্দেশনা প্রদান করবেন। এছাড়া তিনি গবেষণা ও উদ্ভাবনের জন্য একটি কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নিতে পারেন, যা গোটা বিশ্বের শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নে সহায়ক হবে।

উপসংহার: শিক্ষক হলেই প্রকৃত সফল শিক্ষক হওয়া যায় না, মানুষ গড়ার কারিগর হতে হলে দরকার মিশন, ভিশন ও পলিসি। ড. মৃধার মতো শিক্ষক যদি আমাদের সমাজে আরও বেশি সংখ্যায় তৈরি হন, তবে সুইডেনের মতো বাংলাদেশও একদিন সত্যিই সোনার বাংলা হয়ে উঠবে।

‘হে শিক্ষাগুরু তুমি আমার প্রিয় বড় ভাই,
এটাই তোমার একমাত্র পরিচয় নয়।

জগৎ জুড়ে ছিলে তুমি সবার শিক্ষা গুরুজন,
দেশ বিদেশে পড়িয়েছো,
জ্ঞানের আলো জ্বালিয়েছো।

তোমার কর্মজীবন শেষ হলো আজ,
সুইডেনের মিডসামারে,
এমন একটি দিনে তুমি অবসরে গেলে,
সূর্য সেদিন সাক্ষী হয়ে কিরণ দিল সারাদিন,
বিশ্ববাসী জানল তখন ডুবে না সূর্য কোনোদিন।

মনটা তোমার খারাপ দেখে মনে পড়ল আমার তখন,
তুমি তো ভাই শিক্ষাগুরু, শিক্ষক তুমি সারাদিন।

তোমার শিক্ষা, তোমার দীক্ষা, রাখব ধরে আজীবন,
তোমার মতো শিক্ষাগুরু আসুক বিশ্বে চিরকাল।’

রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন, [email protected]

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর