শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ঢাকা

‘মা আজরাইল আসে’, ছেলের সঙ্গে শেষ কথা মায়ের

জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৬ মে ২০২২, ০৯:০০ পিএম

শেয়ার করুন:

‘মা আজরাইল আসে’, ছেলের সঙ্গে শেষ কথা মায়ের
সৌদি আরবে নিহত আবদুর রহমানের মা-বাবা | ছবি: ঢাকা মেইল

সোদি আরবে কর্মস্থল থেকে বাংলাদেশি যুবক আবদুর রহমানের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে দেশটির পুলিশ। নিহতের পরিবার দাবি করেছেন- প্রবাসী আবদুর রহমানকে হত্যা করা হয়েছে।

শুক্রবার (৬ মে) দুপুরে আবদুর রহমানের বাবা মো. হানিফ ও ভাই আবুল কাশেম স্থানীয় গণমাধ্যমকে বলেন, এটি স্বাভাবিক মৃত্যু নয়। আবদুর রহমানকে হত্যা করা হয়েছে।


বিজ্ঞাপন


এদিকে, পরিবারের একমাত্র উপার্জনশীল ছেলেকে হারিয়ে চোখেমুখে অন্ধকার দেখেছে বাবা-মা। ছেলের মরদেহ দেশে আনতে আহাজারি করছে অসহায় পরিবারটি।

নিহত আবদুর রহমান লক্ষ্মীপুরের কমলগর উপজেলার চরলরেন্স ইউনিয়নের উত্তর চরলরেন্স গ্রামের বাসিন্দা। গত ১ মে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদের নিকটতম আল হারমোলিয়াহ এলাকার একটি ছাগলের খামার (কর্মস্থল) থেকে আবদুর রহমানের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে স্থানীয় পুলিশ।

সৌদিতে কর্মরত আবদুর রহমানের দুলাভাই মো. ইউছুফের বরাত দিয়ে নিহতের পরিবারের জানায়, আবদুর রহমানের সঙ্গে সুদানি এক সহকর্মীর ঝগড়া হয়েছিল। ঝগড়ার একদিন পর তার (আবদুর রহমান) রক্তাক্ত মরদেহ পাওয়া যায়। স্থানীয়রা ইউছুফকে জানিয়েছে, আবদুর রহমানকে খুন করা হয়েছে। কিন্তু মরদেহ রাস্তার পাশে ফেলে রেখে গাড়িচাপায় মৃত্যু হয়েছে বলে প্রচার করে সেখানকার মালিকপক্ষ।

তবে এ ঘটনায় পুলিশ সৌদি এক নাগরিক ছাড়াও একজন সুদানি নাগরিককে আটক করলেও প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর তাদের ছেড়ে দিয়েছে বলে জানিয়েছে নিহতের পরিবার।


বিজ্ঞাপন


লাকী বেগম জানান, বাড়ি থেকে চেষ্টা চালিয়েও তার সঙ্গে টানা দুই দিন যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। পরে মেয়ের জামাই ইউছুফকে আবদুর রহমানে কর্মস্থলে পাঠানো হয়। সেখানে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে হাসপাতালের মর্গে গিয়ে তার মরদেহ দেখতে পায় ইউছুফ।

নিহতের পারিবারিক সূত্র জানায়, ২০১৯ সালে স্থানীয় এক আত্মীয়ের মাধ্যমে ভালো চাকরির আশায় আবদুর রহমান সৌদিতে পাড়ি দেন। কিন্তু সেখানে গিয়ে জানতে পারেন মরুভূমিতে উট চড়ানো হচ্ছে তার চাকরি। এ কাজ তার পক্ষে সম্ভব ছিল না। তবুও বহু কষ্টে তিনি দুই বছর কাটিয়েছেন। করোনার সময়ও তার কোনো ছুটি ছিল না। এর মধ্যে কারণে-অকারণে মালিকপক্ষ তাকে মারধর করতো। পরে অতি নির্যাতনে সেখান থেকে তিনি পালিয়ে অন্যত্র চলে যান। পরে যুক্ত হন নতুন আরেকটি কাজে।

laxmipur News
নিহত আবদুর রহমান | ছবি: ঢাকা মেইল 

আবদুর রহমানের নতুন কর্মস্থলের কাজটি ছিল মরুভূমিতে। সেখানে ছাগলের খামারের শ্রমিক হিসেবে তিনি কাজ শুরু করেন। তবে সেখানে সুদানি সহকর্মীদের সঙ্গে তার প্রায়ই ঝগড়া হতো।

এদিকে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, আবদুর রহমানের মরদেহের মাথার পেছনে জখম রয়েছে। তবে শরীরের বাকি অংশ অক্ষত দেখা গেছে।

এ বিষয়ে কমলনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সোলাইমান ঢাকা মেইলকে বলেন, নিহতের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে বিস্তারিত ঘটনা জেনেছি। তাদেরকে প্রয়োজনীয় আইনি সহায়তা দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্ট দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য বলা হয়েছে। প্রয়োজনের আমরাও যোগাযোগ করবো।

বিষয়টিতে কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, ঘটনাটি শুনেছি। মরদেহ দেশে আনতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হব। তবে পরিবার থেকে এখনও কেউ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।

ইউএনও বলেন, যেহেতু পরিবারের দাবি আবদুর রহমানকে হত্যা করা হয়েছে। সে বিষয়ে তারা সৌদিতে বাংলাদেশি দূতাবাসে অভিযোগ করতে পারে। আর না হয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করার পরামর্শ দিয়েছেন উপজেলা প্রশাসনের এই কর্মকর্তা।

/আএইএচ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর