দেশে নির্বাচনি পরিবেশ বিরাজমান রয়েছে বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ।
যুবলীগের শীর্ষ এই নেতা বলেছেন, এই দেশে যে নির্বাচনি পরিবেশ বিরাজমান তার আরেকটা প্রমাণ যে, বিএনপি কোনোরকম বাধা-বিপত্তি ছাড়াই সভা সমাবেশ করে চলেছে। তাদের রাজনৈতিক অধিকার তাঁরা চর্চা করছে। আমাদের কিন্তু সমাবেশ করতে দেওয়া হতো না। এমনকি আমাদের সমাবেশে পুলিশের লাঠিচার্জ করা ছিল নিত্ত-নৈমিত্তিক ব্যাপার।
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার (৩০ মে) বরিশালের শিল্পকলা একাডেমিতে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের বরিশাল বিভাগীয় প্রতিনিধিবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময়কালে সভাপতির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
যুবলীগের শীর্ষ এই নেতা বলেন, যারা ২১ আগস্ট সন্ত্রাসবিরোধী শান্তি সমাবেশে বোমা মেরে ২৫ জন বিরোধী মতাদর্শের নেতাকর্মীদের হত্যা করে, তারা আবার সমাবেশ করার অধিকারের কথা বলে কোন মুখে, বুঝি না। কাজেই এই বরিশাল নির্বাচনের গুরুত্ব অপরিসীম। এই নির্বাচন শুধু একটা গতি, একটা সময় নির্ধারণ করবে না, একটা স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বরিশালের এই নির্বাচনের গুরুত্ব অপরিসীম। এই নির্বাচনটা এমন একটা সময় হচ্ছে, মাত্র ৬ মাস পর জাতীয় নির্বাচন। বরিশালের এই নির্বাচনে নৌকার জয় জাতীয় নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করে। তাই আমরা বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি।
শেখ ফজলে শামস পরশ বলেন, নির্বাচনি প্রচারণা কমিটিতে যাদের রাখা হয়নি তাদের উদ্দেশে বিনয়ের সঙ্গে বলবো, মান-অভিমান ভুলে গিয়ে আপনারা দয়া করে নৌকার পক্ষে কাজ করবেন। আমাদের ব্যক্তিগত মান-অভিমান, অনুভূতি অথবা কষ্টের জন্য নৌকা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। নৌকা ক্ষতিগ্রস্ত হলে আওয়ামী লীগ ক্ষতিগ্রস্ত হবে, আওয়ামী লীগ ক্ষতিগ্রস্ত হলে জননেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সর্বোপরি বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই আপনাদের কাছে আমি বিনীত এবং হাত জোর করে অনুরোধ করছি, আপনারা সবাই নিঃস্বার্থভাবে এবং নিঃশর্তভাবে নৌকার পক্ষে কাজ করেন।
বিজ্ঞাপন
যুবলীগ চেয়ারম্যান বলেন, রাজনীতিতে আনুগত্য ও শৃঙ্খলা একটা বড় ব্যাপার। আমাদের আনুগত্য নৌকার প্রতি। নৌকা কীসের প্রতীক? নৌকা বঙ্গবন্ধুর প্রতীক, নৌকা মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রতীক। নৌকা বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রতীক।
নৌকা অনুভূতির প্রতীক উল্লেখ করে তিনি বলেন, কারণ, নৌকা আমাদের ভালোবাসার নাম। নৌকার সম্মান রাখার জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। এই নির্বাচনে আমাদের নৌকার মান সমুন্নত রাখার শপথ নিতে হবে। ব্যক্তি স্বার্থ বা আত্মকেন্দ্রিক স্বার্থ ভুলে এখন আমাদের নৌকাকে তুলে ধরতে হবে। আপনাদের ঐক্যবদ্ধ চেষ্টা এই নির্বাচনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। আপনাদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা নৌকার সম্মান রাখতে পারে। আমি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলতে পারি যে, অন্ততপক্ষে এই নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে সকল নির্বাচনই অবাধ এবং সুষ্ঠু হয়ে চলেছে।
শেখ পরশ বলেন, আগামীর নির্বাচন আরও সুষ্ঠু এবং কঠিন নির্বাচন হবে। নির্বাচন সুষ্ঠু এবং অবাধ আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে হয়। বিশেষ করে সাম্প্রতিক নির্বাচনসমূহ তার জলজ্যান্ত প্রমাণ। সুতরাং আওয়ামী লীগ সুষ্ঠু নির্বাচনের বাধা না, যারা নির্বাচন প্রত্যাহার করে, নির্বাচনের দিন হরতাল-অবরোধ ডাকে, নির্বাচনের দিন জনগণকে ভয়-ভীতি দেখায়, যারা অগ্নিসন্ত্রাস করে নির্বাচন বানচাল করতে চায়, তারা সুষ্ঠু নির্বাচনের অন্তরায়। বিএনপি-জামায়াত গণতন্ত্রের শত্রু, সুষ্ঠু নির্বাচনের বাধা।
এ দিন মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। এ সময় তিনি বলেন, আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত একজন সজ্জন মানুষ। এ দেশের ছাত্রসমাজ, যুবসমাজ, বৃদ্ধ-বনিতা সকলের কাছে জনপ্রিয় একজন মানুষ। তার জনপ্রিয়তার ধারে কাছে এই বরিশাল নগরীতে কেউ নেই।
আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমরা ঘরে-বাইরে এক ও অভিন্ন। আমাদের সকল নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে ভোট চাইছেন। আমরা গাজীপুরের নির্বাচন থেকে শিক্ষা নিয়েছি। আমরা জনগণের ভোটে হারি নাই। আমরা ষড়যন্ত্রের কাছে হেরেছি। গাজীপুর সিটি নির্বাচন থেকে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে নতুন করে কৌশল করে সামনের নির্বাচনগুলোতে কাজ করব।
বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, গাজীপুরের নির্বাচনে আমাদের কোনো ক্ষতি হয় নাই। আমাদের ক্ষতি হয়েছে আমরা একজন মেয়রকে হারিয়েছি। কাজেই আমরা গাজীপুর থেকে শিক্ষা নিয়েছি। গাজীপুরের পুনরাবৃত্তি আর অন্যান্য সিটি করপোরেশন নির্বাচন ও জাতীয় নির্বাচনে হবে না বলে বিশ্বাস করি। আমরা আওয়ামী লীগ, যুবলীগসহ সকল সহযোগী সংগঠন নিয়ে বরিশালে কাজ করছি। আমাদের উদ্দেশ্য হলো- বরিশালের মানুষের কল্যাণ করা, বরিশাল সিটির উন্নয়ন করা, জাতির পিতার বাংলাদেশে, শেখ হাসিনার বাংলাদেশে কোনো দুর্বৃত্তদের জায়গা নাই। শেখ হাসিনার উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা- এটাই হোক আমাদের শপথ।
সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দক্ষিণবঙ্গের মানুষের জন্য যা কিছু করেছেন, তা অন্যান্য অঞ্চলের মানুষের কাছে বিস্ময়কর। স্বপ্নের পদ্মা সেতুসহ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, পায়রা বন্দর, পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, অসংখ্য রাস্তা-ঘাট তৈরি করে দিয়েছেন। এতসব উন্নয়ন দেখে কৃতজ্ঞতাস্বরূপ এ অঞ্চলের মানুষের নৌকায় ভোট দেওয়া উচিত। শুধু তাই নয়, সারা বাংলাদেশে যে অভূতপূর্ব উন্নয়ন করেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা, আমরা বিশ্বাস করি আগামী ১২ জুন বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনসহ সকল নির্বাচনে নৌকার জয় হবে।
এছাড়া সভার সঞ্চালকের বক্তব্যে যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, আমরা যুবলীগের নেতাকর্মীরা অনেক স্থানীয় নির্বাচনকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখি না। ফলে নির্বাচনে অনেক ক্ষেত্রে খারাপ বয়ে আনে। আমাদের দায়িত্বহীনতা আর গুরুত্বহীনতার কারণে অযোগ্য প্রার্থী, বিএনপি-জামাতের লোক জয় লাভ করে। তাই আমাদের শপথ নিতে হবে- আগামী ১২ জুন বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নৌকা মার্কা প্রতীকে ভোট দিয়ে আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতকে জয়লাভ করিয়ে রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে হবে।
>> আরও পড়ুন: ‘বাইডেন প্রশাসনে তদবিরকারক নিয়োগ দিয়েছে বিএনপি-জামায়াত’
যুবলীগের শীর্ষ এই নেতা বলেন, একটি উন্নত-সমৃদ্ধ, উন্নত বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্মাণে নৌকার কোনো বিকল্প নাই। আমি বিশ্বাস করি আগামী ১২ জুনের নির্বাচনে নৌকাকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন।
সভায় অন্যদের মধ্যে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ (খোকন সেরনিয়াবাত) বলেন, পরশের নেতৃত্বে যুবলীগ সুসংগঠিত হবে এবং শক্তিশালী হবে। যে কর্মযজ্ঞ দেশরত্ন শেখ হাসিনা বাংলাদেশে শুরু করেছেন, সেই উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ থেকে বরিশাল বঞ্চিত। এই বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি আধুনিক, উন্নত-সমৃদ্ধ, স্মার্ট বরিশাল সিটি গঠনের লক্ষ্যে আমাকে নৌকা প্রতীক দিয়ে পাঠিয়েছেন। যুবলীগ এমন একটি সংগঠন যেটা আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করতে পারবে।
আওয়ামী লীগ মনোনীত এই মেয়র প্রার্থী বলেন, আমাদের অভিভাবক জননেত্রী শেখ হাসিনা। তার নির্দেশ যদি আমরা উপেক্ষা করি, তাহলে সেটা হবে আত্মঘাতী। আওয়ামী লীগ একটি গণমানুষের দল। আমি যদি মেয়র হতে পারি তাহলে বরিশাল সিটি করপোরেশনকে উন্মুক্ত করব। আমি এই পরিণত বয়সে বিত্ত-বৈভব কামাতে আসিনি। জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে যে অঙ্গিকার করেছি, তা পালন করতে এসেছি। আমি মানুষের বন্ধু হতে চাই, মানুষের সেবা করতে চাই, মানুষের ভালোবাসা পেতে চাই।
সভায় অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মো. গোলাম কবির রাব্বানী চিনু, নির্মল কুমার চ্যাটার্জী, বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট এ কে এম জাহাঙ্গীর, বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনূস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
কারই/আইএইচ